জমে উঠেছে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৫

অগণিত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক প্রদর্শনী 'ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৫'।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস [বেসিস]- এর সভাপতি শামীম আহসান।

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক এই সম্মেলন ও প্রদর্শনীর এবারের স্লোগান ‘ফিউচার ইজ হিয়ার’। উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনে এসে জমে উঠেছে প্রদশর্নী। দর্শনার্থীরা লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় ধরে দাড়িয়ে থেকে ভেতরে ঢুকছেন। সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে নাম নিবদ্ধন করে ভেতরে প্রবেশ করছেন তারা।

প্রবেশ পথের বাইরেই খোলা আকাশের নিচে রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের একটি রেপ্লিকা। তারপাশে পদ্মা সেতুর মডেলকে ঘিরেও কৌতুহলি দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। এরপরই মেট্রোরেলের একটি মডেল কাচের ফ্রেমে রাখা। তার সঙ্গে রয়েছে সোলার কার এবং অন্ধদের জন্য ব্রেইলি পদ্ধতিতে কম্পিউটার ব্যবহারের স্মার্ট হ্যান্ড গ্ল্যাভস। রয়েছে গুগল বাস এবং বাংলাদেশ সরকারের ভ্রাম্যমান কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গাড়ি। প্রতিটি প্রদশর্নী ঘিরেই ছিলো কৌতুহলি দর্শকের আগ্রহ।

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের এই প্রদশর্নীতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর। এসব মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় সেসব তারা তুলে ধরছেন দর্শনার্থীদের সামনে। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সুবিধা সম্মলিত লিফটেট এবং বুকলেট তারা বিতরণ করা হচ্ছে দর্শনার্থীদের মধ্যে।

সম্মেলন কেন্দ্রর প্রবেশ মুখেই বাংলাদেশ পুলিশের স্টল। এখান থেকে কী কী উপায়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পুলিশ সেবা পাওয়া যাবে সে বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরছেন তারা। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের স্টলেও বেশ ভীড় বিদেশে কর্ম ইচ্ছুক দর্শনার্থীদের।

এরকম কৃষি অধিদপ্তর, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়, মিনিস্ট্রি অব পাওয়ার, এনার্জি ও মিনারেল, বাংলাদেশ রেলওয়ে, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর তাদের ডিজিটাল সেবার নানারকম পসরা সাজিয়ে বসছেনে এই প্রদর্শনীতে।

এবার তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নাগরিক সেবা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা উপস্থাপনে ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫’ তে রয়েছে চারটি প্রদর্শনী- বেসিস সফট এক্সপো, ই-গভর্নেন্স এক্সপো, মোবাইল ইনোভেশন এক্সপো এবং ই-কমার্স এক্সপো।

এর পাশাপাশি ই-কমার্স জোন, বিপিও ফোরাম, ডেভেলপারস ফোরাম, আইটি ক্যারিয়ার কনফারেন্স এবং আউটসোর্সিং ফোরামের মতো নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগের প্রদর্শনী নিয়ে বসেছেন তরুণ প্রযুক্তিবিদরা।

বেসিস সফটএক্সপো
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৫-তে সফটওয়্যার ও আইটিইএস খাতের ৭২টি স্টলে বেসিস সদস্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে তৈরি বিভিন্ন সফটওয়্যার সলিউশন্স প্রদর্শন করছে। সফটএক্সপো থেকে বিভিন্ন উদ্ভাবনীমূলক সফটওয়্যার এবং তার সুবিধাদি সম্পর্কে দর্শকদের জন্য জানার সুবিধা রয়েছে।

ই-গভর্ন্যান্স
মেলায় প্রায় ১০০টি স্টল থেকে নানা ই-সেবা প্রদর্শন করছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর।

ই-কমার্স
অনলাইনে ঘরে বসে কেনাকাটার নানা আয়োজন নিয়ে মেলায় রয়েছে ৪টি প্যাভিলিয়ন, ১০টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ২২টি স্টল।

মোবাইল ইনোভেশন
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ নিয়ে ৪২টি স্টলে রয়েছে ‘মোবাইল ইনোভেশন’ শীর্ষক প্রদর্শনী। রয়েছে চ্যাম্পস টুয়েন্টিওয়ান ডটকমের একটি স্টল। এখান থেকে বিনা মুল্যে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে শিক্ষাবিষয়ক অনলাইন পোর্টালের অ্যাপস ইন্সটল করে নিতে পারেন যে কেউ।

মিনিস্টেরিয়েল কনফারেন্স
এবার প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে বাংলাদেশসহ ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা।

এর বাইরেও এবারের সম্মেলন রয়েছে ২০টি সেমিনার, ১১টি কনফারেন্স এবং ১৩টি টেকনিক্যাল সেশন, সিএক্সও নাইট এবং ক্লাউড ক্যাম্প। সেমিনারের মধ্যে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ১১টি, ই-গভর্নেন্স নিয়ে ১১টি এবং ৩টি বিশেষ সেশন রয়েছে।  

এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৫-তে ২৫টিরও বেশি দেশ থেকে অংশ নিয়েছেন ৮৫ জন আইটি বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তা। তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আয়োজিত সেমিনার ও টেকনিক্যাল সেশনে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন তারা।

প্রদর্শনীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার কর্ণারের পাশাপাশি রয়েছে অন্যান্য এক্সপেরিয়েন্স জোন। রয়েছে সেলফি বুথ ও বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাসহ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে মেলার সর্বশেষ তথ্য জানার সুবিধা।

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৫ এর আয়োজক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস [বেসিস]। সহযোগী আয়োজক হিসেবে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন [এটুআই] প্রকল্প এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল [বিসিসি]।

৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া সবার জন্য উন্মুক্ত এই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫ প্রদর্শনী শেষ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী।  
 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন