স্বতঃস্ফূর্ত তিন কিশোর

আবরার ফাইয়াজ (ছবির মাঝখানে), জায়েদ শীতল (বাম দিক থেকে প্রথম) এবং রাহাতুজ্জামান রঙ্গন (সাদা শার্ট)। এরা তিনজনই একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। একই ক্লাসের শিক্ষার্থী হওয়ার পাশাপাশি তাদের একটি বড় পরিচয় তারা একে অপরের ভালো বন্ধু। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ এবং উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী এই তিনবন্ধুর আড্ডাবাজিতেও সৃজনশীলতা খেলা করে।

আর সে সৃজনশীলতার জোরেই এবারের আন্তজার্তিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে অনুর্ধ্ব আঠারো বছর বয়েসী শিক্ষার্থীদের শর্টফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রথম সেরা হয়েছে তিন তরুণের নির্মিত সল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘স্বতঃস্ফূর্ত’।

চলচ্চিত্রটির কাহিনী সংক্ষেপ জানতে চাইলে তিন নির্মাতার একজন আবরার ফাইয়াজ জানান, চলচ্চিত্রটির ঘটনাচক্র প্রবাহিত হয়েছে সতের-আঠারো বছরের একটি ছেলেকে নিয়ে। যে পড়াশোনার গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে বের হয়ে ভিন্ন কিছু করতে চায়।

কিন্তু তার জন্য সমাজে সে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকার শিকার হয়। তার পরিবার, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব সবার কাছেই বাধার সম্মুখিন হতে হয় তাকে। আর সবাই যেখানে বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে, সেখানে সে বড় হয়ে একজন বংশীবাদক হতে চায়।’

এমন একটি গল্প বেছে নেওয়ার পেছনের কারণ কী জানতে চাইলে রাহাতুজ্জামান রঙ্গন চ্যাম্পসকে বলেন, ‘আমরা সবাইকে বিশেষ করে আমাদের মা-বাবাদের কাছে একটি বার্তা দিতে চেয়েছি যে, শুধু ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার নয় এর বাইরেও কেউ কোনো কিছু একনিষ্ঠভাবে চাইলে সেখানেও সে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।’

‘আসলে মা-বাবার স্বপ্ন পুরণ করতে গিয়ে কত ছেলেমেয়েদের যে তাদের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয় তার কোনো হিসাব নেই। সেটা থেকে ছেলেমেয়েদের বের আনার জন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।’ যোগ করেন জায়েদ শীতল।   

৬ মিনিট ৪২ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের স্বতঃস্ফূর্তে মােট চরিত্র সাতটি। এসব চরিত্রে অংশ নিয়েছেন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এবং তাদের শিক্ষক। বংশীবাদকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইফতেখারুল আনাম। শুধু শেষ মুহূর্তের কাজটা ছিলো অ্যানিমেশনের। যে দৃশ্যে হাজার হাজার মানুষকে হাততালি দিতে দেখা যায়।

এমন একটি চলচ্চিত্র নিয়ে অংশ নিলেও প্রথম দিকে তারা ভাবেনি যে একেবারে প্রথম হয়ে যাবে। আবরার জানায়, ‘একে তো এবারই প্রথম কোনো উৎসবে অংশগ্রহণ তার উপর চলচ্চিত্র বানানোর অভিজ্ঞতাও আমাদের একেবারেই কম। মাত্রই তিন বন্ধু ইন্টারনেট ঘেটে চলচ্চিত্র তৈরির জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। ঠিক সেই সময় উৎসবের ঘোষণা। তাই ইন্টারনেট থেকে কিছু কলা-কৌশল শিখে তিনজন নেমে পড়ি চলচ্চিত্র বানাতে।’

প্রতিযোগিতার সেরা ছবি বানালেও ছবির চরিত্রটির মতো তাদের পরিবার থেকেই সায় ছিলো না এই কাজে। এর জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে ছবির শুটিং করেছেন তারা। ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ একটি মিউজিক নির্ভর শর্টফিল্ম। এর জন্য একজন সংগীত পরিচালকের সাহায্য দরকার ছিলো তাদের। সংগীত পরিচালক ও বংশীবাদক ইফতেখারুল আনাম করে দিয়েছেন তাদের সেই কাজ।

উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য উত্তরা থেকে শাহবাগ আসার অনুমতিটুকুও দিতে চাননি আবরারের বাবা-মা। শেষমেষ অনেক বুঝিয়ে এসেছিলেন উৎসবে। প্রতিযোগিতায় ছেলের ছবি সেরা হওয়ার খবর শুনে মুহুর্তেই নাকি বদলে গিয়েছিলো পরিবারের পরিবেশ। এখন আর তাদের তিনজনের কারো কোনো কাজে বাধা দেন না বাবা-মায়েরা।

পড়াশোনার বাইরে তিনজনই ক্রিকেট খেলার একনিষ্ঠ ভক্ত। এর পাশাপাশি গল্পের বই পড়া এবং সিনেমা দেখতে পছন্দ করে তারা। বড় হয়ে তিনজনই ভিন্ন কিছু করে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চায়। আবরার এবং রঙ্গনের ইচ্ছা অনেক বড় পরিচালক হওয়ার। আর জায়েদের ইচ্ছা অনেক বড় মাপের একজন ক্যামেরাম্যান হওয়ার। আর পছন্দের পরিচালক? তিনজনেরই একসঙ্গে জবাব, প্রয়াত তারেক মাসুদ।  

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন