আমরা সকলেই জানি যে, সাপুড়েরা সাপের সামনে বসে বাঁশী বাজায় বা সাপকে ডেকে আনে বাঁশী বাজিয়ে। যখন সাপুড়ে সামনের দিকে বা পিছনের দিকে ঝুঁকে বাঁশী বাজাতে থাকে তখন সাপ তার ফণা তুলে সুরের তালে দুলতে থাকে। এর ফলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় সাপেরা সঙ্গীত পছন্দ করে। মাঝে মাঝে সাপুড়েরা দাবি করে তারা বাঁশী বাজিয়ে সাপকে ডেকে আনতে পারে। তাহলেই কি সত্যি সাপেরা সঙ্গীত ভালবাসে ?
মানুষ বা অন্য প্রাণীর মত সাপের কোন শ্রবণেন্দ্রিয় নামক শারীরিক গঠন নেই। সাপের columella auris নামক হাড় অন্তঃকর্ণে থাকে। এই হাড়ের বড় গুণ হচ্ছে এর দ্বারা সাপ ভূমির স্পন্দন ধরতে পারে। কিন্তু আকাশের মধ্যে বায়ুর স্পন্দন ধরতে পারে না।
সাপেরা আকাশে বায়ুর স্পন্দন নাকি মাটিতে স্পন্দন ধরতে পারে এই সম্পর্কে বিভিন্ন সাপ নিয়ে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাবিদ P.J. Deoras এই পরীক্ষাটি করার জন্য একটি সাপকে বাক্সের ভিতরে রাখেন ও সেই বাক্সের কাছে সঙ্গীত বাজিয়ে এর প্রভাব পরীক্ষা করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে সঙ্গীতের সুরের আওয়াজে টিনের মধ্যে স্পন্দন সৃষ্টি হয় ও সেই আওয়াজ শুনে সাপ তার ফণা তুলে। পরবর্তীতে সাপটিকে বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। এবার, তিনি লক্ষ্য করেন যে সমস্ত সঙ্গীত বায়ুতে স্পন্দন সৃষ্টি করে তাতে সাপের কোন প্রতিক্রিয়া হয় না।
অর্থাৎ, যে শব্দ মাটিতে স্পন্দন সৃষ্টি করে তাতে সাপেরা প্রতিক্রিয়াশীল ও সজাগ হয়। তাই, সাপুড়েরা যখন বাঁশীর শব্দ দিয়ে ভূমিতে আঘাত করে তখন শব্দের কম্পন সাপের কাছে যায়। আর সাপকে উত্তেজিত করার জন্য সাপুড়েরা বাঁশী দিয়ে সাপকে আঘাত করে। এর ফলে সাপও বাঁশীর দিকে দুলতে শুরু করে।
একটি মজার বিষয় হচ্ছে, শব্দ যতই জোরে হোক না কেন মূলত শব্দের কম্পনই সাপকে আলোড়িত করে। শব্দের কম্পন যখন তার columella auris হাড়ে এসে ধাক্কা দিবে তখনই সাপ শব্দের উৎস খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠে। তাই, আমরা বলতে পারি বাঁশী বাজালেই সাপ আসবে না বরং বাঁশী বাজিয়ে ভূমিতে স্পন্দন তৈরি করতে হবে। এই স্পন্দন বা কম্পন সাপের columella auris হাড়ে পৌঁছাতেই পারলেই সাপের দেখা পাওয়া সম্ভব।