রংধনু সৃষ্টির গল্প

বৃষ্টির পরে হঠাৎ রোদ উঠলে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছো কখনো? সূর্যের বিপরীতে সাত রঙের বাহারি রংধনু দেখতে কার না ভালো লাগে! আর ছোটদের মাঝে এই রংধনু নিয়ে জল্পনা-কল্পনা আরও বেশী। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোর মধ্যে রংধনু অন্যতম।

এক পশলা বৃষ্টির পর আকাশে অনেক সময় সাত রঙের যে মোহনীয় লীলা প্রদর্শিত হয় তাই মূলত রংধনু। কবি সাহিত্যিকেরা তাদের গদ্য-পদ্যের ভাষায় রংধনুর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। আর শৈশব কৈশোর পেরোনো শিশু কিশোরদের কাছে এই রংধনু অনেক রহস্যময় এক অধ্যায়। উঁচু উঁচু দালানকোঠায় ঘেরা এই ঢাকায় তোমরা হয়তো কদাচিৎ এই অসম্ভব সুন্দর রংধনুর দেখা পাও।

অবশ্য গ্রামাঞ্চলে যেখানে ইট কাঠ পাথরের দালানকোঠার তুলনায় সবুজে বিস্তৃত বনভুমির পরিমান বেশি, ধুলোবালির পরিমাণ খুব কম, আকাশ অনেক পরিস্কার সেখানে রংধনুর দেখা প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায়। আজ আমরা জানবো কীভাবে রংধনুর সৃষ্টি হয় ? 

সূর্যের আলো আপাত দৃষ্টিতে দেখতে সাদা হলেও তা মূলত সাতটি রঙের মিশ্রণে হয়। বেগুনি, নীল, আসমানি (আকাশী), সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল। যা সংক্ষেপে বেনীআসহকলা (VIBGYOR) নামে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে রংধনু সৃষ্টি হয় বাতাসে ভেসে থাকা পানির কণার মধ্য দিয়ে সূর্যের আলোর সাতটি মৌলিক রঙে বিভাজিত হওয়ার মাধ্যমে।

বৃষ্টি শেষে বাতাসে যে পানির কণা ভাসমান থাকে তা অনেকটা প্রিজমের মতো কাজ করে সূর্যের আলোকে বিভাজিত করে। যখন প্রিজমের মতো আচরণ করে পানির কণাগুলো সূর্যের সাদা আলোকে সাতটি আলাদা আলোতে ভাগ করে তখন তা আমাদের চোখে রংধনু হিসেবে ধরা দেয়। রংধনুতে একদম উপরের দিকে থাকে লাল রং আর একদম নিচের দিকে থাকে বেগুনী রং। তবে রংধনুতে সবসময়ই যে সাতটি রং দেখা যাবে এমনটি নাও হতে পারে। কখনো কখনো সাতটির কম রং নিয়ে রংধনু সৃষ্টি সম্ভব।

তবে বৃষ্টির পরপর আকাশে থাকা জলকণা যে রংধনু সৃষ্টি করবেই তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সকালে পশ্চিমাকাশে ও বিকালে পূর্বাকাশে রংধনুর দেখা পাওয়া যায়। বৃষ্টি হওয়ার পরপরই সূর্য উঠলে বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে সূর্য উঠলে রংধনু ওঠে। রংধনুর লাল ও বেগুনি রং দিগন্তরেখা থেকে যথাক্রমে ৪২ ডিগ্রি ও ৪০ ডিগ্রি উঁচুতে থাকে। কখনো কখনো একটি রংধনুর ওপর আরেকটি রংধনু দেখতে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্রথম রংধনুটিকে মুখ্য ও দ্বিতীয়টিকে গৌণ রংধনু বলে। গৌণ রংধনুর রং মুখ্য রংধনুর রঙের ক্রমের বিপরীতে সাজানো থাকে।

রংধনু দেখার জন্যে সূর্য তোমার পেছনের দিকে থাকা জরুরী আর পানির কণা থাকতে হবে সামনের দিকে। আর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হল বৃষ্টি শেষে ঝকঝকে সূর্যের আলো। বৃষ্টি ছাড়াও কিন্তু রংধনু সৃষ্টি সম্ভব! ফোয়ারা বা ঝরনার আশেপাশে প্রায়ই রংধনুর দেখা মিলতে পারে। এছাড়া ভর দুপুরে ঠিক সূর্যের দিকে তাক করে যদি পানি ছুঁড়ে মারো, তাহলে ঐ পানির কণাগুলোতেও রংধনুর দেখা মিলবে।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন