তাপমাত্রা কমলে বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারনক্ষমতা হ্রাস পায়। সাধারণত সন্ধ্যার পরে শীতকালে অত্যাধিক পরিমাণে তাপমাত্রা কমে যায়, তখন বাতাস আর জলীয় বাষ্প ধরে রাখতে পারে না এবং তা শীতল বস্তুর উপর পানির কণা হিসেবে জমা হয়। এ কণা শিশির বিন্দু নামে পরিচিত। ভূ-ত্বক, ঘাস ও গাছপালার উপর শিশির বিন্দু জমা হয়।
এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, শিশির কীভাবে একটা ক্রিকেট ম্যাচকে প্রভাবিত করতে পারে?
দিবা-রাত্রি বা ডে-নাইট ম্যাচে সন্ধ্যার পরে যখন শিশির জমতে শুরু করে, তখন আউটফিল্ড, ইনফিল্ড, পিচ, বল, ব্যাট এবং কখনও কখনও ব্যাটিং গ্লাভসও ভিজে যায়। এটা ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং সবক্ষেত্রেই কমবেশি প্রভাব ফেলতে পারে। শিশির একটি খেলার গতিপথ পাল্টে দিতে সক্ষম।
শিশিরের কারণে বোলারদের সমস্যা বেশি হয়। ভিজে যাওয়ার কারণে বল গ্রিপ করতে বা ধরতে সমস্যা হয়। ফলে স্পিন বোলাররা বোলিংয়ে কাঙ্খিত টার্ন পান না। পেসার কিংবা ফাস্ট বোলাররাও ঠিকভাবে বলে সুইং করাতে পারেন না। আবার বলের সঠিক লাইন-লেন্থও বজায় রাখতে পারেন না।
যার দরুন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে বোলাররা খুব বেশি অসুবিধায় ফেলতে পারেন না। ব্যাটসম্যানরা খুব সহজেই রান পেয়ে যান।
শিশিরের কারণে ভেজা পিচ্ছিল মাঠে ফিল্ডিং করাটা সহজ নয়। বল তাড়া করতে যেয়ে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। ফিল্ডারের হাত কিংবা বল ভেজা থাকলে সহজ ক্যাচও অনেক সময় মিস হয়ে যায়।
শিশির ব্যাটসম্যানদের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তারা বেশি সুবিধা পান। পাহাড়সম রানের টার্গেটও শিশিরের কল্যাণে খুব সহজে তাড়া ফেলা যায়। তবে তারা যে কখনই সমস্যায় পড়েন না, তা কিন্তু নয়। অনেক সময় ভেজা আউটফিল্ডের কারণে বলের গতি কমে যায়।
ফলে ব্যাটসম্যানরা অনেক সময় দুর্দান্ত শট খেলেও খুব সহজে বাউন্ডারি (৪ রান) পান না তখন দৌড়ে ২/৩ রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ভেজা পিচ্ছিল মাঠে দৌড়ে রান নেয়াটাও কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ব্যাটিং গ্লাভস বা ব্যাট ভিজে গেলে বার পরিবর্তন করার ঝামেলাও পোহাতে হয়।
এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটি উপায় অবশ্য আছে। তবে সেটা অবশ্যই টস ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। টসজয়ী অধিনায়ক শিশির বা বাতাসের আর্দ্রতা (Moisture) অনুযায়ী ব্যাটিং বা বোলিং নিতে পারেন।
দিবা-রাত্রির ম্যাচে রাতের শিশিরের সঙ্গে লড়াই এড়ানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় ফর্মুলা হলো, টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়ে নেওয়া এবং কৃত্রিম আলোয় রান তাড়া করা। তাতে শিশিরজনিত সমস্যার ঝড় প্রতিপক্ষের ওপর দিয়েই বয়ে যাবে। একই সঙ্গে রান তাড়া করায় সাফল্যের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।