মরীচিকা

বন্ধুরা, মরীচিকা কি তা তো তোমরা নিশ্চয়ই জানো, তাই না? মরুভূমিতে দিনের বেলায় দেখা যায় এই মরীচিকা। এটা আসলে এক রকমের দৃষ্টিভ্রম। মরুভূমিতে পথিকদের কাছে মনে হয় তার সামনেই অল্প দূরত্বে পানি রয়েছে। কিন্তু সামনে গেলেই দেখা যায় যে সেখানে আসলে কোন পানি নেই। পথিক কখনোই সেই পানির কাছে পৌঁছাতে পারে না কেননা এই একটি আলোকীয় অলীক ঘটনা। কিন্তু কেন এই অদ্ভুত ঘটনাটা ঘটে তা কি তোমরা জানো? বলছি, মনোযোগ দিয়ে শোনো। 

মরুভূমিতে সূর্যের প্রচণ্ড তাপ থাকে। ফলে বালি খুব দ্রুত উত্তপ্ত হয়। এতে বালির কাছাকাছি যে বায়ু থাকে তার তাপমাত্রাও অনেক বেড়ে যায়। ফলে সেই গরম বায়ু হালকা হয়ে যায়। কিন্তু ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরের দিকে যাওয়া যায় বায়ুর তাপমাত্রা তত কমতে থাকে। একারণে উপরের দিকের বায়ু ক্রমশ ঘন থেকে ঘনতর হতে থাকে।

এবার ছবিটার দিকে খেয়াল কর। মরুভূমিতে দূরে কোন গাছ A থেকে আলোকরশ্মি পথিকের চোখে আসার সময় ঘনতর মাধ্যম থেকে লঘুতর মাধ্যমে প্রবেশ করতে থাকে। ফলে প্রতিসরিত রশ্মিটি তার অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এভাবে বাঁকতে বাঁকতে একসময় এমন একটা স্তরে আসে যখন আপতণ কোণ ক্রান্তি কোণের চেয়ে বড় হবে। এইসময় আলোক রশ্মির প্রতিসরণ না হয়ে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ঘটবে এবং আলোকরশ্মি উপরের দিকে উঠে বাঁকা পথে পথিকের চোখে পৌঁছাবে। এখন এই রশ্মিকে যদি পেছনের দিকে বাড়ানো হয় তাহলে মনে হবে যে সেটি B বিন্দু থেকে আসছে। ফলে B অবস্থানে তার উল্টা বিম্ব দেখা যাবে। এইভাবে আকাশ বা দূরবর্তী গাছপালা, ঘরবাড়ি সবকিছুরই উল্টা বিম্ব দেখা যাবে। কিন্তু পথিকের চোখ আলোর এই ঘটনা ধরতে পারে না।

তার কাছে মনে হয় যেন ভূপৃষ্ঠ থেকে আলোর প্রতিফলন হচ্ছে, যেমনটা ঘটে সাধারণত আয়না বা দর্পণের ক্ষেত্রে। সে মনে করবে যে সামনে কোন জলাশয় আছে এবং তাতে প্রতিফলন হচ্ছে। পথিকের কাছে জলাশয়ের দূরত্ব সবসময় একই মনে হবে। এই দূরত্ব নির্ভর করবে ভূপৃষ্ঠ থেকে পথিকের চোখের উচ্চতার উপর। আর এভাবেই ঘটে মরীচিকা সৃষ্টির ঘটনা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন