সুপার হিরোদের জন্মকথা

তুমি হয়তো তখন স্কুলেই যাচ্ছিলে। দেখলে একটা বেপরোয়া গতির গাড়ি একটি রিকশাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে গেল। রিকশা আরোহীদের যন্ত্রণাকাতর মুখ দেখে দেখে তোমার দাঁত কটমট করছে। হাতটাওহয়তো মুঠি চেপে ধরেছো। ভাবছ, ইস! গাড়িটাকে যদি ধরতে পারতাম! তবে আজ একটা বিহিত করেই ছাড়তাম । অথবা টিভি সেটের সামনে বসে কোন ভবনে আগুন লাগার থবর সরাসরি দেখছো। ওই ভবনে আটকে পড়া মানুষগুলোকে উদ্ধারের জন্য তোমার প্রাণ আইডাই করছে। তোমার বারবার ইচ্ছে করছে ইস যদি পারতাম উড়ে গিয়ে মানুষগুলোকে উদ্ধার করতে! জেনে রাখো তুমি না পারলেও একদল মানুষ আছে যারা ঠিকই তোমার ইচ্ছেগুলোকে পূরণ করে দেখাতে পারে। তবে অবশ্যই বাস্তবে নয়। তাদের বিচরণ শুধু কমিকস, কার্টুন আর থ্রি ডি মুভি জগতে। এদের সবাইকে আমরা সুপার হিরো হিসেবেই চিনি। এসব সুপার হিরোদের নিয়ে আমরা হরহামেশাই সিনেমা দেখেলেও এদের জন্ম কিন্তু কমিকস চরিত্র হিসেবেই। চলো জেনে নেয়া যাক সুপার হিরো চরিত্রগুেলার জন্মকথা-
সুপারম্যান
সুপারম্যানের (Superman) যাত্রা শুরু হয়েছিলো আজ থেকে ৭৬ বছর আগে। ১৯৩৮ সালের জুন মাসে ডিটেকটিভ কমিকস (বা ডিসি কমিকস)-এর অ্যাকশন কমিকস সিরিজের প্রথম সংখ্যায় আবির্ভাব ঘটে সুপারম্যানের। তবে তারও ৬ বছর আগেই ১৯৩২ সালে আমেরিকান লেখক জেরি সিজেল ও জো ই শাস্টার সুপারম্যান চরিত্রটির সৃষ্টি করেন।

পরবর্তীতে তারা ডিটেকটিভ কমিকস (বা ডিসি কমিকস)-এর কাছে তা বিক্রি করে দেন। ভীষন শক্তিশালী, জেট প্লেনের মত উড়ার গতি, তীক্ষ্ণ শ্রবণ শক্তি, অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী সুপারম্যান তার পুরো ক্ষমতাটাই প্রয়োগ করে মানুষের কল্যাণে। লাল, নীল ও হলুদের মিশ্রণে তৈরি বিশেষ পোশাকের বুকে ইংরেজি ‘S’ অক্ষরটি সুপারম্যানকে বিশেষত্ব দিয়েছে । ১৯৩৮ সালে সুপারম্যানের প্রথম প্রকাশিত কমিকসে আছে সুপারম্যানের জন্ম বৃত্তান্ত। মহাকাশের গ্রহ ক্রিপটন দুষ্ট সুপার কম্পিউটার ব্রেন ইয়কের কবলে পড়ে।

সেই সুপার কম্পিউটারের চক্রান্তে ক্রিপটন গ্রহটি ধ্বংস হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে ওই গ্রহের বিজ্ঞানী জোর এল তার শিশু সন্তানকে ক্যাল এল-কে স্বয়ংক্রিয় রকেটে পাঠিয়ে দেয় পৃথিবীর উদ্দেশ্যে। আমেরিকার ক্যানসাসের এক কৃষক ও তার স্ত্রী খুঁজে পায় ক্যালকে। ওই কৃষক পরিবারেই ঠাঁই হয় তার। নতুন নাম দেয়া হয় ক্লার্ক কেন্ট। ওই পরিবারেই বড় হতে থাকে ক্লার্ক। আস্তে আস্তে পৃথিবীর আলো বাতাসের মাঝেও সে বড়ো হয়ে ওঠে অতিমানবিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে। বড় হয়ে ক্লার্ক কাজ শুরু করে ডেইলি প্ল্যানেট পত্রিকার একজন রিপোর্টার হিসেবে। তবে মানুষের যে কোন বিপদে ক্লার্ক আর্বিভূত হয় সুপার হিরো রূপে। ক্লার্কই যে সুপারম্যান তা কিন্তু মানুষের অজানাই থেকে যায়। অতিমানবীয় কাজের কারণে সাধারণ মানুষ তাকে নাম দেয় সুপারম্যান। সেই থেকে ৭৬ বছর ধরে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে সুপারম্যান। বাস্তবে এমন একজন সুপারম্যান থাকলে কি ক্ষতি হতো বলতো?

স্পাইডারম্যান   
১৯৬২ সালে আগস্ট মাসে আবির্ভাব ঘটে স্পাইডারম্যানের (Spiderman)। এমেইজিং ফ্যান্টাসির ১৫তম সংখ্যায় আগমন ঘটে এই সুপার হিরোর। পিটার পার্কার নামের এক সাধারন স্কুল পড়ুয়া টিনএজারের স্পাইডারম্যান হয়ে উঠার ঘটনাটা জানতে চাও? তোমাদের স্কুলে নিশ্চয়ই বিজ্ঞানমেলা হয়। জানোইতো সে মেলায় হরেক রকম সায়েন্টিফিক জিনিসের প্রদর্শনী বসে। তো এমনি এক বিজ্ঞান বিষয়ক প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলো ছোট্ট পিটার পার্কার।

এই মেলাতেই একটু অসাবধানতায় তেজষ্ক্রিয় এক মাকড়শার কামড় খেতে হয় তাকে। ব্যস! এক কামড়েই তার শরীরে কিছু পরিবর্তন ঘটে। মাকড়শাদের মত জাল বোনা ও দেয়াল বেয়ে উঠার ক্ষমতা পেয়ে যায় পিটার। ছেলেবেলায় বাবা-মা হারানো পার্ক বড় হচ্ছিলো তার কাকা-কাকির কাছে। একদিন দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হন তার কাকা বেন। এরপর পার্কার সিদ্ধান্ত নেয় নিজের পরিচয় লুকিয়ে রেখে সন্ত্রাসীদের শায়েস্তা করার। শত্রুদের শায়েস্তা করতে বহুতল ভবন থেকে লাফ দেয়া কিংবা দেয়াল বেয়ে উঠা দেখে অচিরেই শহরবাসী তার নাম দেয় স্পাইডারম্যান! স্পাইডারম্যানের জনক হচ্ছেন কমিকস জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব লেখক স্টান লি ও কার্টুনিস্ট স্টিভ ডিটকো। সুপারম্যানের সঙ্গে স্পাইডারম্যানের একটি মিল আছে তা কি জানো? দুজনেই কিন্তু পেশায় সাংবাদিক! মারভেল কমিকসের ফ্ল্যাগশিপ চরিত্র এই সুপারহিরো।

ব্যাটম্যান
তোমার চোখে সেরা সুপার হিরো কে? তবে সারা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সুপার হিরোর শিরোপা কিন্তু জিতে নিয়েছে ব্যাটম্যান। তার কারণও আছে। অন্যসব সুপার হিরোদের মত ব্যাটম্যানের কোনো অলৌকিক শক্তি নেই। স্রেফ বুদ্ধির জোর আর কারিগরি ক্ষমতা দিয়ে সাংঘাতিক সব শত্রুর শায়েস্তা করে সে। শত্রুকে সে কখনো গুলিও করেনা। আর এসব বুদ্ধিমত্তা আর কারিগরিই তাকে এনে দিয়েছে শ্রেষ্ঠ সুপার হিরোর শিরোপা। ব্যাটম্যানের আড়ালে যে কাল্পনিক ব্যাক্তি তার নাম ব্রুস ওয়েনি। আর সব সুপার হিরোদের মতো ব্রুসেরও জীবেনেও রয়েছে করুণ কাহিনী। ছোটবেলায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ব্রুসের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর বড় হয়ে বাবার রেখে যাওয়া ওয়েন এন্টাপ্রাইজের মালিক হয় সে। তারপর নিজের (কাল্পনিক) শহর গথামকে শত্রু মুক্ত করার শপথ নেয়। বাড়ির নিচে মাটির তলায় বসে সে তৈরি করে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি।

তারপর রাতের অন্ধকারে বাদুড়ের বেশে গথাম শহরে বেরিয়ে আসে ব্যাটম্যান। দুষ্টু মানুষদের শায়েস্তার কাজে তাকে সাহায্য করে বেশ কিছু মানুষ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তার প্রধান সহযোগী রবিন, বাটলার (গৃহপরিচারক) অ্যালফ্রেড পেনিওয়ার্থ ও পুলিশ কমিশনার জিম গর্ডন। মাঝে মধ্যে ব্যাটগার্ল নামে এক নায়িকাকেও দেখা যায়। ব্যাটম্যান লড়াই করে জোকার, পেঙ্গুইন, টু-ফেস, পয়জন আইভি ও ক্যাটওম্যান নামের খলচরিত্রগুলোর বিরুদ্ধে। স্থলপথ ও জলপথে চলার জন্য ব্যাটম্যানের রয়েছে বিশেষ মোটরবাইক, গাড়ি ও প্লেন কাম সাবমেরিন। ব্যাটম্যান প্রথম প্রকাশ পায় ডিটেকটিভ কমিকসের ১৯৩৯ সালের ২৭ মে সংখ্যায়। তবে আলাদা কমিক বই হিসেবে ব্যাটম্যান প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। এর স্রষ্টার নাম বব কেন ও লেখক বিল ফিঙ্গার।

আয়রনম্যান
কমিকস জগতে আয়রনম্যানের আগমন ১৯৬৩ সালে। নাম শুনে হয়তো ভাবছো আয়রনম্যানের পুরো শরীরটাই লোহার তৈরি। আসলে কিন্তু তা নয়। তার পোশাকটাই কেবল লোহার তৈরি। ভেতরে বাস করে টোনি স্টার্ক নামের এক কোটিপতি অস্ত্র ব্যবসায়ী। অসাধারণ প্রযুক্তি জ্ঞ্যানের অধিকারী স্টার্ক অস্ত্র ব্যবসা করতেন। একবার তাকে অপহরণকারীরা অপহরণ করে মারাত্মক একটি অস্ত্র বানিয়ে দিতে বলে। সে অস্ত্র বানানোর ছলে কৌশলে পালানোর ফন্দি করে স্টার্ক। তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বানিয়ে ফেলে লোহার পোশাক। এই পোশাকটিকে গুলি ভেদ করতে পারে না। আবার চাইলে উড়াও যায়। এ পোশাক পরেই অপহরণকারীদের কবল থেকে পালিয়ে আসেন তিনি। এরপর নিজের প্রতিষ্ঠানের টাকা দিয়ে পোশাকটির আরো উন্নয়ন করে নেমে পড়েন শত্রুদের বিরুদ্ধে। আয়রনম্যানেরও জনক স্টান লি। ব্যাটম্যানের মত আয়রনম্যানও নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে বলে জনপ্রিয়তায় ব্যাটম্যানের চেয়ে কম নয়।

 

এক্সম্যান
এক্সম্যানের স্রষ্টার নামও কিন্তু স্টান লি। আজ থেকে ৫১ বছর আগে কমিকস দুনিয়ায় আবির্ভাব হয় এক্সম্যানদের। এক্সম্যানদের ছবি একেঁছিলেন জ্যাক কার্বি। অদ্ভুত সব ক্ষমতা অধিকারী এক্সম্যানরা। তাদের কেউ কেউ দেয়াল ভেদ করে চলে যেতে পারে একপাশ থেকে আরেক পাশে। কেউবা আবার চোখে তীব্র লেজার রশ্মির অধিকারী। কেউ আবার নিজের চৌম্বক শক্তি দিয়ে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারে সুবিশাল ভবন। চাইলে আবার যে কারোরই রূপ ধারণ করতে পারে। তাদের মধ্যে আবার দুটো দল। এক দল মানুষকে শত্রু ভেবে ধ্বংস করতে চায়। আরেক দল মানুষের কোনো ক্ষতি করতে দিতে রাজি নয় বরং প্রথম দলটাকে আটকাতে চায় তারা। এমনই এক অ্যাকশন হিরোদের দল এক্সম্যান।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন