বৈচিত্র্যময় কিছু জনগোষ্ঠীর কথাঃ জুলু সম্প্রদায়

আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো আফ্রিকার জুলুদের কথা।

আফ্রিকার জুলু সম্প্রদায়ের কথা সর্বপ্রথম জেনেছি হ্যানরি রাইডার হ্যাগার্ডের বই পড়ে। টানটান উত্তেজনায় ভরা তার অ্যাডভেঞ্চার গল্পগুলো থেকেই জানা যায় দুঃসাহসী জুলুদের জীবন আর ইতিহাস সম্পর্কে।

জুলুরা আসলে যোদ্ধা জাতি। বর্শা আর মাচেতে নিয়ে যুদ্ধ করায় তাদের জুড়ি নেই। তবে সেসব অনেক আগের কথা। আফ্রিকার অন্ধকারাচ্ছন্ন বর্বর অবস্থা থেকে তারা বের হয়ে এসেছে। যুদ্ধ-বিগ্রহ বাদ দিয়ে এখন আধুনিক জীবনযাপন করছে। আফ্রিকার বনজঙ্গল থেকে বের হয়ে এসে অনেকেই শহরে বসবাস করছে। তবে বনে এবং শহরে বসবাস করা জুলুদের মধ্যে যোগাযোগ খুবই দৃঢ়।

জুলুরা দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু নাটাল প্রদেশে বাস করে। তাদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। তারা জুলু ভাষায় কথা বলে, তবে বর্তমানে ইংরেজিও ব্যবহার করে তারা। জুলুদের মধ্যেই অধিকাংশই খ্রিস্টান (রোমান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট)। তবে আধা-খ্রিস্টান ও প্রাচীন প্রকৃতি পূজারী কিছু জুলুও রয়েছে।

বহুকাল ধরে আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে জুলু জাতিগোষ্ঠী সবচাইতে বেশি পরিচিত। শক্তিশালী এবং দুঃসাহসী যোদ্ধা হবার কারণে আফ্রিকার অন্যান্য গোত্রগুলো জুলুদের খুব ভয় পেত।

জুলুরা মূলত উনগুনি জাতির উত্তরপুরুষ। যদিও জুলুদের ইতিহাস পাওয়া যায় চতুর্দশ শতকেই কিন্তু তাদের উত্থান হয় অনেক পড়ে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে প্রিন্স শাকা উনগুনি জাতি থেকে জুলু সম্প্রদায়ের পত্তন ঘটায়। কিন্তু পরবর্তীতে ব্রিটিশসহ আরও কয়েকটি শ্বেতাঙ্গ জাতি তাদের স্বাধীনতা হরণ করে। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতিতে তারা অংশ নিলেও খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না।

জুলুরা নাচ এবং সঙ্গীতেও বেশ ভালো। তাদের একটি সাধারণ বিশ্বাস হল গানের মাধ্যমে আবেগ ও অনুভূতির যে বহিঃপ্রকাশ এবং আদান প্রদান ঘটানো সম্ভব তা কথোপকথন বা এরকম অন্য কিছুর দ্বারা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই জুলু সঙ্গীতে সুর, তাল এবং লয়ের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে, বিশেষত লয়ের মূর্ছনা।

জুলুদের নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। ‘জুলু’ শিরোনামে ১৯৬৪ এবং ২০১৩ সাল দুইটি পৃথক সিনেমা নির্মাণ করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন