পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিরবচ্ছিন্ন জলপ্রপাত হিসেবে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে জায়গা করে নিয়েছে ভেনেজুয়েলার অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত। স্প্যানিশ ভাষায় একে বলা হয় ‘সালতো অ্যাঞ্জেল’ এবং পিমন ভাষায় ডাকা হয় ‘কেরেপাকুপাই’ নামে। যার অর্থ ‘গভীরতম স্থানের জলপ্রপাত’।
এই জলপ্রপাতের উচ্চতা ৯৭৯ মিটার (৩২১২ ফুট) এবং গভীরতা ৮০৭ মিটার (২৬৪৮ ফুট)।
ভেনেজুয়েলার কানাইমা ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত আওইয়ানতেপুই পর্বতের গা ঘেঁষে গড়িয়ে পড়ছে এই জলপ্রপাতের পানি। ওরিনোকো নদীর (একে কেরেপ বা কেরেপাকুপাই নদী নামেও ডাকা হয়) প্রবাহ থেকে উৎপত্তি হয়েছে এই জলপ্রপাতের আর এ প্রবাহ গিয়ে মিশেছে চুরুন নদীতে।
অ্যাঞ্জেল ফলসের আবিষ্কারের ইতিহাসটা বেশ মজার। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জিমি অ্যাঞ্জেল নামে একজন মার্কিন বিমানচালক ভেনেজুয়েলায় গিয়েছেন সোনার খনি খুঁজতে। রুটিন মাফিক প্লেনে করে ভেনেজুয়েলার আওইয়ানতেপুই এলাকাতে ঘুরছিলেন। তিনি হঠাৎ দেখতে পান বিশাল এক জলপ্রপাত। জিমি অ্যাঞ্জেল তার বিমানটি জলপ্রপাতের উপরের পাহাড়ে ল্যান্ড করাতে চেয়েছিলেন। ঠিক তখনি বাধে বিপত্তি। কর্দমাক্ত জায়গা হওয়ায় বিমানের চাকা বিশেষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ফলে তারা আর সেখান থেকে বিমানটি উড়াতে সক্ষম হননি। অ্যাঞ্জেল এবং তার স্ত্রী ম্যারি সহ তিনজন সঙ্গী তখন পায়ে হেটে রওনা দিতে বাধ্য হন।
দুর্গম জঙ্গল পার হয়ে লোকালয়ে পৌছাতে তাদের সময় লাগে প্রায় ১১ দিন। জিমি অ্যাঞ্জেলের দু:সাহসিক অভিযানের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর তার নাম অনুসারে জলপ্রপাতটির নাম হয় অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত।
স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে এই জলপ্রপাতটি কেরেপাকুপাই নামেই পরিচিত। ভেনেজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শেভেজ জলপ্রপাতটির নাম পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নাম পরিবর্তনের ম্যান্ডেট না করলেও ভেনেজুয়েলার প্রতিটি নাগরিককে জলপ্রপাতটিকে কেরেপাকুপাই নামে ডাকতে আহব্বান করেন।
ভেনিজুয়েলায় ট্যুরিস্ট আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত। তবে এটি দুর্গম জায়গায় অবস্থিত বলে এখানে যাওয়া অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। পুয়ের্তো ওয়ার্দাজ অথবা সিউদাদ বলিভার বিমানবন্দর থেকে প্রথমে পৌছাতে হবে কানাইমা ক্যাম্পে। সেখানে থেক নদীপথে যেতে হবে জলপ্রপাতটির কাছে। জুন থেকে ডিসেম্বর মাসে নদীতে নৌকা চলার মতো পানি থাকে। এটিই এই জলপ্রপাত দেখার সবচেয়ে ভাল সময়। ডিসেম্বর থেকে জুন মাস নদীতে পানি থাকে না।
হলিউডের বেশ কিছু চলচিত্রের চিত্রায়ন হয়েছে এই জলপ্রপাতটিতে। ডিজনির এ্যানিমেটেড চালচিত্র ‘আপ’ সহ ‘ডায়নোসর’ এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পয়েন্ট ব্রেক’ নামের একটা চলচিত্রের দৃশ্যায়ন হয়েছে জলপ্রপাতটিতে।