জুনিয়র মাস্টার শেফের অন্তরালে

ছোটরা যে শুধু লেখাপড়া, নাচ-গানে পারদর্শী তা কিন্তু নয় রান্নার রাজ্যেও তাদের অবাধ বিচরণ।

১৯৯৪ সালে বিবিসি-তে (BBC) রান্নার একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়, যেখানে প্রতিযোগীদের বয়স ৯-১২ বছরের মধ্যে। অনুষ্ঠানটির নাম দেয়া হয় জুনিয়র মাস্টারশেফ(Junior Masterchef)।

মূল Masterchef-এর আদলেই লয়েড গ্রোসম্যান (Loyd Grossmen) জুনিয়র মাস্টারশেফ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন। প্রথম অনুষ্ঠানের জন্য আবেদন পর্বের শেষে প্রাথমিকভাবে ৩১ জনকে বাছাই করা হয়।

বাছাইকৃত ৩১ জনকে নিয়ে ৮টি রাউন্ড, ৪টি কোয়ার্টার ফাইনাল, ২টি সেমি ফাইনাল এবং সবশেষে চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

এই প্রতিযোগতিায় বিজয়ী একজনকে জুনিয়র মাস্টারশেফ খেতাব দেওয়া হয়। জুনিয়র মাস্টারশেফ প্রথমে শুধু ব্রিটিশদের মধ্যকার প্রতিযোগিতা থাকলেও ধীরে ধীরে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রিস, ইন্দোনেশিয়া, ইসরাইল, ইটালি, নেদারল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, ফিলিপাইন থাইল্যান্ড ও আমেরিকার পাশাপাশি এখন ভারতেও এই প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ক্ষুদে রন্ধনশিল্পী হলেও তাদের বড়দের মতই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। তবে বিচারকরা বড়দের প্রতি যতটা কঠিন থাকে, এই বাচ্চাদের প্রতি ততটা কঠিন হন না এবং তাদের সবসময়ই সাহায্য করেন। প্রতি রাউন্ডে এই ক্ষুদে রন্ধন শিল্পীরা যখন কোন খাবার তৈরি করতে থাকে তখন তাদের কোন একটা ভুল হলে তারা তৎক্ষণাৎ কী করতে হবে বুঝে উঠতে পারে না।

অভিজ্ঞতাটাই বা কতটুকু! কিন্তু এই বাচ্চাটির কষ্ট যেন বিফলে না যায় তাই বিচারকরা তাদের সাহায্য করেন। তারা প্রতেযোগীকে দ্রুত জানিয়ে দেন কী করলে তার ভুলটি রান্নায় কোন প্রভাব ফেলবে না।  প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া প্রতিটি শিশুর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়। তাদের জন্য আলাদা প্লাস্টিকের ছুরি-কাঁচি থাকে।

ওভেনে কিছু বেক করার সময় ঢুকানোর বা বের করার কাজটা বিচারকরাই করে দেন। চুলার কাছে কাজ করার সময় প্রতিযোগীদের নিবড়ি তত্ত্বাবধানে রাখা হয় যেন তাদের কোন রকম ক্ষতি না হয়।  আমাদের দেশে ইন্ডিয়ান চ্যানেল স্টার ওয়ার্ল্ড-এ জুনিয়র মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া ও মাস্টারশেফ জুনিয়র ইউ.এস(US)প্রচারিত হয়।

'শাইন অস্ট্রেলিয়া' ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে মাস্টারশেফ জুনিয়র অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সিজন (Season) প্রচার করে। ব্যাপকভাবে সাড়া পাওয়ায় ২০১১ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয় সিজন প্রচারিত হয়। উভয় সিজনে বিচারক ছিলেন আন্না গোরে, ম্যাট মোরান ও ম্যাট প্রিস্টেন।

প্রথম সিজনে বিজয়ী হয় ১২ বছরের ইসাবেলা ব্লিস এবং দ্বিতীয় সিজনের বিজয়ী ১১ বছরের গ্রেটা ইয়াক্সলি! মাস্টারশেফ জুনিয়র (US) ২০১৩ সালের মার্চ মাসে প্রথম ফক্স (FOX) চ্যানেলে প্রচারিত হয়। আমাদের দেশে তা প্রচারিত না হলেও ২০১৪ সালের সিজন-টু স্টার ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হচ্ছে প্রতি রোববার রাত ৯টায়।

এখানে বিচারক হিসেবে রয়েছেন গর্ডন রেমসেয়, জো বেসিয়ানিক ও গ্রাহাম এলট। এ পর্বের মাস্টারশেফ জুনিয়র বিজয়ী পাবে ১ লক্ষ ইউ.এস ডলার!

এছাড়াও আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে 'জুনিয়র মাস্টারশেফঃ সোয়াদ কে উস্তাদ' সাবটাইটেলসহ এই অনুষ্ঠানটি ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে স্টার প্লাস চ্যানেলে আয়োজন করা হয়। ১১ বছর বয়সী সার্থক আগারওয়াল এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়।

এখানে বিচারক হিসেবে ছিলেন বিকাশ খান্না, কুনাল কাপুর ও শেফ জলি। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে 'জুনিয়র মাস্টারশেফঃ সোয়াদ কে উস্তাদ' এর দ্বিতীয় সিজনের অডিশন শুরু হবে।

এই প্রতিযোগিতার ধারনা সব বাচ্চাই সেরা ! রুমভর্তি বাচ্চাদের মধ্যে সবাই সেরা হলেও একজন সর্বসেরা। মাঝে মধ্যে নিজের ভুল না থাকা সত্ত্বেও পার্টনারের ভুলের কারনে অনেকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে যায়। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বাচ্চাদের ধারণা দেয়া হয় 'জয়ে নয়, রান্নার খেলায় অংশ নেয়াতেই আসল আনন্দ।'

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন