বিশ্বকাপের দল পরিচিতি : বাংলাদেশ

দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১১তম আসর। ক্রিকেট মহাযজ্ঞের এ আসর মাঠে গড়ানোর আর খুব বেশি দিন বাকি নেই। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ভেন্যুতে গড়াচ্ছে বিশ্ব সেরা নির্ধারণের লড়াই। এবার এতে অংশ নিচ্ছে ১৪টি দল। বিশ্বকাপের এই দলগুলোর ধারাবাহিক পরিচিতির ৩য় পর্বে আজ থাকছে বাংলাদেশ

আকরাম খানের নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটের অগ্রযাত্রার শুরু হয়। এরপর আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অধিনায়কত্বে ইংল্যান্ডে আয়োজিত ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ৯২-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের মত পরাশক্তিকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে বাংলাদেশ। উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলটের নেতৃত্বে ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়া আর কানাডার মত দুর্বল দলের সাথে পরাজয়ের লজ্জা নিয়ে দেশে ফিরতে হয়।

তবে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ অর্জন। নতুন দল নিয়ে হাবিবুল বাশার প্রথম রাউন্ডে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত এবং সুপার এইটে দক্ষিন আফ্রিকার মত শক্তিশালী দলকে পরজিত করার গৌরব অর্জন করেন।

২০১১ এর যৌথ আয়োজক হিসেবে মাঠে নেমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়সহ ৩টি জয় পেলেও প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়ে টাইগাররা। এ পর্যন্ত টাইগাররা ৪টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে মোট খেলেছে ২৬টি ম্যাচ, জিতেছে ৮টি, হেরেছে ১৭টি এবং ১ টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।

যদিও গেল বছরটা (২০১৪) মোটেও ভাল যায় নি আইসিসি ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের। গত বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার কাছে নিজেদের মাঠে হোয়াইট ওয়াশ হয় বাংলাদেশ। চাপ কমাতে মুশফিকুর রহিমকে সরিয়ে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক করা হয় দেশসেরা পেসার মাশরাফিকে।

তবে বছরের শেষদিকে নিজেদের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশিদের রেকর্ড গড়ার মিছিলে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিশকাপকে ঘিরে। প্রথমবারের মতো তিন টেস্টে সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ, ওয়ানডে সিরিজেও অব্যাহত থাকে সে ধারা। টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে সিরিজের সাফল্য স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিশ্বকাপে ভালো করার।

এর আগেও দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সফর করেছে টাইগাররা। তবে বাউন্সি উইকেটে কোন সাফল্য নেই তাদের। আগের তুলনায় এবারের বাংলাদেশ দলের সাকিব-তামিমরা বেশ অভিজ্ঞ।

ওপেনার তামিম এবং এনামুলের জন্য এই কন্ডিশন অপরিচিত নয়। কারন অস্ট্রেলিয়ায় ২০১২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন বাংলাদেশের এনামুল হক।

তামিমও কিছুদিন আগে নিউজিলান্ডের ঘরোয়া লীগ খেলেছেন। আর সাকিব বিগ ব্যাশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারলে এবারের বিশ্বকাপ সুখকরই হবে। মুমিনুল, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, সাব্বির, সৌম্য সবাই ফর্মে রয়েছেন। দীর্ঘদিন অফ ফর্মে থাকা নাসিরও ফর্মে ফিরেছেন।   

বরাবরই স্পিন নির্ভর বাংলাদেশ দলে ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের পাশাপাশি অভিষেক ম্যাচেই হ্যাট্রিকের কীর্তি গড়া তাইজুল ইসলাম এবং আরাফাত সানি। তারা তিনজনই বাঁহাতি স্পিনার।

এছাড়া পার্টটাইম অফস্পিনার মাহমুদুল্লাহর সাথে নাসির, লেগস্পিনার সাব্বির, মুমিনুলরাও রয়েছেন।

কিন্তু বাউন্সি পিচে স্পিনের উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না। এজন্য দরকার ভাল একটা পেস অ্যাটাক। ক্যারিয়ারে ইনজুরির কারণে সাতবার চিকিৎসকদের ছুরির নিচে যাওয়া অভিজ্ঞ পেসার মাশরাফির সঙ্গে দলে আছেন রুবেল, আল আমিন, তাসকিন, সৌম্যদের মত তরুণ উদীয়মান পেসাররা।

গ্রুপ “এ” তে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড,ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, স্কটল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। তাদের প্রথম ম্যাচ ক্যানবেরার মানুকা ওভালে ১৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের বিপক্ষে। টাইগারদের কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে ও তার সহযোগীরা ভরসা রেখেছেন ক্রিকেটারদের উপর।

এক নজরে বাংলাদেশ দল

বিশ্বকাপে অংশগ্রহন: ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১

সেরা সাফল্য: ২০০৭ সালে ২য় রাউন্ড

কোচ: চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে (শ্রী লঙ্কা)

১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ স্কোয়াড: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম(উইকেট রক্ষক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, রুবেল হোসেন, আরাফাত সানি ও তাইজুল ইসলাম।

স্ট্যান্ডবাই: শফিউল ইসলাম

যারা নজর কাড়তে পারেন: সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম

বিশ্বকাপ মিস করছেন এমন তারকা: আব্দুর রাজ্জাক, ইমরুল কায়েস ।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন