বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের প্রচুর শিশু অপুষ্টির শিকার। ইউনিসেফের এক জরিপ থেকে জানা যায়, প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও চিকিৎসার অভাবে বাংলাদেশে প্রতি ১০০০ জন শিশুর মধ্যে ৯৪ জন শিশু ৫ বছর বয়সের আগেই মৃত্যুবরণ করে।
কিন্তু অপুষ্টিজনিত কারণে শিশু মৃত্যুর পরিসংখ্যানে আফ্রিকা মহাদেশের অবস্থা এর থেকেও অনেকগুন ভয়াবহ। হিসেব অনুযায়ী, আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে প্রতি মিনিটে কমপক্ষে ৮ জন শিশু মারা যায় যাদের বয়স ৫ বছরের কম।
আফ্রিকান অঞ্চলের ৪৬টি দেশের মধ্যে ৩৬ দেশের ৫ বছরের কমবয়সী শিশুমৃত্যুর হার প্রতি এক হাজারে ১০০ জন। ৮টি দেশে এই হার হাজারে ২০০ জন। অবশ্য ৫টি দেশে এই শিশুমৃত্যুর হার স্থিতিশীল রয়েছে।
তবে দুঃখজনক বিষয়, যে পরিমাণ শিশু মৃত্যুবরণ করে তার দুই-তৃতীয়াংশকেই বাঁচানো সম্ভব। বেশিরভাগ শিশুই মারা যায় জন্ম নেয়ার সময়। বাকিরা নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, কলেরা এমনকি এইডসের কারণেও মারা যায়।
অপুষ্টি এসব শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। আশঙ্কার বিষয় বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি হলেও আফ্রিকান শিশুদের স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি হয়নি। সমগ্র বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার যেখানে ১৯৯০ সালে ছিল ৩১ শতাংশ সেটা ২০০৫ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশ।
এর মূল কারণ আফ্রিকায় প্রচুর শিশুমৃত্যুর হার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপ অনুযায়ী প্রতিবছর সারা পৃথিবীতে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু মারা যায় প্রায় ১ কোটিরও বেশী যার মধ্যে অর্ধেকই মারা যায় আফ্রিকাতে।
এর মধ্যে ১০ লাখ শিশুই মারা যায় নিউমোনিয়াতে, ৭ লাখ ৬৯ হাজার শিশু মারা যায় ডায়রিয়ার কারণে, আরও ৮ লাখ ১০ হাজার শিশুর মৃত্যু ঘটে ম্যালেরিয়ার কারণে। মায়ের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস থাকার কারণে জন্ম নেয়া প্রায় ৬ লাখ শিশু প্রতিবছর এইডস আক্রান্ত হয়। যাদের মধ্যে ৩ লাখ ১৫ হাজার শিশুই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
কিন্তু অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় আফ্রিকাতে শিশুমৃত্যুর হার এতো বেশী কেন? প্রশ্নটা জাগাটাই স্বাভাবিক। বেশিরভাগ আফ্রিকান দেশ অনুন্নত হওয়ার কারণে সেখানে দারিদ্রতা প্রকট। ফলে শিশুরা তাদের পর্যাপ্ত খাবার পায় না।
একারণেই তারা অপুষ্টিতে ভুগে মারা যায় প্রচুর হারে। আবার শিশুরা কোন অসুখে আক্রান্ত হলে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানোও সম্ভব হয় না তাদের বাবা-মায়ের পক্ষে। এমনকি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবাও সেখানে অপ্রতুল। এ কারণেই জন্মের সময় অনেক শিশু মারা যায়। বিভিন্ন দেশে শিশুদের স্বাস্থ্যরক্ষায় টিকা, ভ্যাক্সিন ইত্যাদি যেসব কার্যক্রম থাকে সেগুলোও আফ্রিকান দেশগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
তাই জন্মের পর সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা তারা পায় না। শিশুমৃত্যু ঠেকাতে এখন অবিধ তেমন কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেনি আফ্রিকান দেশের সরকারগুলো।