জাহিদ সেদিন বিকেলে একটি ভারতীয় খেলার চ্যানেলে দেখলো আগামীকাল সকাল ৯টায় ভারত বনাম পাকিস্তান এর খেলা। যথারীতি পরদিন সকালে ৯টা বাজার একটু আগেই সে টিভির সামনে এসে বসলো, সেই চ্যানেল দিয়ে বসে রইলো। কিন্তু ৯টা বেজে গেলেও খেলা শুরু হচ্ছেনা । ৯টা, ৯.১০, ৯.১৫ বেজে গেলো, কিন্তু খেলা আর শুরু হয় না। জাহিদের মনে প্রশ্ন আসলো খেলা আদৌ হবে কি? সে অন্য চ্যানেল ঘুরায় দেখলো খেলা চলছে কিনা ? তখন সে তার বড় ভাইয়ের কাছে গিয়ে ব্যপারটা বললো। বড় ভাই সবকিছু শুনে একরাশ হাসি দিয়ে বললেন, “আরে বোকা, এটা তো ইন্ডিয়ান চ্যানেল, তাই সেখানে যে সময় বলবে সেটা আমাদের সময়ের সাথে মিলবেনা। ভারতীয় সময়ের সাথে ৩০মিনিট যোগ করে দিলেই বাংলাদেশের সময় পাওয়া যাবে।”
আসলে ব্যাপারটা খুবই সহজ। পৃথিবীর সব জায়গায় একসাথে একই সময় হতে পারেনা। কিছু নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট ব্যবধানে সময়ের পরিবর্তন হয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার আগে কিছু জিনিস জেনে নিতে হবেঃ
১. বিষুবরেখা (Equator):
দুই মেরু অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিণ মেরু থেকে সমান দূরত্বে ভূ-পৃষ্ঠের উপর পূর্ব-পশ্চিমে ভূ-গোলককে বেষ্টনকারী যে রেখা কল্পনা করা হয়, তাকে বিষুবরেখা বলে।
২. অক্ষাংশ (Latitude):
বিষুব রেখার উত্তর বা দক্ষিন পাশে বিষুবরেখার সমান্তরাল যে বৃত্তাকার রেখাগুলো পূর্ব-পশ্চিমে গেছে সে রেখাগুলো সাধারনত অক্ষরেখা। আর বিষুবরেখার সাথে অক্ষরেখাটির অবস্থানের কৌণিক দূরত্ব হলো অক্ষাংশ। অক্ষাংশ পরিমাপ করা হয় ডিগ্রী, মিনিট ও সেকেন্ড এর মাধ্যমে। উল্লেখ্য, বিষুবরেখার অক্ষাংশ 0 ডিগ্রী।
৩. দ্রাঘিমারেখা (Longitude):
উত্তর মেরু থেকে দক্ষিন মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত যে কোনো কাল্পনিক রেখা যা ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত তাই দ্রাঘিমারেখা।
লন্ডন শহরের কাছে অবস্থিত গ্রীনিচ এ অবস্থিত নির্দিষ্ট মান মন্দিরের উপর দিয়ে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিন মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত কাল্পনিক রেখাটি মূল মধ্যরেখা নামে পরিচিত। এর দ্রাঘিমা 0 ডিগ্রী। মূল মধ্য রেখা থেকে ১৮০ ডিগ্রী পূর্ব বা পশ্চিমে অবস্থিত রেখাটিকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ( Internatioanal Date Line ) বলা হয়।
সময় নির্ণয়ঃ
একই অক্ষাংশে অবস্থিত উত্তর বা দক্ষিনে অবস্থিত যেকোনো স্থানের সময় একই হয়। সময়ের পার্থক্য ঘটে কেবল মাত্র পূর্ব বা পশ্চিম দিকে। পূর্ব দিকে সময় যোগ করতে হয়, আর পশ্চিমের অবস্থানের জন্যে বিয়োগ করতে হয়। এই যোগ বিয়োগের হিসেবটি হলোঃ প্রতি ডিগ্রী দূরত্বের জন্য সময়ের ব্যবধান হচ্ছে ৪ মিনিট। প্রতি ১৫ ডিগ্রীর জন্যে সময়ের ব্যবধান হচ্ছে ১ ঘণ্টা।
ভূপৃষ্ঠের যে কোনো স্থানের সময় পরিমাপের জন্যে আদর্শ স্থান হচ্ছে গ্রীনিচ মানমন্দির যা ইংল্যান্ডের লন্ডনে অবস্থিত। এই স্থানেই কাল্পনিক মূল মধ্যরেখাটি রয়েছে। মূল মধ্যরেখার সময়কে Greenwich Mean Time (GMT) বলে। এই গ্রীনিচ সময়কে প্রমান সময়ও বলা হয় ( Standard Time )।
বাংলাদেশের অবস্থান অনুযায়ী হিসেব করলে মূল মধ্যরেখার সাথে ৬ঘন্টার পার্থক্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশেরসময়=GMT+6. এর মানে হচ্ছে লন্ডনে যদি সকাল ৬টা বাজে তাহলে বাংলাদেশে সময় হবে দুপর ১২ টা। ক্রিকইনফোতে যেকোন ক্রিকেট খেলার তিনটা সময় লেখা থাকে। একটা হচ্ছে Local Time, দ্বিতীয়টি হচ্ছে GMT সময় ও অপরটি হচ্ছে বাংলাদেশ সময়। যেমন :