বছরের শুরুতে বাচ্চাদের স্কুল খােলার সঙ্গে সঙ্গেই অভিভাবকরা চিন্তিত হয়ে পড়েন সন্তানের রেজাল্ট নিয়ে। বাচ্চারা ভালবাসে খেলতে, টিভি দেখতে এবং নিজের দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। স্বভাবতই পড়াশুনা এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে।
আর বাবা-মা চান সন্তান থাকবে পড়ার টেবিলে। টিভি আর গেমস ছেড়ে ব্যস্ত হয়ে উঠবে স্কুলের হোমোয়ার্কে। এ এক অদ্ভুত টানাপোড়েন। বাবা মা চাইছেন টেবিলে বসাতে আর বাচ্চারা চাইছে টেবিল ছাড়েত। দেখা যাক এই সমস্যার কোন সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় কীনা :
সবার আগে সন্তানের পড়াশুনার জন্য একটি স্বাভাবিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় বাচ্চারা যখন পড়তে বসে তখন তাদের সাথে অভিভাবক হিসেবে আপনিও বসুন। তাদেরকে পাঠ্যপুস্তকগুলো পড়ে শোনান। উৎসাহ দেয়ার জন্য তাদের সঙ্গে নিজে পড়ুন, তাদের পড়ে শুনাতে দিন এবং ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করুন।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব বাচ্চারা তাদের বাবা-মার সঙ্গে পড়তে বসে তারা স্কুলে খুব ভালো ফলাফল করে।
আমাদের দেশে বাচ্চাদের পড়াশুনায় আগ্রহী করে তুলতে বাবা মায়ের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও বেশ কিছু করনীয় আছে। যেমন- ভাই বোনরা একত্রে পড়তে বসলে কারো কোন সমস্যা হলে অন্যরা তাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া এর ফলে প্রতিযোগিতার মনোভাব আসে, এতে পড়ার গতিও বৃদ্ধি পায়।
সব শিশুরাই টেলিভিশন দেখতে এবং গেমস খেলতে ভালবাসে। তাই তাদের একটি রুটিন করে দিন, যে সময়টুকু তারা গেম খেলতে এবং টিভি দেখতে পারবে। এখন অনলাইনে অনেক মজাদার বুদ্ধিভিত্তিক গেম (ব্রেন-গেম) খেলা যায়। আপনার সন্তানকে সেসব গেমসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন।
এ ধরনের কিছু গেমস ওয়েবসাইট হলো www.funbrain.com, www.brainquest.com, www.learninggamesforkids.com ইত্যাদি। এছাড়া আপনি নিজেও তাদের সাথে “thinking games” যেমন দাবা, স্ক্র্যাবেল খেলতে পারেন।
বয়স যতই হোক না কেনো সন্তানের সঙ্গে তার স্কুল নিয়ে কথা বলুন। স্কুলে রোজ কী হয় না হয়, শিক্ষকরা কী বলেন, বন্ধুরা কী করে, ক্লাসে কী পড়ানো হচ্ছে এসব কিছু নিয়ে বন্ধুসুলভ ভঙ্গিতে কথা বলুন। নিজেদের আগ্রহ, শখের কথা তাদের বলুন কিন্তু সেগুলো পালন করার জন্য কখনো সন্তানকে জোরাজুরি করবেন না। সন্তানেকে নিজের আগ্রহ ও পছন্দের ভিত্তিতে গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করুন।
আপনার সন্তান খেলাধুলা, আর্ট এবং অন্যান্য যে কোনো বিষয়ে আগ্রহ দেখালে তাতে তাকে উৎসাহিত ও সাহায্য করুন। এতে করে ব্যাপারটি সম্পর্কে সে আরও বেশি জানতে চাইবে এবং তথ্য সংগ্রহে সে আরো উৎসাহী হবে।
এ বিষেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়র ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজিস্ট হাজেরা খাতুন চ্যাম্পস টোয়েন্টিওয়ান ডটকমকে বলেন, বাচ্চারা পড়তে না চাইলে তাদের খুব বেশি জোর করা যাবে না। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে পড়াশুনাটা বাধ্যতামূলক। তাদেরকে নরম সুরে ধৈর্য্য ধরে লেখাপড়ার গুরুত্ব বুঝাতে হবে। সন্তানকে বাবা মায়ের দিতে হবে প্রচুর সময় ও যত্ন। চেষ্টা করতে হবে বাচ্চাটি যেন তার আশেপাশের পরিবেশ থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে পারে”।
* অভিভাবক সন্তানের সেরা শিক্ষক। সন্তানকে প্রচুর সময় দিন। তার আশপাশে শিক্ষামূলক বই ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখুন যেন সে সেগুলো দেখতে আগ্রহী হয়
* যেকোনো প্রশ্ন করলে ধৈর্যের সাথে সেগুলোর সঠিক উত্তর দিন।
* তাদের লাইব্রেরী, মিউজিয়াম, চিড়িয়াখানায় নিয়ে যান।
* স্কুল এর যেকোনো অনুষ্ঠান হলে সেগুলোতে যোগদান করুন।
* সন্তান পড়তে না চাইলে, অনাগ্রহ দেখালে তাকে স্কুলের গুরুত্ব ও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিন।
ছবি : ইমতিয়াজ আহমেদ