মেষপালের বন্ধু

সেই রাখাল আর বাঘের গল্পটা মনে আছে? রাখাল “বাঘ! বাঘ!” বলে মিথ্যা চিৎকার করে লোকদের বোকা বানাতো, তারপর সত্যি যখন বাঘ এলো তখন আর কেউ তাকে বাঁচাতে এলো না। সেই রাখালের সাথে যদি একটা শিপডগ (Sheepdog) থাকতো, তাহলে হয়তো রাখালের বাঁচার একটা সুযোগ থাকতো। শিপডগ আসলে এক ধরণের কুকুর যেগুলো ভেড়ার পাল রাখার কাজে রাখা হয়। কোন ভেড়া পাল থেকে বের হয়ে গেলে এই কুকুরগুলো সেটাকে পালে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এছাড়া কোন বন্য প্রাণী আশেপাশে থাকলে তা বুঝতে পারে এবং প্রয়োজনে আক্রমণও করতে পারে। অর্থাৎ, এরা মেষপাল আর মেষপালকের খুব কাছের বন্ধু।

শিপডগের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান শিপডগগুলোই সবচেয়ে ভালো মানের। এর মধ্যে আবার কেলপি (Kelpie) প্রজাতির শিপডগগুলো সবচেয়ে উন্নত মানের হয়ে থাকে। এদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মেষপাল রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়। সারা বিশ্বেই অস্ট্রেলিয়ান শিপডগ রপ্তানি করা হয়। শুধু মেষপালই না, এমনকি ছাগল বা বাছুরের পাল রাখার কাজেও শিপডগ ব্যবহার করা যায়। এই কুকুরগুলো মাঝারি আকারের, এবং বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। গড়ে এরা ১৪-২০ কেজি ওজনের এবং ৪১-৫১ সে.মি চওড়া হয়ে থাকে।

অস্ট্রেলিয়ান এই কুকুরগুলো আমেরিকা এবং কানাডাতেও পাওয়া যায়, কিন্তু সেখানে এগুলো অস্ট্রেলিয়ান কেলপি নামে পরিচিত নয়, বরং তাদের দেশের প্রজাতি বলেই পরিচিত। পশুপালনের কাজে শিপডগ খুবই উপকারী একটি প্রাণী। পশুর পালকে দেখাশোনা করার জন্য এদের তুলনা নেই। এরা নীরবে পশুর পালের সাথে থাকে, এবং পাল যদি বেশী এগিয়ে যায়, তবে সামনে গিয়ে সবাইকে থামিয়ে রাখে পালক না আসা পর্যন্ত।

এছাড়া কোন পশু পাল থেকে বের হয়ে গেলে তাকে ফিরিয়ে পালে নিয়ে আসে এই কুকুর। এমনকি পালের কোথাও বেশী ভিড় হয়ে গেলে শিপডগ ভেড়ার ওপরে চড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আটকে যাওয়া জায়গায় ভিড় কমায়। এরা সারাদিন একটানা পালের সাথে কাজ করার শক্তি রাখে।

অস্ট্রেলিয়ান শিপডগগুলোর পূর্বপুরুষরা কোন বিশেষ প্রজাতির কুকুর ছিল না। কিন্তু মেষপালকদের সাথে থাকতে থাকতে এরাও মেষপালের পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে মেষপালনে পারদর্শী হয়ে ওঠে।

প্রথম কেলপি প্রজাতির কুকুরটি পাওয়া যায় ১৮৭২ সালে জ্যাক গ্লিসনের(Jack Gleeson) দ্বারা। যে মেষপালকের কাছে এটি ছিল তাঁর নাম ছিল জর্জ রবার্টসন। ধীরে ধীরে এই কেলপিগুলো বেশ বিখ্যাত হয়ে ওঠে, এবং অস্ট্রেলিয়ানরা এগুলো অন্য দেশে রপ্তানি করা শুরু করে। বাংলাদেশেও পশুপালনের কাজে শিপডগ ব্যবহার করা সম্ভব, এবং তার জন্য সরকারকে দ্বায়িত্ব নিতে হবে এই প্রজাতির কুকুরগুলো আমদানি করার। সঠিকভাবে দেখভাল করলে পশুপালনের কাজ অনেকটাই সহজ করে দিতে পারে শিপডগ।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন