ডপলার প্রভাব কি এবং কীভাবে ঘটে

আচ্ছা কোন দিন কি লক্ষ্য করেছো যে একটা অ্যাম্বুল্যান্স যখন আমাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করে তখন এটির সাইরেনের শব্দটা আমরা জোরে শুনি আবার যখন অ্যাম্বুল্যান্সটা দূরে যেতে থাকে তখন শব্দটা আস্তে আস্তে দূরে হারিয়ে যেতে থাকে। যদি অ্যাম্বুল্যান্সটা দাঁড়িয়ে থাকে আর তুমি দূরে চলে যেতে থাক তাহলেও কিন্তু একই ঘটনা ঘটবে।

কেন এই ঘটনাটা ঘটে তা কি আমরা জানি? এটি হচ্ছে কম্পাঙ্কের খেলা। যখন শব্দ উৎস এবং শ্রোতা উভয় স্থির থাকে তখন উৎস যে কম্পাঙ্ক উৎপন্ন করে তা শ্রোতা শুনতে পায়। কিন্তু আপেক্ষিক গতির সময় শ্রোতার নিকট উৎসের সৃষ্টি কম্পাঙ্ক আপাত পরিবর্তন ফলে শ্রোতা যে কম্পাঙ্ক শুনতে পায় তা উৎসের কম্পাঙ্কের থেকে ভিন্ন হয়।

অষ্ট্রিয়ার পদার্থ বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান ডপলার ১৮৪২ সালে সর্ব প্রথম এই প্রভাব প্রত্যক্ষ করেন। পরে ১৮৪৫ সালে বাইস ব্যালেট হল্যান্ডে পরীক্ষার সাহায্যে এই প্রভাব প্রমাণ করেন। ডপলারের নাম অনুসারে এই প্রভাবকে ডপলার প্রভাব বলে।

ডপলার প্রভাব কি তা তো জানা হল এখন এর বাস্তব দুইটা উদাহরণ শুনি।

ডপলার নীতির সব চাইতে সুন্দর উদাহরণ হচ্ছে প্লাটফর্ম-এর ট্রেন। ট্রেন যখন তার ঝিকঝিক হুইসেল বাজিয়ে স্টেশনে আসে তখন আমাদের কাছে এর হুইসেলের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এটার স্বাভাবিক কারণ হচ্ছে ট্রেন থেমে থাকলে যে সমস্ত তরঙ্গ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় থাকতো চলন্ত অবস্থায় এই তরঙ্গের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎস এক সেকেন্ডে যে কম্পাঙ্ক উৎপন্ন করে শ্রোতা তার বেশী কম্পাঙ্ক শুনতে পায় এক সেকেন্ডে। আবার ট্রেন যখন স্টেশন থেকে দূরে চলে যায় তখন হুইসেলের তীব্রতা কমে যায়। কারণ, তখন শ্রোতার নিকট উৎস দূরে চলে যাওয়াতে একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে আগের চাইতে কম তরঙ্গের সন্নিবেশ ঘটে। ফলে উৎস এক সেকেন্ডে যে কম্পাঙ্ক উৎপন্ন করে শ্রোতা তার কম কম্পাঙ্ক শুনতে পায় এক সেকেন্ডে। ফলে শব্দের প্রভাব আপাত হ্রাস পায়।

তবে ডপলারের প্রভাব শুধু শব্দ তরঙ্গে হয় তা নয়, এটা আলোক তরঙ্গেও দেখা যায়। বিশেষ করে জ্যোতি-পদার্থবিদ্যায় (Astro-Physics) গবেষণায় এর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ।

দূরবর্তী নক্ষত্র হতে নিঃসৃত আলো পর্যবেক্ষণ করার সময় ডপলার নীতি ব্যবহার করা হয় প্রথমে আক বাতিতে একই বর্ণালি পর্যবেক্ষণ করা হয় তখন দেখা যায় নক্ষত্র হতে নিঃসৃত আলো ধীরে ধীরে বেগুনি  কিংবা লাল প্রান্তের দিকে যাচ্ছে। যদি বেগুনি প্রান্তের দিকে সরে আসে তাহলে বুঝতে হবে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হ্রাস পাচ্ছে আর কম্পাঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে আর যদি লাল দিকে সরে আসে তাহলে বুঝতে হবে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বাড়ছে আর কম্পাঙ্ক হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ, নক্ষত্র পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় এই গ্যালাক্সিগুলো শুধু পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে না বরং পরস্পর থেকেও দূরে সরে যাচ্ছে অর্থাৎ আমাদের এই মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে।

চিকিৎসাশাস্ত্রেও ডপলার প্রভাব লক্ষণীয়। ডপলার নীতির উপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয়ের জন্য আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এছাড়া নাড়িতে রক্ত প্রবাহ দেখা যাবে ডপলার প্রভাবের  মাধ্যমে। গর্ভবতী নারীর পেটের চর্বি, পর্যাপ্ত ঘুমের সমস্যা ত্বকে ব্রনের সমস্যা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ডপলার নীতির প্রয়োগ করে রোগ নির্ণয় করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন