স্বাধীনতা জাদুঘরটা দেখে আসা যাক

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ১৯৭১ সালে এখান থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। নয়মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী এখানেই যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমপর্ণ করেছিলো। তখন এর নাম ছিলো রেসকোর্স ময়দান। যেটি বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামেই পরিচিত।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের চুয়াল্লিশ বছরে এসে সেই উদ্যানেই স্থাপিত হয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসেই জাদুঘরটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভটির পাশেই মাটির নিচে এই স্বাধীনতা জাদুঘরটির অবস্থান। শিখা অনিবার্ণ থেকে সোজা হেঁটে স্বাধীনতা স্তম্ভটির দিকে এগিয়ে গেলেই হাতের বামে পড়ে জাদুঘরের প্রবেশ পথ। কোনো প্রবেশ টিকেট কাটতে হয়না।

সিঁড়ি দিয়ে সামনে এগিয়ে একটু ঘুরে নিচে নামলেই চোখে পড়ে বিশাল একটি গ্যালারি। গ্যালারিতে ছোট ছোট কাচের দেয়ালে সেটে দেওয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের নানা ধাপের বিভিন্ন চিত্র। এখানে মোট ১৪৪টি কাচের দেওয়ালে মুক্তিযুদ্ধ সর্ম্পকিত কয়েক হাজার ছবি প্রদর্শন করা আছে। এসব ছবিতেই ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের হাজার বছরের সংগ্রামের পথ।

প্রথমেই চোখে পড়ে বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিবতর্নের চিত্র। এরপর মধ্য এবং আধুনিক যুগের বাংলার মানচিত্রের চিত্র সেঁটে দেওয়া। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ের সাহসী সন্তানদের ছবি এবং কর্মের সংক্ষিপ্ত বিবরণী। ১৯৩০ সালে ময়মনসিংহের হাজং বিদ্রোহের অদ্বিতীয় নেতা মণি সিং, প্রীতিলতা, নীলবিদ্রোহ, তিতুমীরের বাশের কেল্লা, ভারত বিভাগের তিন কুশীলব পন্ডিত জওহর লাল নেহরু, শেষ ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট-ব্যাটেন ও মুহম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি রাখা প্রথম দিকে।

এরপর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বৈষম্য ঘিরে নানা আন্দোলনের ছবি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে দুই পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও সরকারী বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগের পোস্টারও রয়েছে। সেটাতে একবার চোখ বুলালেই আর বুঝতে অসুবিধা হয়না কেন স্বাধীনতার লড়াই শুরু হয়েছিলো ১৯৭১ সালে। এই গ্যালারির শেষ মাথায় দেয়ালে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের একটি বিশাল ছবি রয়েছে।

খানিকটা ঘুরে সামনে এগুলেই আলো অাঁধারি পরিবেশ। তার দুইপাশের দেয়াল জুড়ে ফ্রেমে বাঁধানো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়কার বিভিন্ন ছবি। কোনো ছবি দেখলে গর্বে বুক ফুলে উঠে তো কোনোটি দেখলে চোখ ঠেলে জল বেরিয়ে আসতে চায়।

এরপাশেই পানির মধ্যে একটু আলোর রোশনাই দেখে চমকে উঠতে পারেন যে কেউ। হঠাৎ আপনার মনে হবে মাটি ফুঁড়ে আকাশ থেকে সূর্যের আলো এখানে এলো কীভাবে। এমনটাই আসলে করা হয়েছে। দেখে মনে হবে যেনো অন্ধকারে সূর্যের আলো টেনে আনা হয়েছে।

এরপরই আরো একটি গ্যালারি। এখানেও মুক্তিযুদ্ধের নানা সময়ের চিত্র। বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং, অসহায় মানুষের ছবি। রয়েছে এই উদ্যানেই যে টেবিলে বসে জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পন করেছিলেন সেই টেবিলের একটি অনুকৃতি। বাদ যায়নি বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের যারা বিরোধিতা করেছিলো তাদের গল্পও। সেই সময়ে স্বাধীনতার বিপক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর নেতাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের ছবিও তুলে ধরা হয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘরে।

স্বাধীনতা জাদুঘরের এই প্রদশর্নী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক স্থাপন করা হয়েছে। প্রদশর্নীর পরিকল্পনা করেছেন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম ও কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। গ্রাফিকস করেছেন তারিক সুজাত ও আরিফুল আমিন।

গ্রীষ্মকালে এই জাদুঘর সকাল ১০.৩০ থেকে বিকাল ৫.৩০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর শীতকালে ৯.৩০ থেকে ৪.৩০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানান স্বাধীনতা জাদুঘরের প্রদর্শক প্রভাষক সৈয়দ এহসানুল হক। বৃহস্পতিবার এবং সরকারি ছুটির দিন বন্ধ। এছাড়া শুক্রবারে দুপুর ২.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০টা পর্যন্ত খোলা থাকে স্বাধীনতা জাদুঘর।   

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন