পেট্রল বোমা থেকে রেহাই পেতে রুপমের প্রযুক্তি

রাজনৈতিক সহিংসতায় পেট্রল বোমার আঘাতে মানুষের মৃতু্যর খবর দেখে মনটা খুব খারাপ হয়েছিলো রুপমের। পেট্রল বোমার আগুনে দগ্ধ মানুষগুলোকে দেখে কিছু একটা করার তাড়না ভেতর থেকে বোধ করতে শুরু করে সে। তারপর প্রথম সুযোগটাই লুফে নেয় রুপম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এবারের ৫ম ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে তাকে অংশ নিতে বলেন তার স্কুল বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুলের সহকারী শিক্ষক এবং স্কুলটির সাইন্স ক্লাবের মডারেটর মনোরঞ্জন ধর। এই অলিম্পিয়াডের জন্য তাকে তিনটি প্রকল্প নিয়ে আসতে বলেন তিনি। রুপম তিনটি প্রকল্পই নিয়ে হাজির হয় তার শিক্ষকের কাছে।

দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মনোরঞ্জন ধর তাকে ‘সেফ ফ্রম পেট্রল বোমা’ প্রকল্পটি নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে বলেন। এরপর রুপম তার প্রজেক্টের যাবতীয় খুঁটিনাটি নিয়ে তার কছে আবার হাজির হলে তিনি তাকে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে বলেন। প্রথমবার এমন একটি প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়ে সবাইকে চমকে দেয় রুপম। ছিনিয়ে আনে বিশেষ পুরস্কার।

রুপমের ‌'সেফ ফ্রম পেট্রল বোমা’ :

রুপম জানায়, এটি এমন একটি প্রকল্প যেটির প্রয়োগে একটি বাস, কার কিংবা ট্রেনকে পেট্রল বোমার আগুনে পোড়া থেকে বাঁচানো সম্ভব। রুপম জানায়, এই পদ্ধতিতে একটি গাড়ির চারপাশের জানালা ঘিরে প্লাস্টিকের একটি টিউব থাকবে। টিউব ভরা থাকবে কার্বন-ডাই-অক্সাউড গ্যাসে।

যখন কোনো পেট্রল বোমা একটি গাড়ির জানালার কাচে আঘাত করবে সেটা ভেঙ্গে আগুন ধরে গেলে আগুনের তাপে জানালার চারপাশে ঘিরে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাউড গ্যাস পুর্ণ টিউবটি গলে গিয়ে গ্যাস বের করে দিবে। এই গ্যাসের প্রভাবে দ্রুত আগুন নিভে যাবে।

এতে করে আর আগুন ছড়িয়ে পড়ার কোনো আশঙ্কা থাকবে না। এর ফলে হতাহাতের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। অর্থ্যাৎ একটি সয়ংক্রিয় ফায়ার এক্সটিংগুইসারের মতো কাজ করবে এটি।

এই অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে সে আরো যে দুটি প্রকল্প দিয়েছিলো তার শিক্ষকের কাছে। তার একটি ল্যাজটেক ফুয়েল তৈরি। এই পদ্ধতিতে প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর গ্রীণ হাউজ গ্যাসকে শোষণ করে জ্বালানি তেল তৈরি করা এবং অপরটি হলো বায়ু গাছ প্রকল্প।

এই প্রকল্পে গাছে টারবাইন স্থাপনের মাধ্যমে বাতাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরি করা।

রুপমের প্রকল্প সর্ম্পকে তার শিক্ষক মনোরঞ্জন ধর বলেন, তিনটি প্রকল্প নিয়ে এলেও ফিকিক্স অলিম্পিয়াডে যে কোনো একটি নিয়ে অংশ নিতে হবে। সে কারণে আমি সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রুপমকে ‘সেফ ফ্রম পেট্রল বোমা’ প্রকল্প নিয়ে অংশ নিতে বলেছি।

এতে যদি একটি মানুষকেও এই পেট্রলরুপী দানব বোমার হাত থেকে রক্ষা করা যায় বা পেট্রল বোমার ভয়াবহতার উপর মানুষের দৃষ্টি ফেরানো যায় সেটাই হবে বড় পাওয়া।

রুপমের পুরো নাম ইবাদুল্লাহ রুপম। দুই ভাই এবং এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুলে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে।
একই প্রজেক্ট নিয়ে সম্প্রতি ঢাকা রেসিডেন্সিশিয়াল মডেল কলেজের সাইন্স ক্লাব আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় হাজির হয়ে দ্বিতীয় সেরার মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছে সে।

তার প্রকল্প দেখে প্রশংসা করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রো-ভিসি নাসরিন সুলতানা, অধ্যাপক খুরশিদ কবীর, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর নাজনিন সুলতানা এবং লেখক আনিসুল হকসহ আরো অনেক গুণিজন। 

এর আগেও বিভিন্ন উৎসবে তার প্রকল্প নিয়ে অংশ নিয়েছে রুপম। গত বছরের ডিসেম্বরে নটরডেম কলেজে আয়োজিত একটি উৎসবে ম্যাস কন্ট্রোল ব্রিজের আইডিয়া দিয়ে তৃতীয় হয়েছিলো সে।

ব্রিজে তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটি ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত মালবাহী গাড়িকে সয়ংক্রিয়ভাবে আটকে দেবে যন্ত্রটি। যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয় বিধায় টোল আদায়ে দুর্নীতির কোনো সুযোগ থাকবে না।

রুপমের বাবা মো. ইউনুস আলী বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত। মা জেসমিন নাহার একজন গৃহিণী। রুপমের গ্রামের বাড়ি বরিশাল। সেখান থেকেই পড়াশোনা করে পঞ্চম শ্রেনীতে বৃত্তি পায় সে। তার ডেন্টাল কলেজ পড়ুয়া বড় বোনের বন্ধুদের বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্প তৈরি দেখি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশােনায় আগ্রহী হয় রুপম।

তার ইচ্ছে বড় হয়ে বাংলাদেশে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে গবেষণা করার। রুপম অবসর সময়ে বই পড়তে ভালোবাসে। বিজ্ঞানী সত্যেন বসু এবং আইনস্টাইনকে ভীষন পছন্দ তার।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন