বৈদ্যুতিক কোষ

 

তোমার খেলনাগুলো চলতে চলতে হয়তো হঠাৎ কখনো থেমে যায়, বা ভিডিও গেমসটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, টিভির রিমোটটা হয়তো কখনো কাজ করে না বলে কয়েকবার আছাড় মারতে হয়। খেলনা চালাতে বা টিভির রিমোট, মোবাইল চালাতে বা প্লে-স্টেশন, যেকোনো প্রযুক্তিগত জিনিস চালাতে দরকার হয় শক্তির, আর এই শক্তি আসে ব্যাটারি থেকে।

ব্যাটারি গঠিত হয় একাধিক বৈদ্যুতিক কোষ থেকে। আজ আমরা এই বৈদ্যুতিক কোষের গঠনপ্রক্রিয়া সম্বন্ধে জানবো। 

বৈদ্যুতিক কোষ হচ্ছে এমন এক জিনিস, যা রাসায়নিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তরিত করে। প্রতিটি বৈদ্যুতিক কোষের দুটি প্রান্ত থাকে, একটি হলো পজিটিভ বা ক্যাথোড ( Cathode), এবং অন্যটি নেগেটিভ বা অ্যানোড ( Anode )। বৈদ্যুতিক কোষে যে রাসায়নিক পদার্থগুলো থাকে, তা সাধারণ কোনো রাসায়নিক পদার্থ নয়। যেসব পদার্থ বিক্রিয়া করে শক্তি উৎপাদন করতে পারবে, শুধুমাত্র সেই পদার্থগুলো দিয়েই বৈদ্যুতিক কোষ তৈরি করা হয়। সাধারণত বৈদ্যুতিক কোষে জিঙ্ক-কার্বন, জিঙ্ক-ক্লোরাইড, লিথিয়াম-কার্বন, জিঙ্ক-সিলভার প্রভৃতি পদার্থের বিক্রিয়া ঘটানো হয়।

বৈদ্যুতিক কোষ সর্বপ্রথম ১৮০০ সালে আবিস্কার করেন আলেকসান্দ্রো ভোল্টা। তিনি তাঁর কোষে  জিঙ্ক ও কপার ব্যবহার করেন। কিন্তু তিনি প্রথমে আশা করেননি যে এ কোষ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। যখন তিনি দেখলেন কোষ থেকে তাঁর আশার চেয়েও বেশী বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে তা দেখে তিনি অবাক হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ১৮৩৪ সালে বৈদ্যুতিক কোষকে আরও উন্নতরুপ প্রদান করেন মাইকেল ফ্যারাডে, এবং তাঁকেই আধুনিক বৈদ্যুতিক কোষের জনকরুপে স্বীকার করা হয়।

আসলে বৈদ্যুতিক কোষের গঠনপ্রক্রিয়া বেশ জটিল, যা হয়তো পুরোপুরি এখনই তোমরা বুঝতে পারবে না। তবুও যতটুকু সহজভাবে বোঝা যায়, ততটুকু আমরা জানার চেষ্টা করি। বৈদ্যুতিক কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয় আয়ন, যারা বিদ্যুৎ উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা রাখে। আয়ন হলো বৈদ্যুতিক চার্জ সম্বলিত অতি ক্ষুদ্র কণা, বিদ্যুৎ সৃষ্টি হওয়ার জন্য আয়নগুলো কোষের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে স্থানান্তরিত হতে হয়, আর এই কাজটা করে ইলেক্ট্রোলাইট ( Electrolyte ), যার ফলে কোষে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।                                  ইলেক্ট্রোলাইট (Electrolyte ) হলো এমন এক পদার্থ যা কোষের আয়নগুলোকে স্থানান্তরিত হতে সাহায্য করে। বৈদ্যুতিক কোষে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী পদার্থসমূহের মাঝে ইলেক্ট্রোলাইট স্থাপন করা হয়। কিছু এসিড, এবং প্রায় সব লবণজাতীয় পদার্থ ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে কাজ করতে পারে।

বৈদ্যুতিক কোষ অনেক রকমের হতে পারে, গ্যালভানিক ( Galvanic ), ইলেক্ট্রোলাইটিক, ভোল্টাইক ইত্যাদি। 

তবে সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করা হয় শুস্ক কোষ ও এবং জলীয় কোষ। জলীয় কোষে ইলেক্ট্রোলাইটটি দ্রবণে পরিণত থাকে, আর শুস্ক কোষে থাকে তার বিপরীত, অর্থাৎ শুস্ক বা কিছুটা পেস্টের মতো ইলেক্ট্রোলাইট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী পদার্থগুলোর মাঝে থেকে আয়ন স্থানান্তর করে।

কয়েকটি বৈদ্যুতিক কোষ একত্রিত করে ব্যাটারি তৈরি করা হয়, ব্যাটারি মূলত দুই প্রকার। মুখ্য ও গৌণ। 

যে ব্যাটারিগুলোর শক্তি একবার শেষ হয়ে গেলে আর ব্যবহার করা যায়না, তাদের মুখ্য বা প্রাথমিক ব্যাটারি  বলে। তোমাদের বেশীরভাগ খেলনায় যে পেন্সিল ব্যাটারি বলে পরিচিত ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো সব মুখ্য ব্যাটারি। আর যেসব ব্যাটারি একবার শেষ হয়ে গেলেও পুনরায় শক্তি স্থাপন করা যায়, তাদেরকে গৌণ ব্যাটারি বলে। মোবাইলের ব্যাটারি, প্লে-স্টেশনের ব্যাটারি এগুলো সবই গৌণ ব্যাটারি।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন