জড় বস্তুরও শত্রু আছে !!

ধরো তোমার একটি অনেক শখের সাইকেল আছে । সাইকেলটি অনেক দামি এবং তোমার অনেক প্রিয় । নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে মাস দুয়েক গ্যারেজে রেখে দিয়েছো যত্ন করে । দুই মাস পর বের করলে চালানোর জন্যে । কিন্তু যখন-ই প্যাডেলে চাপ দিলে, তীক্ষ্ণ আওয়াজ করে সাইকেলের চেইনটি ছিঁড়ে গেলো । অবাক হয়ে দেখলে যে সাইকেলের চেইনটি দুই মাস আগেও রুপার মত চকচকে ছিলো, কিন্তু এখন বাদামী বা গাঢ় খয়েরী আস্তরন পড়ে গেছে এর উপর । যার কারণে একটু চাপ পড়াতেই চেইনটি ভেঙ্গে গেলো।

এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। “মরিচা” বা “জং” এর কারণে এ রকমটা হয়েছে।

এখন আমরা জানবো মরিচা কিঃ

মরিচার সাধারন সংকেত Fe2O3.nH2O

তুলনামূলক শক্ত ধাতুগুলোর মধ্যে লোহা একটি । কিন্তু এই লোহাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসহায় হয়ে পড়ে । মরিচা হচ্ছে লোহার সবচেয়ে বড় শত্রু ।

দীর্ঘদিন ধরে লোহাকে যদি খোলা অবস্থায় রাখা হয়, তাহলে তা বায়ুর অক্সিজেন এবং জলীয়বাষ্পের সংস্পর্শে এসে মরিচা সৃষ্টি করে । এই মরিচার কারণে লোহার স্থায়িত্ব কমে ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায় ।

মরিচা সৃষ্টির ক্ষেত্রে নিম্নরূপ বিক্রিয়াটি হয়ঃ

4 Fe(s) + 6 H2O(l) + 3 O2(g) = 4 Fe(OH)3(s) 

অর্থাৎ, মরিচা হলো পানি যুক্ত ফেরিক অক্সাইড।

প্রতিকারের উপায়ঃ

যেহেতু লোহা বাতাসের সংস্পর্শে এসে মরিচা সৃষ্টি করে,  তাই এমন কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে যেনো লোহা বাতাসের সংস্পর্শে আসতে না পারে।

এজন্যে,   প্রথমত বায়ুতে এর জারণ ( Oxidation) বন্ধ করতে হবে । এটি করতে লোহার গায়ে আলকাতরার প্রলেপ দেয়া যেতে পারে । কিংবা দস্তার প্রলেপও দেয়া যেতে পারে । ধাতব লোহার উপর দস্তার প্রলেপ দেয়ার প্রক্রিয়াটি গ্যালভানাইজিং নামে পরিচিত । এছাড়াও ইলেক্ট্রোপ্লেটিং ( Electroplating ) এর মাধ্যমে জিঙ্ক ( Zn), ক্রোমিয়াম ( Cr), কপার ( Cu ) কিংবা নিকেলের ( Ni ) আবরণ সৃষ্টির মাধ্যমেও মরিচা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

লোহার মত আরেকটি ধাতব বস্তু হলো সোনা/গোল্ড । কিন্তু বাতাসে উন্মুক্ত রাখলেও এতে কখনো মরিচা পড়ে না । এর একটি কারণ রয়েছে তা হলো, সক্রিয়তার ক্রমে সোনার চেয়ে লোহার সক্রিয়তা যথেষ্ট পরিমাণ বেশি । তাই লোহা যত সহজে বাতাসের সাথে মিশ্রিত হতে পারে, সোনা বা গোল্ড সেটা পারেনা । একারণে এতে মরিচাও পড়ে না । একই রকম ভাবে এবং

 

একই কারণে রূপা বা সিলভারও মরিচাগ্রস্ত হয় না ।

তবে, সোনা বা রূপা দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে এদের উপর হালকা কালো আস্তরণ পড়ে । এর কারণ হচ্ছে, মানুষের শরীর যখন ঘামে, তখন কিছু পরিমাণ সালফার বা গন্ধক নিঃসৃত হয় । আবার বায়ুমন্ডলের প্রায় ২৯ শতাংশ সালফার রয়েছে । এই সালফার এবং বাতাসের অক্সিজেন মিলে সালফার ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে, যা সোনা বা গোল্ড কিংবা সিলভার ধাতুর উপর ধীরে ধীরে কালো আস্তরণ ফেলে দেয়।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন