ইগলু! শব্দটা শুনলেই আমাদের মাথায় আসে আইসক্রিম এর কথা। তবে আমি যে ইগলুর কথা বলছি তা আইসক্রিম নয়। বলছি বরফের দেশের বাড়ির কথা। ইগলু হল বরফ খণ্ড দিয়ে তৈরি গম্বুজ আকৃতির ছোট ঘর। পূর্ব সাইবেরিয়া, আলাস্কা, কানাডা এবং গ্রীনল্যান্ড এর মতো শীতপ্রধান অঞ্চলে মানুষ বসবাসের জন্য ইগলু তৈরি করে থাকে। বছরের অধিকাংশ সময় বরফে ঢাকা থাকা এসব অঞ্চলে উষ্ণ এবং শুষ্ক থাকার জন্য ঐখানকার অধিবাসীরা এসব ঘর তৈরি করে থাকে। তুষারের তৈরি এই ঘরগুলোর ভেতরের তাপমাত্রা বাইরের চেয়ে বেশী থাকে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বরফই ইগলু বাসিন্দাদের শুষ্ক ও উষ্ণ রাখে। কিন্তু কিভাবে! এর প্রধান কারণ হচ্ছে, ইগলুতে বরফ তাপ অপরিবাহী (Insulator) হিসেবে কাজ করে। বরফ খন্ড তাপ ও উষ্ণতা অপরিবাহী বলে বরফ খণ্ডক দিয়ে তৈরি বাড়ি ইগলুতে তাপ বাইরে বা বাইরের তাপ ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না।
এছাড়া, ইগলুর গম্বুজ আকৃতির গঠন ঘরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। ইগলুর গম্বুজ আকারের গঠনকে মূলত তিনটি অংশে ভাগ করা হয়। উপরের অংশে মানুষ অবস্থান করে বা ঘুমায়, মাঝখানের অংশে আগুন জ্বালানো হয় এবং নিচের দিকের ঠান্ডা অংশে পানি জমা হয়।
ইগলুর ভিতরে পরিচলন পদ্ধতিতে বাতাস প্রবাহিত হয়। তুলনামূলক গরম অণুসমূহ বাতাসের ঘনত্ব কমিয়ে ফেলে। এর ফলে গরম বাতাস ইগলুর উপরের অংশে উঠে আসে ও ঠাণ্ডা বাতাস নিচের অংশে জমা হয়।
ইগলুর প্রবেশদ্বার নিচের অংশে অবস্থিত। প্রবেশদ্বারটি এমন ভাবে তৈরি করা হয় যেন এর একটি প্রান্ত বর্গাকার ও বাকি তিনটি অংশ অনেকটা গোলাকার হয়। ফলে অধিক পরিমান ঠাণ্ডা বাতাস ইগলুর ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। আগুন জ্বালানোর মাধ্যমে ইগলুর ভিতরে তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়ানো যেতে পারে। আর ইগলুর উপরের ছাদে একটি ছিদ্র থাকে যা মূলত Ventilation Hole হিসেবে কাজ করে। তাই, বাইরের তাপমাত্রা -৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হলেও ইগলুর ভিতরে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর মতো হয়। এভাবে, বরফ এলাকার মানুষ ইগলুর মাধ্যমে নিজেদেরকে শীতের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে।