বাচ্চাদের বই পড়ে গল্প শোনানোর আইডিয়াটা একেবারে নতুন নয়। ছোটবেলায় আমাদের অনেকের বাবা-মা এই কাজটি নিয়মিত করতেন। কিন্তু গেজেট-গিয়ারের যুগে বিষয়টি অনেকেই এড়িয়ে চলেন। বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানো বা খাওয়ানোর জন্য বই পড়ে শােনানোর পরিবর্তে তার হাতে ট্যাব তুলে দেয়াটাকেই ভালো মনে করেন তারা।
তবে শিশু গবেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা।প্রায় বছরখানেক আগে, আমেরিকার শিশুচিকিৎসা একাডেমী তাদের নীতিমালায় জানায়, শিশুদের জন্মের পর থেকেই তাদের যে কোনো প্রাথমিক যত্নের ক্ষেত্রে শিক্ষাবিষয়ক ব্যাপার অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
এর মানে হচ্ছে, খুব অল্প বয়স থেকেই এদের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি পড়ে শোনানোটা খুবই জরুরি একটা কাজ। একদম ছোটবেলা থেকেই যদি তারা বইয়ের সাথে বেড়ে উঠে আর গল্প শোনে তাহলে তা তাদের ভাষাগত উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে, সেই সাথে পরবর্তী জীবনেও তা খুব কাজে লাগে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি যদি একটি শিশুকে কোলে নিয়ে ছবিসহ কোন গল্পের বই পড়ে শোনান তাহলে তা বাচ্চাটির জন্য অনেক সুফল বয়ে আনে। ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের যদি তাদের বয়সের উপযোগী গল্প পড়ে শোনানো হয় তাহলে তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অনেকখানি বৃদ্ধি পায়।
যেসব বাবা-মায়েরা সন্তানদের বই পড়তে সাহায্য করেন তাদের মস্তিষ্কের লেফট হ্যামিস্ফিয়ারের কার্যকারিতা অনেকগুন বেড়ে যায়। মস্তিষ্কের এই অংশটি তাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে পড়াশোনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Cincinnati Children’s Hospital Medical Center-এ কর্মরত ক্লিনিক্যাল গবেষক ড. জন হাটন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যখন একটা বাচ্চাকে গল্প পড়ে শোনানো হয় তখন সে তার মনের চোখ দিয়ে সেটা কল্পনা করে। যেমন একটা ব্যাঙ পানিতে লাফ দিলো শুনলে সে তার মনের চোখ দিয়ে সে দৃশ্যটা দেখার চেষ্টা করে’।
আসলে একটা গল্প শুনলে বা বই পড়লে মানুষ নিজের মত করে ঘটনাটা মনে মনে কল্পনা করে নেয়। কিন্তু একটা ভিডিও দেখলে সে চিন্তাটা তাদের মধ্যে আর আসেনা।
অল্প বয়সী বাচ্চাদের জন্য ভাষা শোনাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ আর সেটা শুনেই শেখা উচিত, কোন পর্দায় দেখে নয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩ বছর বয়সী দরিদ্র শিশুরা অন্যদের তুলনায় অনেক কম ভাষা শিখতে পারে।
তবে বাবা-মায়েরদের কাছ থেকে শুনে শেখার চাইতে বই পড়ে শোনালে বাচ্চাদের ভাষা আরও সমৃদ্ধ হয়। সাধারণ বাচ্চাদের ভাষার দক্ষতার চাইতে বই পড়ে শোনানো বাচ্চাদের ভাষা আরও উন্নত হয়ে থাকে।
কারণ সাধারণ কথাবার্তার ভাষার চাইতে একটা বইয়ের ভাষায় অনেক বেশি বৈচিত্র্য থাকে। তাই যারা শিশুদের দেখাশোনা করেন তাদের শিশুদের বই পড়ে শোনানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আর ঘুমানোর আগে বই পড়ে শোনানো বাচ্চাদের জন্য আরও আকর্ষণীয় বলেই প্রমানিত।