আর্চারি, পৃথিবীর প্রাচীনতম খেলা যা আজকের দিনের মানুষের কাছে এখনো জনপ্রিয় খেলার তালিকায় রয়েছে। প্রাচীনকালে তীর বা ধনুক ব্যবহার করে পশু শিকার করা হতো। পরবর্তীকালে হস্তনির্মিত অস্ত্র হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে এর বহুল প্রচলন ঘটে। এটি গোলন্দাজ সৈন্যবিভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। নিখুঁত লক্ষ্যভেদে এর জুড়ি ছিল না এবং দক্ষ তীরন্দাজগণ যুদ্ধ জয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখতেন। আদি ইতিহাস থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তীর ধনুক একটি অত্যাবশ্যক অস্ত্র ছাড়াও একটি প্রতিযোগিতামূলক খেলা আর্চারি হিসেবে দেশ ও জাতীয় সীমা পেরিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সারা বিশ্বে। ব্যক্তি হিসেবে যিনি তীর-ধনুক ব্যবহার করেন বা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তিনি তীরন্দাজ বা আর্চার বা বোম্যান নামে পরিচিত।
আর্চারি ইনডোর এবং আউটডোর উভয় ক্ষেত্রে খেলা হয়ে থাকে। ইনডোরের ক্ষেত্রে শুটিং লাইন থেকে টার্গেটের দূরত্ব হয় ১৮ থেকে ২৫ মিটারের মধ্যে যা আউটডোরের ক্ষেত্রে হয় ৩০ থেকে ৯০ মিটার। অলিম্পিকে স্ট্যান্ডার্ড দূরত্ব হল ৭০মিটার। আর্চারি প্রতিযোগীতা কয়েকটি ভাগে বা প্রান্তে ভাগ করা হয়। প্রতি ভাগে বা প্রান্তে একজন প্রতিযোগী ৩ থেকে ৬টা তীর ছুড়তে পারে। ইনডোরের ক্ষেত্রে ২০টা প্রান্ত থাকে এবং প্রতি প্রান্তে ৩ টি তীর ছোড়া যায়। আর এ জন্য সময় দেওয়া হয় ২ মিনিট। কেবল সিগ্যনাল দেওয়ার পরেই আর্চাররা তীর নিক্ষেপ করতে পারে। সিগ্যনাল দেওয়া হয় লাইট কিংবা পতাকার মাধ্যমে, এক্ষেত্রে কোন শব্দ সংকেত ব্যবহার করা হয় না।
তীর টার্গেটের কোথায় আঘাত করেছে তার উপর ভিত্তি করে পয়েন্ট দেওয়া হয়। বাইরের সাদা বৃত্ত থেকে ভিতরের কেন্দ্র পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ১ থেকে ১০ পয়েন্ট দেওয়া হয়। যদি তীর টার্গেট আঘাত না করে তবে সেটাও গণনা করা হয়। যদি কেউ নির্দিষ্ট সময়ের পরে তীর নিক্ষেপ করে তবে শাস্তি হিসেবে সেই প্রান্তের সর্বোচ্চ পয়েন্টটি বাতিল হিসেবে গণ্য করা হয়।
আমাদের চিন্তায় আসতে পারে তীর হাত দিয়ে নিক্ষেপ করলেই তো হয়, ধনুকের প্রয়োজনীয়তা কি? যখন ধনুক ব্যবহার করা হয়, আমাদের হাতের পেশী ধীরে কাজ করেও অনেক বেশি শক্তি অর্জন করে থাকে ও এর পিছনে মূল কারণ হলো ধনুকের স্থিতিস্থাপকতা বা নমনীয়তা। যখন তীর নিক্ষেপ করা হয়, ধনুকের স্থিতিস্থাপকতার কারনে সঞ্চিত শক্তি গতি শক্তিতে রূপ লাভ করে এবং দ্রুত গতিতে অনেক বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে।
যদিও আর্চারি একসময় অবসর যাপনের মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হতো, বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে প্রতিযোগিতামূলক খেলা হিসেবে এর কদর রয়েছে। অলিম্পিক গেমস থেকে শুরু করে কমনওয়েলথ গেমসে আর্চারি একটি নিয়মিত ক্রীড়া হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তীর ও ধনুক ছাড়াও আরো কিছু উপকরণের ব্যবহার দেখা যায় আর্চারিতে। এদের মধ্যে ফিঙ্গার টেব, থাম্ব রিং, ব্রেসার ইত্যাদি প্রতিরক্ষামূলক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য উপকরণের মধ্যে রয়েছে রিলিস এইড,স্টাবলাইজার, বো স্ট্রিং ইত্যাদি। খেলার ধরণের ভিত্তিতে তীর-ধনুকের প্রকার পরিবর্তন হয়ে থাকে।