পেঁয়াজ কাটতে গেছে অথচ চোখ জ্বালা পোড়া করেনি, চোখে পানি আসেনি , এমন বীরপুরুষ একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না পৃথিবীতে। কিন্তু পেঁয়াজ কাটা তো এমন কিছু কষ্টের কাজ না, তবুও ওইটুকু কাজেই সবার চোখে পানি চলে আসে কেন?
আসল ঘটনা অন্যখানে। কারণটি লুকিয়ে আছে পেঁয়াজের ভাঁজের ভেতরে। মাটির নিচে থাকা অবস্থায় পেঁয়াজের কোষগুলো মাটি থেকে অন্যান্য আরো অনেক খনিজ পদার্থের সাথে সাথে সালফারও সংগ্রহ করে। যখনই আমরা পেঁয়াজ কাটি, তখন পেঁয়াজের কিছু কোষও ভেঙ্গে যায়। তার ফলে পেঁয়াজের কোষগুলো থেকেই এমন কিছু এনজাইম নিঃসৃত হয় যেগুলো সালফারের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামিনো এসিড সালফোক্সাইড তৈরী করে।
এই অ্যামিনো এসিড সালফোক্সাইড আবার সিন-প্রোপ্যানেথিয়াল-এস অক্সাইড নামের একটি যৌগ গঠন করে, যা আসলে সালফিউরিক এসিড, সালফার ডাই অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন সালফাইডের মিশ্রণ। পেঁয়াজ কাটার পর সালফারের এই যৌগগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। যখনই সালফারের এই যৌগগুলো বাতাসের মাধ্যমে চোখে এসে পৌঁছোয়, তখনই চোখে থাকা স্নায়ুগুলো জ্বলুনীর অনুভূতি মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয়।
আমরা কাঁদলে চোখ থেকে যে পানি ঝরে, সে পানি নিয়ন্ত্রণ করে ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড, যে গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি তোমার চোখের পাতার ঠিক ভেতরেই আছে। যখনই তোমার মস্তিষ্ক জানতে পারে যে তোমার চোখে জ্বলুনী হচ্ছে, তক্ষুনি সে ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ডকে পানি ঝরানোর নির্দেশ দেয়, যেনো সব অবাঞ্ছিত সালফার পানিতে ধুয়ে-মুছে চলে যায়। ঠিক এ কারণেই, পেঁয়াজ কাটলে চোখ থেকে পানি ঝরে।
রান্না করা পেঁয়াজ কাটলে কিন্তু চোখও জ্বলে না, পানিও আসে না চোখে। কারণ সালফারের যৌগগুলো বাতাসে ছড়িয়ে দেবার জন্য দায়ী যে এনজাইম, রান্না করার ফলে সে এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়। আবার পেঁয়াজ কাটার আগে পানিতে ধুয়ে নিলেও আর জ্বলবে না চোখ। পানিতে ধুয়ে নিলে সালফারের অস্থিশীল যৌগগুলো পানিতে ধুয়ে চলে যায়, ফলে আর বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে না বলে চোখেও পৌঁছাতে পারবে না।