মনে করো, তোমরা ৬ জন বন্ধু মিলে কোথাও ঘুরতে গেলে। সবার সাথে মোবাইল তো অবশ্যই আছে। হঠাৎ করে তোমাদের ইচ্ছা হলো একসাথে মুভি দেখবে। কিন্তু সমস্যা হলো মোবাইলের স্ক্রিন অনেক ছোটো। ৬ জন একসাথে পিচ্চি স্ক্রিনে দেখলে কিছুই বুঝা যাবে না !
এ সমস্যার সমাধানেই ২০০৮ সালে একটি চীনা কোম্পানী Shenzhen Showork N70 নামক একটি ডিভাইস বাজারে আনে। এটি ছিলো পোর্টেবল প্রজেক্টর। এর মাধ্যমে যেকোনো স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিও বিবর্ধিত করে দেখা যেতো। এই পোর্টেবল প্রজেক্টরের ধারণা থেকেই বিশ্বখ্যাত মোবাইল কোম্পানীগুলো মোবাইল ফোনেই প্রজেক্টরের সুবিধা তৈরী করছে।
কয়েকটি ব্যাটারি, সামান্য কিছু ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ, একটি LED ( Light Emitting Diode ) আলোক উৎস, কিছু সূক্ষ্ম তার, এবং কয়েকটি স্ক্যানিং মিরর এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম পোর্টেবল প্রোজেক্টরের যাত্রা শুরু হয়।
সময়ের জনপ্রিয় একটি পণ্য স্মার্টফোন। একটি স্মার্টফোনের কাজ আর এখন নিছক মোবাইল ফোনের মূল ফিচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নানান ধরনের কাজ যুক্ত হওয়ায় স্মার্টফোন এখন পরিণত হয়েছে হাতের মুঠোয় ছোট্ট কম্পিউটিং ডিভাইস হিসেবে। স্মার্টফোনের নানান সব ফিচারের মধ্যে নতুন একটি সংযোজন হচ্ছে প্রজেক্টর। অর্থাৎ, তোমার হাতের স্মার্টফোনটিই হয়ে উঠতে পারে একটি প্রজেক্টর আর সেই ফোন থেকেই তুমি প্রয়োজনীয় যেকোনো কিছু দেখতে পারবে বড় পর্দায়।
সম্প্রতি আইফোনের জন্যে ‘ এইপটেক ( Aiptek ) ‘ নামক একটি নির্মাতা সংস্থা বিশেষ ধরনের প্রোজেক্টর তৈরী করেছে। যার নাম ‘ আই-৫৫ ‘। এতে আছে একটি ব্যাটারি, যা ভিডিও প্রদর্শনের সময় আইফোনে চার্জ দিতে থাকবে। ফলে ব্যাটারির ব্যাকআপ নিয়েও চিন্তা করতে হবে না। শুধু তাই নয়, এতে আছে একটি এইচডিএমআই ( HDMI ) ইনপুট-ব্যবস্থা, যার ফলে একটি অ্যাডাপ্টারের সাহায্যে আইপ্যাড মিনি এবং আইফোনের আগের সংস্করণগুলোও এর সঙ্গে কাজ করবে।
আইফোনের পাশাপাশি স্যামসাংও একটি বিশেষ মডেলের মোবাইল বাজারজাত করছে। Samsung Galaxy Beam নামক এই মডেলে প্রজেক্টরের বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। অ্যানড্রয়েড ২.১ অপারেটিং সিস্টেমে চালিত এই স্মার্টফোনে অন্যান্য অ্যানড্রয়েডের সব সুবিধাই রয়েছে। বাড়তি হিসেবে রয়েছে এর চমৎকার একটি প্রজেক্টর। এর প্রজেক্টরের উজ্জ্বলতা ১৫ লুমেন্স ( Lumence )। অর্থাৎ, এটি একটি স্মার্টফোনের প্রজেক্টর হিসেবেই বেশ ভালোই রেজ্যুলেশন প্রদান করবে। প্রজেক্টর ছাড়াও এই ফোনে রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এবং তার সাথে ১.৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা। ক্যামেরায় ছবি তুলে বা ভিডিও ধারণ করে সরাসরি সেটি দেখতে পারবে দেয়ালে। যেকোনো স্থানে সহজেই ব্যবহার করার উপযোগী এই স্মার্টফোনটি কর্মব্যস্তদের বাড়তি ডিভাইস ব্যবহারের ভার কমিয়ে দিতে সাহায্য করবে।
আরেকটি ফিচার ফোন স্পাইস এম৯০০০ পপকর্ন যাতে সংযুক্ত হয়েছে একটি প্রজেক্টর। প্রজেক্টর ব্যবহার করার জন্য রয়েছে একটি ট্রাইপড। এর ডিসপ্লের আকৃতি ৬ সেন্টিমিটার। হালকা-পাতলা এই ডিভাইসে রয়েছে ৩.২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। এর মাধ্যমে দেওয়ালে ২৭ থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত বড় আকারের ছবি ডিসপ্লে করা যাবে। এর বড় একটি সুবিধা হচ্ছে, এটি টিভি সিগন্যাল রিসিভ করতে পারে। অর্থাৎ, এই ফোনের মাধ্যমেই টিভি দেখা যায় এবং সেটি একইসাথে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দাতেও উপভোগ করা যাবে।
এখন আর বড় পর্দার জন্যে সিনেমা হলে যেতে হবে না, কিংবা বিশাল আকারের টিভিও কিনতে হবে না। দরকার শুধু এমন একটি মোবাইল ডিভাইস, যা যেকোনো স্থানকে মুহূর্তেই বানিয়ে দিবে সিনেমা হল।