জ্বর ঠান্ডা হলেই অ্যান্টিবায়োটিক নয়

আজকাল শিশুর এমনকি বড়দেরও হালকা জ্বর কিংবা ঠান্ডা লাগলে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে থাকেন। কখনও হাতুড়ে ডাক্তার আবার কখনও বড়রা নিজে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ান। কিন্তু সাধারণ অসুখেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলাফল ভয়াবহ। এতে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক যা করে
যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক অসাধারণ হিসেবে কাজ করে, কিন্তু সাধারণ জ্বর ঠান্ডাতে নয়। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া এই দুটি জীবানু শরীরকে দুর্বল করে। এই দুটির আক্রান্তে একই ধরণের উপসর্গ দেখা যায়, কিন্তু এগুলো আলাদাভাবে শরীরে কাজ করে ও দুর্বলতা বাড়ায়।

আমাদের শরীরে অনেক ব্যাকটেরিয়া আছে যেগুলো আমাদের উপকারই করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া শরীর আক্রমন করে ও স্বাভাবিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাধাগ্রস্থ করে। অ্যান্টিবায়োটিক এসব ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে ও তাদের পুনরায় জন্ম নেওয়া প্রতিরোধ করে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোও মারা গিয়ে লাভের চেয়ে ক্ষতি করতে পারে।

একইভাবে ভাইরাস নিজে বাঁচতে পারেনা। শরীরের অন্যান্য জীবিত কোষ আক্রমনের মাধ্যমেই ভাইরাস শরীরে অবস্থান করতে পারে। শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের সাথে লড়াই করতে পারে, এমনকি আক্রমনের আগেই। অ্যান্টিবায়োটিক এক্ষেত্রে কাজ করতে পারেনা।

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে সমস্যা
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন সমস্যা যেমন অ্যালার্জি সংক্রমন, অ্যান্টিবায়োটিক সহ্য ক্ষমতা কিংবা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে অন্তত ৫ জনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের অ্যালার্জি সংক্রমন হয়। শরীর ফুলে যাওয়া, ব্যাথা হওয়া কিংবা চুলকানি দেখা যায়। এক্ষেত্রে শিশুকে অবশ্যই এবং দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে অন্তত এক জনের অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া, পেট ব্যাথা, ডায়রিয়া হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক খাবার ব্যাকটেরিয়া মারার পাশাপাশি শরীরের জন্য ভালো ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলায় এসব সমস্যা হতে পারে।

অনেকদিন ধরেই যদি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় তাতে ব্যাকটেরিয়া মারা ও অ্যান্টিবায়োটিক সহ্য করা কিংবা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে তখন সমস্যা সমাধানে অধিকতর শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া লাগে। আর এ কারণেই ভালো ডাক্তাররা একেবারেই প্রয়োজন না হলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করেন না।

কখন অ্যান্টিবায়োটিক দিবেন?
আমরা বলছি না যে অ্যান্টিবায়োটিক একেবারেই পরিহার করতে হবে এবং এতে শুধু ক্ষতিই হয়। এগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আবশ্যক এবং জীবন বাঁচাতেও সাহায্য করে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের জন্য একটি নিয়ম আছে। যেমন- যদি এক নাগাড়ে ১৪ নেই বেশি কাঁশি হয়, ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া কিংবা হুপিং কাশি, উচ্চমাত্রার জ্বরের সাথে নাক দিয়ে সবুজাভ হলুদ শ্লেষ্মা পানি, গলা বসে যাওয়া, কানের সমস্যা, প্রশ্বাবে জ্বালাপোড়া এবং মূত্রাশয়ের সংক্রমণ হয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শমতো সঠিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে।

হেলথ ডটকম অবলম্বনে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন