তোমরা কি একটি জিনিস লক্ষ্য করেছো যে যখন দুধ গরম করা হয় তখন পাত্র থেকে দুধ উপচে পড়ে ? এই ব্যাপারটা কেন হয় তোমরা কি তা জানো ?
আমরা জানি তাপ প্রয়োগ করলে কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় ও আরও তাপ দিলে তরল বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। যেমনঃ বরফকে তাপ দিলে বরফ পানিতে পরিণত হয় ও পানিকে তাপ দিলে তা বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। আবার, জলীয়বাষ্প থেকে তাপ অপসারণ বা ঠাণ্ডা করলে পানিতে পরিণত হয় ও পানিকে ঠাণ্ডা করলে বরফ হয়ে যায়।
দুধ পানির মতোই একটি তরল পদার্থ। কিন্তু পানিতে অন্য কোন উপাদানের মিশ্রণ থাকে না। দুধের মধ্যে উপাদান হিসেবে রয়েছে প্রোটিন, সুগার বা চিনি এবং ফ্যাট। যখন দুধ গরম করা হয় তখন প্রোটিন ও ফ্যাট আলাদা হয়ে যায়। যেহেতু প্রোটিন ও ফ্যাট দুধের চেয়ে পাতলা তাই স্তরের আকারে দুধের উপরে জমা হয়। এই স্তরকে আমরা সর বলে থাকি।
গরম করার সময় কিছু পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। যেহেতু দুধের উপরের ভাগ সরে ঢাকা থাকে তাই তার নিচে জলীয় বাষ্প আটকা পড়ে। কিন্তু দুধ যখন আরও গরম করা হয় তখন জলীয় বাষ্প দুধের উপরের স্তরকে ঠেলে উপরে তুলে দেয়। এর কারণে দুধের সর ও কিছু দুধ উপচে পড়ে যায়। দুধে সর পড়ে বলে যে দুধ উপচে পড়বে তা কিন্তু নয়। দুধে সর না পড়লেও গরম করলে দুধ উপচে পড়তে পারে।
মনে অবশ্যই প্রশ্ন আসছে যে তাহলে পানি, ভাত বা ডাল রান্না করার সময় গরম করলে উপচে পড়ে কেন ? আমরা জানি তরল পদার্থ গরম করলে তা জলীয় বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। তেমনি পানি , ভাত বা ডাল গরম করার কারণে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। কিন্তু অতিরিক্ত গরম করলে জলীয় বাষ্প সম্প্রসারিত হয় ও পানি, ভাত বা ডালের উপর ঘন ফেনা জমে উঠে। ফেনা জমার পরে যদি পানি, ভাত বা ডাল গরম হলে তখন নিচের বাষ্প উপরের ঘন ফেনাকে ধাক্কা দেয় ও উপচে পড়ে পাত্র থেকে।
দুধ, ভাত বা ডালের উপচে পড়া সহজেই রোধ করা যায়। বাষ্প বেরিয়ে যাওয়ার জন্য একটি পথ তৈরি করে দিতে পারলেই উপচে পড়বে না। একটা লম্বা চামচ পাত্রের মধ্যে রাখলে ঐ চামচের হাতলের পাশ দিয়ে সহজেই বাষ্প বেরিয়ে যেতে পারে। দুধের পাত্রে চামচ রাখলে দুধের সরের নিচে বাষ্প জমা হবে না এবং দুধও উপচে পড়বে না ।
মাঝে মাঝে অনেক কাজের মধ্যে অধিক তাপের কারণে দুধ পুড়ে যায় ও পোড়ার গন্ধ সারা বাড়ি ছড়িয়ে পড়ে। তবে পাকা রাঁধুনির ব্যাপারে কথাটা একেবারেই আলাদা। তারা জানে কখন দুধ গরম হবে বা কয় মিনিট পরে দুধ চুলা থেকে নামাতে হবে।