বাবা-মা চান তাদের সন্তানেরা সুস্থ, সুন্দরভাবে বেড়ে উঠুক। সুষ্ঠু হোক তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। প্রতিদিনই বাচ্চারা মুখোমুখি হয় নতুন কোন না কোন অভিজ্ঞতার। কিন্তু সবসময় তার কৌতূহলী মন ইতিবাচক দিক বয়ে আনে না। আর তাই সন্তানের উৎসুক মনকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দেয়ার সবচেয়ে বড় দায়িত্বটি পালন করতে হয় বাবা-মাকেই।
একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে এখনকার বাচ্চারা বড় হচ্ছে আধুনিক হয়েই। আগে যেখানে একটি পরিবারে বড়জোর একটি কম্পিউটারই ছিল সেখানে এখন বাচ্চার ব্যবহারের জন্য বাবা-মা ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ব্যবস্থা করে থাকেন। আর সেটা থাকে তাদের শোবার ঘরেই। সেই সাথে মোবাইল, ট্যাব ইত্যাদি ডিভাইস তো আছেই।
এসব কারণে সন্তানদের উপরে নজরদারি করা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে বাবা-মায়েদের জন্য। নিজের ব্যক্তিগত ডিভাইসে সন্তান কি করছে, কি দেখছে তা সবসময় খেয়াল রাখতে পারেন না তারা। ফলে বাচ্চারা পরিচিত হচ্ছে ইন্টারনেটে অনাকাঙ্খিত জগতের সাথে।
মুখোমুখি হচ্ছে এমন কিছু অভিজ্ঞতার যেগুলোর জন্য এখনো পরিণত হয়নি তার মানসিকতা। যৌনতা, হিংস্রতা, চরমপন্থি কাজকর্ম, বৈষম্য ইত্যাদি জিনিস তার অপরিপক্ব মন সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না। ফলে তারা মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়। এ সবের প্রভাবে তাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে অসংলগ্নতা। ঘটতে পারে নেতিবাচক ঘটনা।
এসব থেকে নিজেদের সন্তানকে রক্ষা করতে বাবা-মায়েদের প্রয়োজন যথাযথ পরামর্শ এবং সেগুলোর যথোপযুক্ত প্রয়োগ। ইন্টারনেটের অপব্যবহার থেকে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের রক্ষা করতে বয়সভিত্তিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয়া হল-
৫ বছরের কমবয়সী বাচ্চাদের জন্য পরামর্শ
– কিছু বাধ্যবাধকতা তৈরি করুন। এতো কমবয়সী বাচ্চা দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ের বেশি যেন কম্পিউটার বা ট্যাবের সামনে বসে না থাকে।
– মোবাইল, ট্যাবলেট, ল্যাপটপের মত ইলকেট্রনকি ডিভাইসগুলো যেন তাদের নাগালের বাইরে থাকে সেটা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে এসব ডিভাইসে পাসওয়ার্ড বা লক ব্যবহার করুন।
– যে কম্পিউটার বা ডিভাইসে সে প্রবেশ করতে পারবে সেগুলোতে যাতে বাচ্চা কিছু অনুমোদিত জিনিস ছাড়া অন্য কিছু দেখতে বা ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।
– বাজারে কিছু parental control software পাওয়া যায়। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলোর কাজের ধরণ ভিন্ন। আপনার যেটা লাগবে সেটা কিনে বা ডাউনলোড করে কম্পিউটারে ইন্সটল করুন।
– ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে কথা বলে আপনার ইন্টারনেট সংযোগেও প্রয়োজনীয় সীমাবদ্ধতা দিতে পারবেন।
– গেমস, অ্যাপ, টিভি এবং সিনেমার ক্ষেত্রে যেগুলোতে বয়সের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা আছে সেগুলো কিনতে বা ডাউনলোড করতে চেষ্টা করুন। বাচ্চার ব্যবহারের আগে সেগুলোর বয়সসীমা দেখে নিন।
– পারিবারিক কম্পিউটারগুলোতে বাচ্চাদের বিভিন্ন ওয়েবসাইট হোমপেজ বা বুকমার্ক করে রাখুন।
– বাচ্চার আশেপাশে সাধারণত অন্য যেসব মানুষ থাকে যেমন দাদা-দাদি, নান-নানী, কাজের লোক বা বাচ্চার বন্ধুদের বাবা-মা, তাদেরকেও আপনার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে রাখুন।
– বাসার বাইরের ওয়াই-ফাই সংযোগগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত প্যারেন্টাল কন্ট্রোল থাকে না। তাই এসব জায়গায় বাচ্চাদের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে না দেয়াই ভালো।
(* অন্যান্য বয়সসীমা আগামী পর্বে)