স্মার্টফোনটি কতখানি শক্ত!

মোবাইল ফোনটা হাত থেকে পড়লেই বুকটা কেমন ধক করে ওঠে! এই বুঝি গেলো সাধের ফোনটা নষ্ট হয়ে। এখনকার আধুনিক স্মার্টফোনগুলোতে হাজার হাজার ফিচার থাকলেও এগুলো মাঝে মাঝে বেশ ঠুনকো ধরণের হয়ে থাকে। একটু ওপর থেকে পড়লেই ফোনের বারোটা বেজে যায়। বেশীরভাগ সময়ে যেটা নষ্ট হয় তা হল ফোনের ডিসপ্লে এবং টাচস্ক্রিন, ফেটে একদম চৌচির হয়ে যায়! কিন্তু এগুলো প্রত্যেকটারই চাপ সহ্য করার একটি নির্দিষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। কতখানি ওপর থেকে পড়লে এগুলো নষ্ট হবে, এবং কতখানি ওপর থেকে পড়লে হবে না তা পরীক্ষা করে দেখা হয় নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে ফোন ফেলে দিয়ে। এরই নাম Drop Test

সাধারণত Drop Test করে থাকেন মোবাইল ফোন তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোই, কিন্তু তার পরেও ব্যবহারকারীরা নিজেরাও এই পরীক্ষা করে দেখতে খুব একটা কষ্ট পান বলে মনে হয় না। এটা বোঝাই যাচ্ছে যে Drop Test করার জন্য একটি ফোনকে বিসর্জন দিতেই হয়। সুতরাং ফোনটি খুব বেশী সাধের হলে এটি দিয়ে এই পরীক্ষা না করাই ভালো। দুনিয়া কাঁপানো টেক জায়ান্ট অ্যাপলের তৈরি iPhone সাড়া ফেলেছে অনেক আগেই। এ বছর বের হওয়া iPhone 6 এবং iPhone 6 Plus একেকটির দাম পড়ে ৫৪৯ ডলার এবং ৬৪৯ ডলার, যা কিনা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪৫০০০ এবং ৬০০০০ টাকার মতো। সুতরাং এতোগুলো টাকা গচ্চা দিয়ে কেনা শখের ফোনটি কতটুকু ওপর থেকে পড়লে ভাঙ্গবে তা পরীক্ষা করার মতো বুকের পাটা অনেকেরই হয় না।

অফিশিয়ালি এই কাজটি প্রথম করে দেখান ইউটিউবের জনপ্রিয় TechSmartt চ্যানেলের পরিচালক কিটন কেলার। তিনি একটি iPhone 6 এবং একটি iPhone 6 Plus কেনার পরই দুটোকেই ফেলে দিয়ে Drop Test করেন এবং ভিডিওটি ইউটিউবে প্রকাশ করেন। প্রথমে তিনি তাঁর পকেট থেকে ফোন দুটিকে মাটিতে ফেলে দেন, দুটো ফোনই বেশ বহাল তবিয়তেই টিকে থাকে। এরপর তিনি তাঁর কান সমান উচ্চতা থেকে ফোন দুটিকে ফেলে দেন, এ পর্যন্তও দুটিই টিকে থাকে। তারপর তিনি ফেলেন মাথার ওপর থেকে, এবার আর রক্ষা হয় না, iPhone 6 ফোনের স্ক্রিনের দিকেই মাটিতে পড়ে এবং স্ক্রিনটি ফেটে যায়, আর 6 Plus ফোনটি পেছনের দিকে পড়ে তাই খুব একটা ক্ষতি হয় না।

মোবাইল ফোন ছাড়াও আরও যেসব পণ্যের Drop Test করা হয় সেগুলো হলঃ

  • ট্যাবলেট কম্পিউটার
  • রেডিও
  • GPS ইউনিট
  • রিমোট কন্ট্রোল
  • ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার
  • ফ্ল্যাশ ড্রাইভ, হার্ড ড্রাইভ এবং পেন ড্রাইভ
  • মেডিক্যাল ডিভাইস
  • টর্চলাইট ইত্যাদি।

সাধারণত ৬ মিটার থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতাকে Drop Test-এর আওতায় রাখা হয়। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ৬ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ২০ মিটার ওপর থেকে এই যন্ত্রগুলোকে ফেলে দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে এরা কতটুকু চাপ সহ্য করতে পারে।

মজার ব্যাপার হল, এই Drop Test করার জন্য আমেরিকায় একটি প্রতিষ্ঠানই রয়েছে, অর্থাৎ এদের কাজই হল বিভিন্ন যন্ত্রের Drop Test করা। এই প্রতিষ্ঠানের নাম Halt and Hass, এদের শ্লোগান হচ্ছে, “You make it we break it”। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে এরা তাদের জন্য Drop Test করে। এদের অফিশিয়াল ক্লায়েন্ট রয়েছে বেশ বড় বড় কয়েকটি জায়ান্ট কোম্পানি, এদের মধ্যে প্রধান হল- Philips, Sun Power, Fisher and Paykel, Hamilton Jet, Nextwindow Optical Touch, Bosch, AuCom Electronics, Mako Networks ইত্যাদি। 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন