টাংগাস্কার সেই রহস্যময় বিস্ফোরণ

১৯০৮ সালের ৩০ জুন। রাশিয়ান সময় সকাল ০৭:১৪ মিনিট। রাশিয়ার পাডকেমেনোইয়া টাংগাস্কা (Podkamennaya Tunguska) নদীর তীরে অবস্থিত একটি জঙ্গলে শক্তিশালী বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়। যা বর্তমানে ক্রাসনোইয়ারস ক্রাই (Krasnoyarsk Krai) নামে পরিচিত।

অনেক বড় উল্কাপাত অথবা ধূমকেতুর বিচ্ছিন্ন অংশ বায়ুমণ্ডলে বিস্ফোরিত হওয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়। এর ফলে বিকট ও ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। মাটি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উপরে থাকা অবস্থায় বস্তুটি বিস্ফোরিত হয়।

এটা কোন সাধারণ বিস্ফোরণ ছিল না। মাটি থেকে অনেক উপরে হলেও বিস্ফোরণের শব্দের মাত্রা এত বেশি ছিল যে, শত শত কিলোমিটার দূর থেকেও এর শব্দ শোনা যায়। এর কারন পৃথিবীর দিকে পতিত যে কোন বস্তু অতিরিক্ত গতিতে আমাদের বায়ুমন্ডলের মধ্যে প্রবেশের সাথে সাথে প্রচন্ড ঘর্ষনের সৃষ্টি হয়। এই ঘর্ষনের ফলে এটা উত্তপ্ত হতে হতে এক সময় বিস্ফোরিত হয়।

রাশিয়ার এই ঘটনাটি টাংগাস্কার বিস্ফোরণ বা Tunguska Event নামেও পরিচিত। আর এ যাবত পর্যন্ত এটাই পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে বেশি শব্দ। আমেরিকা কর্তৃক জাপানের হিরোসিমায় ফেলা আনবিক বোমার চেয়েও এই বিস্ফোরণের তীব্রতা ১০০০ গুন বেশি ছিল।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উল্কা বা ধূমকেতুটির আয়তন ছিল প্রায় ২০০ফুট x ৬০০ফুট। এই বিষ্ফোরনের ফলে ওই জঙ্গলের প্রায় ২১৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা বিশাল বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়।

ধারনা করা হয় এটা যদি কোনক্রমে কোন শহর বা লােকালয়ের উপরে পড়ত তাহলে মানবজাতির উপর ভয়াবহ ধ্বংসলীলা ঘটে যেত। আবার যদি এটি বায়ুমন্ডলে বিস্ফোরিত না হয়ে কোন ক্রমে মাটিতে আঘাত হানতো অথবা সমুদ্র পৃস্ঠে আঘাত হানতো তাহলে প্রলয়ঙ্কারী জলোচ্ছ্বাস বা সুনামিও বয়ে যেত পারতো।

গত একশ বছরে এই ঘটনা নিয়ে রাশিয়াতে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। বিস্ফোরণের প্রায় ১৩ বছর পরে এর ওপরে কাজ শুরু করেন রাশিয়ান বিজ্ঞানী লিওনিদ কুলিক (Leonid Kulik)। তিনি তখন ওই স্থানে প্রচুর উল্কার ধ্বংসাবশেষ দেখেছিলেন। বিজ্ঞানীরা উক্ত উল্কাপিন্ডটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার জন্য প্রচুর গবেষণা চালিয়েছেন।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ১০০ বছর আগে তৎকালীন রাশিয়ান সরকার বিষয়টাতে তেমন একটা আগ্রহ দেখায় নি। পরবর্তীকালে দেখা যায় এই বিস্ফোরণ পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণের মতই ছিল।

ধারনা করা হয় গােপনে জার্মানি, আমেরিকা এবং রাশিয়া তিন দেশের বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে প্রচুর গবেষণা চালিয়েছেন। কিন্তু কেউই বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করেনি। ফলে এর অনেক কিছু এখনও রহস্যাবৃত রয়ে গেছে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন