চাঁদ মামার গল্প

‘ আয় আয় চাঁদ মামা 

টিপ দিয়ে যা

চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা ’

হয়তোবা এই কবিতার কথা সবার মনে আছে। ছোটবেলায় মা মাথায় হাত বুলিয়ে যখন এই কবিতাটি বলে ঘুম পাড়াতেন তখন মনে হতো সত্যি সত্যি চাঁদ এসে কপালে টিপ দিয়ে যাচ্ছে। চলো আজ এই চাঁদ মামা সমন্ধে গল্প করি।

প্রথমেই প্রশ্ন হচ্ছে চাঁদ কি কোন গ্রহ ? শনি, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র যেমন গ্রহ চাঁদ সেরকম কোন গ্রহ নয়। সূর্যের আলোয় চাঁদ আলোকিত হয়। তার নিজস্ব কোন আলো নেই। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ।

উপগ্রহ কাকে বলে তা কি বলতে পারবে ? আকাশে যেসব বস্তু গ্রহের চারপাশে ঘুরে বেড়ায় তারা হলো উপগ্রহ। গ্রহের সঙ্গে উপগ্রহ কথাটার মিল আছে। গ্রহের আগে উপ উপসর্গ যোগ করে উপগ্রহ কথাটা এসেছে। পৃথিবী একটা গ্রহ। এ পৃথিবীকে ঘিরে যদি কেউ ঘোরে তাহলে সে পৃথিবীর উপগ্রহ। চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে বেড়ায়। সেজন্য চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। সব গ্রহের উপগ্রহ থাকবে, এমন কোন কথা নেই। যেমন  বুধ আর শুক্র গ্রহের কোন উপগ্রহ নেই।

আচ্ছা চাঁদের আকারটা দেখতে কেমন ? আকাশে যখন গোলাকার পূর্ণিমার চাঁদ দেখা যায়, তখন চাঁদটাকে খুব বড় মনে হয়। অনেকটা সূর্যের মতো। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ কিন্তু সূর্যের মতো বড় নয়। চাঁদ সূর্যের চেয়ে অনেক ছোট। চাঁদের ব্যাস ৩৪৭৬ কিলোমিটার আর সূর্যের ব্যাস প্রায় ১৪ লাখ কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব মাত্র ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। আর পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। কিন্তু আকাশে চাঁদকে ছোট মনে হয় না, কারণ চাঁদ সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি।

চাঁদের কলঙ্ক আছে নাকি নাই ? রাতের আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে এককালে মানুষ মনে করতো চাঁদের গায়ে যেসব রেখা দেখা যায় তা হচ্ছে চাঁদের কলঙ্ক। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা চাঁদের কলঙ্ককে স্পষ্ট দেখতে পেলেন নভো-দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে । তারা বললেন, চাঁদের পিঠ অত্যন্ত এবড়ো-খেবড়ো, অসমান। তাই, সেখানে কালো কালো দাগ নজরে আসে। এই দাগগুলোই আমাদের কাছে চাঁদের কলঙ্ক।

একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করেছো যে, আমরা চাঁদের উপরিভাগই দেখি কিন্তু অপর পিঠ বা ভাগ দেখি না। এর কারণ বলতে পারবে ? পৃথিবী থেকে কেউ কখনো চাঁদের দুটো পিঠ দেখতে পায় না। চাঁদ তার নিজের অক্ষের উপরে ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর চারদিক দিয়েও ঘুরে যায়। পৃথিবী যেমন নিজের অক্ষের ওপর ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের চারদিক দিয়ে ঘোরে ঠিক তেমন। কিন্তু চাঁদের বেলায় এই দুটো অক্ষ পরিভ্রমণের সময় এক। নিজের অক্ষের উপরে একবার ঘুরতে তার সময় লাগে ২৭ দিন ৮ ঘণ্টার মতো। পৃথিবীর চারদিক দিয়ে পরিভ্রমণের সময়ও তার একই। এটা একটা আশ্চর্য মিল। এ কারণে চাঁদের সবসময় নিজের অক্ষের উপরে পরিভ্রমণ করা আর পৃথিবীর চারদিক দিয়ে পরিভ্রমণ করা এমনভাবে হয় যে, চাঁদের একটা পিঠই সবসময় আমাদের চোখে পড়ে। তবে মানুষ যখন চাঁদে যাওয়া শুরু করেছে তখন তারা চাঁদের উল্টো পিঠের ছবি তুলে এনেছে। ছবিতে চাঁদের উল্টো পিঠটাও একই রকম। তাই, চাঁদের একটা ভাগ দেখায় যথেষ্ট কেননা অপর ভাগও যে দেখতে এক।

মাঝে মাঝে রাতে চাঁদ দেখতে না পেয়ে মনটা খারাপই লাগে,তাই না ? চাঁদের কোন নিজস্ব আলো নেই।  সূর্যের আলো ধার করে চাঁদ আলো দেয় । ফলে চাঁদের যে পিঠটা সূর্যের দিকে থাকে, সে পিঠ আলো পায়, অন্য পিঠ একেবারে অন্ধকার। যেদিন চাঁদ আর পৃথিবীর পরিভ্রমণের পথে চাঁদ সূর্য আর পৃথিবীর মাঝখানে আসে সেদিন চাঁদের একটা দিক সূর্যের আলোর মুখে থাকে, আর উল্টো দিকটা অর্থাৎ অন্ধকার দিকটা থাকে পৃথিবীর দিকে। তাই, সে সময় চাঁদ আমাদের একেবারেই নজরে আসে না। এই দিনটাকে বলা হয় অমাবস্যা। চাঁদের আলো থাকে না বলে অমাবস্যায় চারদিক একেবারে অন্ধকার।

আমরা সবসময় গোলাকার চাঁদ দেখতে পাই না। এর কারণ কি ? অমাবস্যার সময় পৃথিবী আর সূর্যের মাঝখানে থাকে চাঁদ। সূর্যের আলোর মুখে চাঁদের অন্ধকার অংশটা থাকে পৃথিবীর দিকে মুখ করে। সেজন্য পৃথিবী থেকে চাঁদকে দেখা যায় না। কিন্তু অমাবস্যার পরের দিন থেকে চাঁদ আর পৃথিবীর গতির এমনই হয়  যে, পৃথিবী থেকে চাঁদের সামান্য আলোকিত অংশ নজরে পড়ে। এভাবে দিনে দিনে চাঁদের ফালি বড় হয় আর শেষ পর্যন্ত পূর্ণিমায় তা গোলাকার হয়ে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। পূর্ণিমার পরে আবার উল্টো ব্যাপার। তখন চাঁদকে আমরা ক্ষয়ে যেতে দেখি। পৃথিবী থেকে চাঁদের সম্পূর্ণ আলো পড়া অংশটা তখন দেখা যায় না। এভাবে দেখতে না পাওয়া অংশটার পরিমাণ বাড়তে থাকে।

আসলে চাঁদ দেখার সময় আমাদের মনে হাজারো প্রশ্ন আছে। চাঁদ দেখলেই মনে হয় এই বুঝি কত কাছে আমাদের ? কিংবা রাত বাড়ার সাথে সাথে সত্যি চাঁদ নেমে আসবে পৃথিবীতে !    

 

  

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন