শব্দ দূষণ

উচ্চ শব্দে গান শুনতে খুবই মজা লাগে বা কানে হেডফোন লাগিয়ে অনেক জোরে গান শোনার অভ্যাসটা আমরা বদলাইতে পারি না ! কিন্তু আমরা কি জানি এর প্রতিক্রিয়া কতোটা মারাত্মক ? আমরা আসলে ক্ষণিকের আনন্দের জন্য আমাদের জীবনের অনেক বড় বিপদ ডেকে আনছি।

একটা পরীক্ষায় দেখা গেছে উচ্চ শব্দযুক্ত পরিবেশে যারা বসবাস করে বা কাজ করে তাদের শ্রবণ শক্তি দশ বছরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক হ্রাস পায়।

যেখানে সেখানে আমরা গাড়ির হর্ন বাজাতে আমরা খুব পছন্দ করি ! রাস্তার সাইনবোর্ডে “ হর্ন বাজানো নিষেধ” দেখা সত্ত্বেও আমাদের গাড়ির চালকেরাও দিব্যি হর্ন বাজিয়ে যান।

শব্দ দূষণের মর্মার্থ বুঝলে আজ হয়তোবা সবাই নিয়ম মেনে চলতো। আসলে বাংলায় একটা প্রবাদ আছে “ যার হয় সেই বুঝে ঠ্যালা ”

শব্দ দূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানার আগে আমরা জেনে নেই শব্দ দূষণ জিনিসটা কি ?

শব্দদূষণ বলতে মানুষের বা কোনো প্রাণীর শ্রুতিসীমা অতিক্রমকারী কোনো শব্দ সৃষ্টির কারণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বোঝায়। যানজট, কলকারখানা থেকে দূষণ সৃষ্টিকারী এরকম তীব্র শব্দের উৎপত্তি হয়। মানুষ সাধারণত ২০-২০,০০০ ডেসিবেলের কম বা বেশি শব্দ শুনতে পায় না। তাই মানুষের জন্য শব্দদূষণ প্রকৃতপক্ষে এই সীমার মধ্যেই তীব্রতর শব্দ দ্বারাই হয়ে থাকে। শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক ডেসিবেল (decibel)। শব্দের মাত্রা ৪৫ ডিবি (db) হলেই সাধারণত মানুষ ঘুমাতে পারে না। ৮৫ ডিবিতে শ্রবণ শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে এবং মাত্রা ১২০ ডিবি হলে কানে ব্যথা শুরু হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতানুসারে, সাধারণত ৬০ ডিবি শব্দ একজন মানুষকে সাময়িকভাবে বধির করে ফেলতে পারে এবং ১০০ ডিবি শব্দ সম্পূর্ণ বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে হিসাব করে দেখা গেছে যে, ঢাকা শহরের যেকোন ব্যস্ত সড়কে সৃষ্ট শব্দের মাত্রা ৬০ থেকে ৮০ ডিবি, যানবাহনের শব্দ মিলে তা ৯৫ ডিবিতে দাঁড়ায়; লাউড স্পিকারের সৃষ্ট শব্দ ৯০ থেকে ১০০ ডিবি, কল কারখানায় ৮০ থেকে ৯০ ডিবি, রেস্তোরাঁ এবং সিনেমা হলে ৭৫ থেকে ৯০ ডিবি, মেলা-উৎসবে ৮৫ থেকে ৯০ ডিবি, স্কুটার বা মটরসাইকেলের ৮৭ থেকে ৯২ ডিবি এবং ট্রাক-বাসের সৃষ্ট শব্দ ৯২ থেকে ৯৪ ডিবি। কিন্তু শব্দের বাঞ্ছনীয় মাত্রা হলো: শয়নকক্ষে ২৫ ডিবি, বসবার ও খাবার ঘরে ৪০ ডিবি, কার্যালয়ে ৩৫-৪০ ডিবি, শ্রেণীকক্ষে ৩০-৪০ ডিবি, গ্রন্থাগারে ৩৫-৪০ ডিবি, হাসপাতালে ২০-৩৫ ডিবি, রেস্তোরাঁয় ৪০-৬০ ডিবি এবং রাত্রিকালে শহর এলাকায় ৪৫ ডিবি। যখন শব্দ এই সীমা অতিক্রম করে তখনই শব্দ দূষণ ঘটে। সূত্র – বাংলা উইকিপিডিয়া

আমাদের দেহের যথেষ্ট সংবেদী অঙ্গ কান। উচ্চ শব্দ আমাদের কানের পর্দাকে অনেক জোরে ধাক্কা দেয়। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে এই উচ্চ শব্দের কারণে আমাদের কানের পর্দা নষ্ট ও হয়ে যেতে পারে। আর কানের পর্দা নষ্ট হওয়া মানে হচ্ছে চিরকালের জন্য কানে না শোনা।

শব্দ দূষণের কারণে আমাদের দেশের শিশুরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া বাচ্চারা। একটা দৃশ্য প্রতিনিয়তই দেখা যায় স্কুল শেষে আমাদের বাচ্চারা যানবাহনের উচ্চ শব্দ সহ্য করতে না পেরে কান বন্ধ করে থাকে।

যখন কোনো উচ্চ শব্দ আমাদের কানে এসে আঘাত করে তখন আমরা কিছুক্ষণের জন্য কিছু শুনতে পারি না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে উচ্চ শব্দে আমাদের কানের মধ্যভাগের মাংশপেশী এমনভাবে সংকুচিত হয়ে যায় যে কান আর কোনো শব্দ নিতে পারে না। তাই আমাদের বাচ্চারা উচ্চ শব্দ সহ্য করতে না পেরে কান বন্ধ করে থাকে। যদিও কিছুক্ষণ পরে আমাদের কানের মধ্যভাগের মাংশপেশী প্রসারিত হয়ে যায় কিন্তু ভবিষ্যতে এর প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক রূপ ধারণ করে।

উচ্চ শব্দ শুনতে শুনতে শিশুদের স্বাভাবিক স্নায়ু – সংযোগ ব্যাহত হয়, তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ কমে আসে, শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বাধাগ্রস্ত হয় ও ধীরে ধীরে তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।

পরিশেষে একটা কথায় বলতে চাই, মানুষের শরীরের প্রতিটা অঙ্গ অন্য অঙ্গের সাথে সম্পর্কযুক্ত। শরীরের সংবেদী অঙ্গ কান যখন উচ্চ শব্দ নিতে পারে না তখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যাঘাত ঘটাটাই স্বাভাবিক।

এখন মোবাইলের অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই যেকোন জায়গার শব্দের তীব্রতা নির্ণয় করা যাচ্ছে  । যেমন : Sound Meter অ্যাপ

 

           

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন