ডুবুরীদের চ্যালেঞ্জিং দুনিয়া

কাজী নজরুল ইসলামের সংকল্প কবিতা আমরা সবাই পড়েছি। সেখানে একটি লাইন আছে,

“কেমন করে বীর ডুবুরি
সিন্ধু সেঁচে মুক্তা আনে…”

সিন্ধু সেঁচে মুক্তা আনুক আর নাই আনুক একজন ডুবুরী কি পরিমাণ কষ্ট করে এবং যে পরিমাণ আত্মত্যাগ করে সেটা না জানলে হয়তো বিশ্বাস করা যাবে না।

সাধারনত পানির নিচে কোনো রকম সাহায্য ছাড়া ২০/৩০ মিটারের বেশি নিচে দেখা যায় না। এর উপর পর্যন্ত মোটামুটি সবকিছুই দেখতে পাওয়া যায়।সাত রঙের আলোই পানিতে প্রবেশ করে, তবে কিছু দূর পর পর একটি একটি করে আলো হারিয়ে যেতে থাকে। সর্বশেষে বেগুনী আলো ২০০ মিটারের পর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এরপর হালকা আলো আঁধারি থাকে। আর প্রায় ১০০০ মিটার বা ৩২৮০ ফুট পরে একদমই অন্ধকার হয়ে যায় পানির তলদেশ। চারিদিকে শুনশান নীরবতা।

আর কেউ যদি কোনো জলযান ছাড়া ২০০ মিটার বা ৬০০ ফুটের বেশি নিচে নেমে যায়, তাহলে পানির প্রচন্ড চাপে সে মারাও যেতে পারে।

এরকম অনেক সমস্যা নিয়ে ডুবুরীদের প্রতিদিনের কাজ চলতে থাকে।

পানির নিচে ডুবুরীরা শ্বাস নেয় কিভাবে ? টিভিতে প্রায়ই দেখি আমরা কিভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার পেছনে নিয়ে ডুবুরীরা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু, এই অক্সিজেন ট্যাঙ্ক আবিষ্কারের আগে ডুবুরীরা কি করতো ? প্রশ্ন আসতেই পারে।

আগেকার সময়ে অক্সিজেন ট্যাঙ্কের বিকল্প হিসেবে “ডাইভিং বেল” ব্যবহার করা হতো।

পানিতে নামার আগে বেলটিকে উল্টো করে খোলা দিকটি পানিতে  খাড়াভাবে নামানো হতো। পানির চাপে বাতাস ঐ বেলের মধ্যে আটকে যেতো। ডুবুরী ডুব দিয়ে বেলের ভেতর চলে যেতো, সেখান থেকে কিছু অক্সিজেন গ্রহন করে দম নিয়ে ডুব সাতার দিয়ে কিছু কাজ করে একটু পর আবার বেলের ভেতর আসতো, আবার নিশ্বাস নিতো, আবার বের হতো। এভাবে চলতে থাকতো।

একের অধিক মানুষ একসাথে এই বেল ব্যবহার করতে পারতেন। শুধু আগের দিনেই এটি ব্যবহার হতো, তা কিন্তু নয়। এখনো এর ব্যবহার হচ্ছে। তবে প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে এর আকার ব্যবহারে পরিবর্তন এসেছে।

আর বর্তমানে সবচেয়ে বেশি যেটি ব্যবহৃত হয়, সেটি হচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার বা অক্সিজেন ট্যাঙ্ক। এতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন এবং হিলিয়ামের মিশ্রণ দেয়া থাকে।

সিলিন্ডার প্রচলনের শুরুর দিকে অক্সিজেনের সাথে নাইট্রোজেন দ্রবীভূত সিলিন্ডার ব্যবহার করা হতো। এক্ষেত্রে সমস্যা যেটি হয় তা হলো পানির অতিরিক্ত চাপের কারণে নাইট্রোজেন ডুবুরীদের রক্তে মিশে যায়। আবার উপরে উঠে আসার পর চাপ কমে যাওয়ায় রক্ত থেকে নাইট্রোজেন বের হয়ে যায়। এই দুই ক্ষেত্রেই ডুবুরীরা প্রচন্ড রকমের ব্যাথা অনুভব করে থাকে, এই ব্যাথাকে Bend বলা হয়।

এই সমস্যার সমাধানে অক্সিজেন হিলিয়ামের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয় বর্তমানে এই মিশ্রণকে Heliox বলা হয়।

একজন গভীর সমুদ্রের ডুবুরীকে কিছু প্রয়োজনীয় বস্তু সঙ্গে রাখতে হয়।

– একটি এয়ার পাম্প যা ডুবুরীকে জলের তলে নামতে সাহায্য করে

– জলের তলে দেখার জন্যে কাঁচের চশমা লাগানো একটি হেলমেট

– হাতের বাহুতে ও পায়ের গোড়ালির সঙ্গে লেগে থাকতে পারে এমন জল নিরোধক পোশাক

– জলের তলে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে এমন একটি জুতা

– একটি লাইফ লাইন যার মাধ্যমে স্থলের বা জাহাজের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে

অতল সাগরে ডুবুরীদের কাছে জলের চাপ একটি বিরাট সমস্যা। ডুবুরী জলের যত গভীরে নামবে তার চারপাশে জলের চাপ বেড়ে যায়। তাই, নিচের দিকে বাতাস পাম্প করার ব্যবস্থাটি তাকে ঠিকমতো শ্বাস নিতে ও জলের চাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ডুবুরীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন। ডুবে যাওয়া মানুষদের অনুসন্ধানের ব্যাপারে তাঁদের গুরুত্ব অপরিসীম। জলের তলদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীদের জীবন নিয়ে তাঁরা গবেষণা করেন। জলের উপর সেতু বা ব্রিজ নির্মাণে তাঁদের সাহায্য অপরিহার্য।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন