বুকের কাঁপন = নার্ভাস নাইন্টিস

শুরু হয়ে গেছে ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেট, আর এই জমকালো খেলার আসর নিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে উন্মাদনার শেষ নেই। যার যার প্রিয় দল নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছেই। এর পাশাপাশি আমরা দিয়ে যাচ্ছি ক্রিকেট সম্পর্কীয় কিছু মজার সাধারণ তথ্য।

২২ নভেম্বর ২০১১, ভারতের মুম্বাই শহরে চলছে ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ক্রিকেট। ব্যাট করছেন শচীন, তাঁর রানের কোঠা ৯৪-তে এসে দাঁড়িয়েছে। সেঞ্চুরি করতে যাচ্ছেন, কিন্তু এটা শুধু এক ম্যাচের সেঞ্চুরি না, এই সেঞ্চুরি পেলে তাঁর সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি পূর্ণ হবে। অর্থাৎ, ১০০টি সেঞ্চুরি করতে যাচ্ছেন লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার। এমন সময়ে আনাড়ির মতো বলটা তুলে দিলেন রবি রামপালের হাতে, ৯৪ রানেই বিদায় নিলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট থেকে বিদায় নেবার আগে তাঁর সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি ঠিকই পূরণ হয়েছিল।

শুধু শচীন নন, রানের কোঠা ৯০-এর ঘরে এসে ঠেকলেই প্রায় সব ব্যাটসম্যানই সাহস হারিয়ে ফেলেন। আনাড়ির মতো খেলতে থাকেন, যেন এই মাত্র ক্রিকেট খেলা শিখে এলেন।

এজন্যই ৯০-এর ঘরে রান এলে একে নার্ভাস নাইন্টিস (Nervous Nineties) বলা হয়। এর মূল কারণ হলো, ক্রিকেট এমনিতেই মানসিক চাপের একটি খেলা, তাঁর ওপর কোন ব্যাটসম্যান ১০০ রান পূর্ণ করা মানে তাঁর জন্য বিশাল এক মাইলফলক। তাই ৯০-এর পরে রান পৌঁছালে ১০০ রান হবে, নাকি তার আগেই আউট, এই চিন্তাতেই ব্যাটসম্যানরা নার্ভাস হয়ে পড়েন। দেখা যায়, বেশীরভাগ ব্যাটসম্যানই ৯০ রান হলে আর চার-ছক্কা পেটান না, বরং টুকিয়ে টুকিয়ে কোনোমতে ১০০ করার চেষ্টা করেন। শুরুতেই শচীনের কথা একবার বলেছি, সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার রেকর্ড রয়েছে তাঁর, কিন্তু টেস্ট ও একদিনের ম্যাচ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশীবার ৯০-এর ঘরে এসে আউট হওয়ার রেকর্ড-ও তাঁরই, মোট ২৮ বার!

এতদিন এই নার্ভাস নাইন্টিস একটা বানানো ব্যাপার হয়ে থাকলেও এখন গবেষকেরা প্রমান করেছেন যে নার্ভাস নাইন্টিস বলে ক্রিকেটের এই ঘটনা সত্যিই বিদ্যমান। QUT School of Economics-এর প্রফেসর লিওনেল পেজ বলেন, কোন ব্যাটসম্যান যদি সেঞ্চুরি করেন, কিন্তু তাঁর স্ট্রাইক রেট যদি তেমন ভালো না থাকে, তাহলে এটা দলের জন্য তেমন উপকারে আসে না, বিশেষ করে একদিনের ম্যাচে এমনটা হয়। তাই ম্যাচের শেষের দিকে, যখন এমনিতেই ব্যাটসম্যানদের ওপর দ্রুত রান করার চাপ থাকে, তখন কোন ব্যাটসম্যান তাঁর নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করার জন্য যদি ধীরে ধীরে রান করেন, তবে তা দলের জন্য ক্ষতিকর। তাই ব্যাটসম্যানের ওপর এই দ্রুত রান করার চাপ, আবার নিজের সেঞ্চুরি করার চিন্তা, সবকিছু মিলিয়ে তাঁরা নার্ভাস হয়ে পড়েন, এবং অনেক ক্ষেত্রেই না বুঝে শট মারার চেষ্টা করে আউট হয়ে যান।

এছাড়া, জীববিজ্ঞানে একটি Term আছে যার নাম Paralysis By Analysis। এর দ্বারা বুঝানো হয় যখন কেউ কোন মাইলফলকের কাছাকাছি পোঁছে যায় তখন তার মস্তিষ্কের স্নায়ুতে তার আশপাশের সবকিছুর উপর একটা Control চলে আসে। তাই, মাইলফলকের কাছে জলদি পোঁছানোর জন্য মানুষ ব্যাকুল হয়ে যায়। আর চটজলদি পোঁছানোর মানসিকতা তার বিপদ ডেকে আনে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই মুহূর্তে মাথা ঠাণ্ডা রাখা বড় জরুরী।    

একদিনের ম্যাচে সবচেয়ে বেশীবার ৯০-এ এসে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানরাঃ 

১. শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)-১৮ বার

২. গ্রান্ট ফ্লাওয়ার (জিম্বাবুয়ে)-৯ বার

৩. নাথান অ্যাস্টল (নিউজিল্যান্ড)-৯ বার

৪. অরবিন্দ ডি সিলভা (শ্রীলঙ্কা)-৯ বার 

৫. জ্যাক ক্যালিস (দক্ষিণ আফ্রিকা)-৮ বার

৬. মোহাম্মাদ আজহারউদ্দীন (ভারত)-৭বার

৭. মারটিন ক্রো (নিউজিল্যান্ড)-৬ বার

৮. ডিন জোন্স (অস্ত্রেলিয়া)-৬ বার

৯. মাইকেল ক্লার্ক (অস্ট্রেলিয়া)-৬ বার

১০. রিচি রিচার্ডসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)-৬ বার।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন