বাড়ছে আলো দূষণ

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে চোখে পড়ে পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ কিংবা পরিবেশ দূষণ। কিন্তু দিন দিন যে আলো দূষণ বেড়েই যাচ্ছে তা কি আমাদের জানা আছে?

আলো দূষণ হ্যাঁ হয়তো কথাটা শুনলেই চমকে উঠবেন আপনি , কিন্তু হ্যাঁ আমাদের আশেপাশে প্রতিনিয়তই ঘটছে এই দূষণ।

দিনে সূর্যের আলো এবং রাতে চাঁদের আলোর পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক কাজ সম্পাদন করতে প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত ( বৈদ্যুতিক, কেরোসিন ও ডিজেল চালিত)আলো। এই আলো নিশাচর প্রাণীর চলাচল ও খাদ্য সংগ্রহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে করে আর এইভাবেই সূচনা হয় আলো দূষণের। কিংবা অন্যভাবেও বলতে গেলে, রাতের বেলায় মানব সৃষ্ট যে আলোর কারণে নিশাচর প্রাণীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় তাকে আলো দূষণ বলে।

তবে অন্যান্য দূষণের মতো আলো দূষণের প্রধান কারণ কিন্তু মানুষ। এমনিতে বাড়তি জনসংখ্যার কারণে গাছ কেটে আমরা দালান তৈরি করছি আর পার্ক কিংবা রাস্তার পাশে যে সকল গাছ আছে তাতে তেমন পশু-পাখি বসবাস করে না। তারপর, রাতব্যাপী পার্কে সোডিয়াম লাইট জ্বালানোর কারণে নিশাচর পাখি ও প্রাণীরা ঠিক মতো জীবন ধারণ করতে পারছে না। নিশাচর পাখি ও প্রাণী ছাড়াও, অন্যান্য প্রাণীদের বিপদও কম না কারণ রাতের বেলা তাদের আরাম-আয়েশ ও নিদ্রার জন্য দরকার অন্ধকার কিন্তু মানব জাতির কল্যাণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে এই সমস্যা শুধু শহরে না গ্রামেও। কারণ এখন গ্রামে ও আলো ব্যবহারের প্রবণতাও  বাড়ছে।

আপাত দৃষ্টি তে মনে হবে এই আলো দূষণের তেমন কোন প্রভাব নেই, কিন্তু আসলেই কি তা?

মোটেও তা নয়। আলো দূষণের কারণে জীববৈচিত্র্য আজ বিপন্ন হতে চলেছে। নিশাচর প্রাণী ও কীটপতঙ্গরা খাদ্য সংকটে পড়েছে। যে সকল প্রাণীরা আলোতে চলাচল করতে পারে না, তারা আলো দূষণের কারণে অন্ধকারে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারচ্ছে না। শুধু তাই নয় খাবার সংগ্রহে চরম বিপাকে পড়তে হয় এই সকল প্রাণীদের। যেমন বাদুড়, লক্ষ্মী পেঁচা, হুতুমপেঁচা, শেয়াল, বন বিড়াল, নেউল ইত্যাদি। শুধু মাত্র কৃত্রিমভাবে পরিবেশকে আলোকিত করার জন্য আমরা এইভাবে আলো দূষণ করছি এ ফলে যেমন নিশাচর প্রাণী ও কীটপতঙ্গের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি আমরা রাতের আকাশের স্বাভাবিক আলোর উজ্জ্বলতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

আলো দূষণের ফলে আলো তার উৎস থেকে ২০০ মাইল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে।

জোনাকি পোকাকে আমরা সবাই চিনি। অদ্ভুত এই পোকা তার দেহের লুজিফেরাস এনজাইমের সাহায্যে আলো উৎপন্ন করে। তবে দিন দিন এই জোনাকি পোকার বিলুপ্তির পিছনে রয়েছে আলো দূষণের ব্যাপক প্রভাব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই আলো দূষণের উপর গবেষণা চলছে।

সম্প্রতি জার্মানির কোলন শহরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী হারাল্ড বার্ডেনহাগেন এই বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, ‘‘ অনেক ক্ষেত্রেই রাতের আলোর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে৷ একদিকে মানুষের স্বাস্থ্য, অন্যদিকে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়৷ এছাড়া, রাতের কৃত্রিম আলোর ছটা আকাশের গ্রহ-তারাকেও ম্লান করে দেয়৷ ''

হারাল্ড বার্ডেনহাগেন বলেন, ‘‘ মানুষের স্বাস্থ্যের উপরেও এর প্রভাব পড়ে, কারণ বডি-ক্লক ওলটপালট হয়ে যায়৷ রাতে কৃত্রিম আলোর কারণে স্তন ও প্রস্ট্রেট ক্যানসারের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়৷ ''

তবে আশার কথা এই যে, এই জার্মান বিজ্ঞানী তার গবেষণার মাধ্যমে এর সমাধান খুঁজছেন৷ তারা এমন একটি বাল্ব তৈরি করেছে যার শুধু নীচ দিয়ে আলো বের হয় , আলো চারিদিকে ছড়ায় না ফলে আলো দূষণ হয় না।

হারাল্ডবার্ডেনহাগেন এই বাল্ব সম্পর্কে বলেন, ‘‘ এটা একটা আদর্শ আলো ৷ এখানে বাল্বের নীচটা ফ্ল্যাট৷ শুধু নীচে দিয়েই আলো বেরোয়৷ ''

তবে প্রয়োজন না থাকলে বাতি নিভিয়ে রাখাই ভালো৷ গবেষকরা আলোর রং নিয়েও পরীক্ষা করছেন৷ কারণ মানুষের ‘ বায়োলজিকাল ক্লক ' এর উপর তার একটা প্রভাব রয়েছে৷

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন