কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। এই ফল আমাদের সবার কাছেই কম বেশি প্রিয়। সুস্বাদু আর পুষ্টিকর এই ফল খুব বেশি যত্ন না করলেও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় একটি গাছ থেকে। আর আমাদের দেশে গ্রামে-শহরে সব জায়গাতেই কাঁঠাল গাছ দেখা যায়। তাই গ্রীষ্মকালে এই ফলের অভাব হয় না।
আমেরিকাভিত্তিক প্রযুক্তি ওয়েবসাইট সম্প্রতি কাঁঠাল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কাঁঠাল অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুলভ একটি ফল যা পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষের ক্ষুধা দূর করতে পারে। তারা এই ফলটিকে ‘বিস্ময়কর’ ফল বলে আখ্যায়িত করছেন।
শিকাগো বোটানিক গার্ডেনের উদ্ভিদবিজ্ঞানী নায়রি জেরেগা বলেন, বাংলাদেশে আমের পরপরই সবচেয়ে বেশি ফলে কাঁঠাল। একইসাথে ফল এবং কাঠ
উভয়ই পাওয়া যায় এই গাছ থেকে। শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেন এই গাছ আরও অনেক দিক থেকেই উপকারি। কাঁঠাল গাছের পাতা ছাগল এবং গৃহপালিত প্রাণীর কাছে খুব প্রিয় খাবার। কাঁঠালের কমলা রঙের ছাল দিয়ে একসময় সন্ন্যাসীদের কাপড় রঙ করা হতো। কাঁঠাল গাছ থেকে যে আঠালো রস বের হয় তা থেকে উন্নতমানের আঠা তৈরি করা হয়ে থাকে। এই গাছের কাঠের মানও বেশ ভালো।
বৃক্ষে ফলে এমন ফলগুলোর মধ্যে কাঁঠালই সবচাইতে বড়। এক একটি কাঁঠালের ওজন ৫ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে যার প্রতিটির ভিতর থাকে প্রচুর বীজ (প্রচলিত ভাষায় যাকে আমরা কোশ বলে থাকি)। এই বীজগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম আর ক্যালসিয়াম থাকে। এক পাউন্ডের পাঁচ ভাগের এক ভাগেই প্রায় ৯৫ ক্যালোরি পাওয়া যায়। শুধুমাত্র ১০-১২টি কোশ খেলেই দিনের অর্ধেক না খেয়ে কাটানো যায়।
গবেষকেরা বলছেন, এই কাঁঠাল পৃথিবীর একটি বড় সংখ্যক মানুষের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে খাদ্যের অভাব দূর করতে পারে। বিশেষ করে ভারতের মত দেশে যেখানে লাখ লাখ মানুষ খেতে পায়না এবং পুষ্টির অভাবে ভোগে। অথচ শুধুমাত্র দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেই প্রাকৃতিকভাবে কাঁঠাল জন্মায়। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, মালয়শিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলংকায় প্রচুর কাঁঠাল পাওয়া যায়। তাই এ অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যের অভাব খুব সহজেই পূরণ করতে পারে কাঁঠাল।
শুধু খেয়েই নয়, কাঁঠালের ব্যবসা করেও যে কেউ প্রচুর লাভবান হতে পারে। সেইসাথে কাঁঠাল গাছের কাঠ বিক্রি করে অর্থ আয় করা সম্ভব।