পিচ ম্যাপ : ক্রিকেটের বোলিং ময়নাতদন্ত

ক্রিকেটে পিচ বলতে দুই উইকেটের মধ্যবর্তী অংশকে বোঝায়, এর দৈর্ঘ্য ২২ গজ বা ২০.১২ মিটার, এবং প্রস্থ ৩.০৫ মিটার ।

আমরা ক্রিকেট খেলা দেখার সময় একটি দৃশ্য প্রতিনিয়তই লক্ষ্য করি তা হচ্ছে বোলারদের পিচ ম্যাপ।

পিচ ম্যাপ দ্বারা একজন বোলারের দক্ষতা বুঝা যায়। কেননা বোলারটি কত ওভার করলো এবং ওভারের বলগুলো কোথায় পিচ করলো তার উপর নির্ভর করে পিচ ম্যাপটা তৈরি করা হয়।

পিচ ম্যাপে ক্রিকেট পিচের দৈর্ঘ্য বরাবর বিভিন্ন রঙের কয়েকটি জোন বা এরিয়া দেখতে পাওয়া যায়।

একজন বোলার কতটা নিখুঁত বোলিং করেছে তার স্পেলে তা বিভিন্ন রঙের জোন বা এরিয়া দ্বারা  নির্দেশ করা হয় । 

আরেকটি বিষয় হচ্ছে যে, পিচ ম্যাপের উপর লাল, নীল, হলুদ ও সাদা রঙের বল দেখা যায়। লাল রঙ দ্বারা Dot বল, নীল রঙ দ্বারা রান হয়েছে বুঝানো হয়। হলুদ রঙের মাধ্যমে বাউন্ডারি ও সাদা দ্বারা উইকেট হয়েছে বুঝানো হয়।

এবার আসা যাক পিচ ম্যাপের বিভিন্ন জোন বা এরিয়া সম্পর্কে।

SHORT:

শর্ট(Short ) জোন মূলত পিচের মধ্যভাগ বা মধ্যভাগের আগে কিছুটা অংশ। এই জোনে বল পিচ করাটা ভালো বোলিং এর মধ্যে পড়ে না। কেননা পিচের মধ্যভাগে বল পিচ করলে তা একজন ব্যাটসম্যান বুঝেশুনে সময় নিয়ে খেলতে পারে। আর ব্যাটে বলে ক্লিক করলে নির্ঘাত বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি। তবে বলের গতি বেশী থাকলে মাঝে মাঝে এই শর্ট জোনে বল পিচ হলে  ব্যাটসম্যানকে দ্বিধায় ফেলায় দিতে পারে একজন বোলার।

GOOD LENGTH:

Good Length কথাটা দ্বারায় বুঝতে পারছো যে এই লেংথে বল করতে কোন বোলারই বা না চাই! কেননা এই লেংথে বা জোনে Constant যদি একজন বোলার বল করে তাহলে তার উইকেট পাওয়া কে আটকায় ! এই লেংথে একজন বোলার বল করলে ব্যাটসম্যান দ্বিধায় পড়ে যায় এই ভেবে যে বলটা ফ্রন্ট ফুটে গিয়ে খেলবে নাকি ব্যাক ফুটে। তাই, এই ধরণের বলে প্রায় ব্যাটসম্যান Beat হয় বা Edge হয়ে উইকেটকিপারের কাছে ক্যাচ হয়। আর ব্যাটের কোণায় এই ধরণের বল লাগলে স্লিপে যাওয়ার সম্ভাবনায় বেশী থাকে।

FULL/ OVER-PICHED:

Full বা Over- Pitched বল ব্যাটসম্যানের জন্য একটি মজার ডেলিভারি। কেননা এই জোনে বল পড়লে ব্যাটসম্যান সহজেই ফ্রন্ট ফুটে গিয়ে বলের লাইনে মারতে পারে।

YORKER:

Yorker লেংথে বোলাররা সাধারণত Death Over বা Innings এর শেষ দশ ওভারে করে থাকেন। কেননা তখন ব্যাটসম্যানরা মারমুখী থাকেন। ঐ সময় Yorker লেংথে বল করলে যদি ব্যাটসম্যান বল মিস করে তাহলে নির্ঘাত বোল্ড বা এলবিডব্লিউ। ইয়র্কার বল করার অসুবিধাও আছে। যদি বোলার ইয়র্কার ডেলিভারি করতে না পারে তবে ব্যাটসম্যানের কাছে বলটি ফুল টস হিসেবে আসে। আর বলটা ইয়র্কার না হয়ে ফুল টস হলে বল সীমানার বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯০% (যদি ব্যাটসম্যানের ব্যাটে লাগে)।        

এবার উপরের ছবিটা একটু বিশ্লেষণ করা যাক। পিচ ম্যাপে দেখা যাচ্ছে বোলার Short লেংথে বল করেছে ১৩ % অর্থাৎ সে যদি ১০ ওভারের ৬০ টি বল করে থাকে তার ৮ বল বোলার বল করেছে Short লেংথে কিন্তু কোন উইকেট পাইনি এই জোনে বল ফেলিয়ে। 

Good লেংথে বল করেছে ৭১ % অর্থাৎ ৬০ টি বলের ৪২ টি বলই এই জোনে।  তার ফলসরূপ বোলার চারটি উইকেট ( সাদা রঙের ) পেয়েছে।

আর বাকি ১০ টি বল ফুল লেংথে করার ফলে ব্যাটসম্যান চারটি বল ( হলুদ রঙের ) সীমানার বাইরে পাঠিয়েছে। যদিও এই লেংথে বল ফেলিয়ে বোলার ২টি উইকেট পেয়েছে। 

যেহেতু বোলার তার অধিকাংশ বল Good লেংথে করেছে তাহলে আমরা বলতে পারি বোলারটি ভালো ও নিখুঁত বোলিং করেছে।            

   

      

          

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন