ক্রিকেট মাঠের ছোট্টো জায়গার ভেতর কত রকমের নিয়ম কানুন রয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। শুধু দৌড়ে এসে বল করলেই কিংবা ব্যাট হাঁকিয়ে বলের সাথে লাগিয়ে দিলেই শেষ না সবকিছু, এখানেও রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম। এইসব নিয়মের বাইরে গেলে শাস্তি হিসেবে কখনো এক বল বেশি করতে হয় কিংবা জরিমানা হিসেবে এক রান দিতে হয়।
ক্রিকেট খেলার “এক্সট্রা” বা অতিরিক্ত রান দেয়াটা সবারই পরিচিত। বেশ কয়েক রকমে অতিরিক্ত রান হয়। এর মধ্যে Wide, No Ball, Bye, Leg Bye অন্যতম।
Wide Ball:
ব্যাটসম্যানের জন্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া ক্রিজের দুই পাশে স্ট্যাম্প বরাবর দুইটি দাগ দেয়া থাকে। এই দাগগুলো ওয়াইড এর সীমানা নির্ধারনের জন্যে ব্যবহৃত হয়। ওয়ানডে এবং টি-২০ খেলায় ব্যাটসম্যানের ব্যাট, প্যাড কিংবা শরীরের সাথে না লেগে লেগ সাইড দিয়ে বল গেলেই ওয়াইড কল দেয়া হয়। আর অফ সাইডে নির্দিষ্ট পরিমাণ দুরত্বের বাইরে দিয়ে গেলে ওয়াইড হিসেবে গণ্য করা হয়। টেস্ট খেলার সময় অফসাইডে এবং লেগ সাইডে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে বল বেরিয়ে গেলে তা ওয়াইড হিসেবে গণ্য হয়।
আবার, কখনো কখনো বল অতিরিক্ত বাউন্স করে ব্যাটসম্যানের মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। যদি এমন উচ্চতা দিয়ে যায় যা ব্যাটসম্যানের নাগালের বাইরে, তাহলে সেই বলটিকেও ওয়াইড হিসেবে গণ্য করা হয়।
বোলারের ওয়াইড বলের জরিমানা হিসেবে ব্যাটিং দল এক রান অতিরিক্ত পায় এবং সে বলটিও গণনা করা হয় না।
No Ball:
ক্রিকেটের শক্তপোক্ত একটি নিয়ম হচ্ছে নো-বল। কয়েকভাবে নো-বল হয়ে থাকে। যেমনঃ বোলার যদি বোলিং করার সময় দৌড়ে এসে ডেলিভারি দেয়ার আগ মুহূর্তে তার জন্যে নির্ধারিত করে দেয়া দাগ অতিক্রম করে ফেলে, তাহলে সেটি নো-বলের খাতায় পড়বে। একে “Over Stepping No” বলা হয়। আবার ক্রিজের দুই পাশে ওয়াইডের জন্যে দাগ দেয়া থাকে। বোলিং প্রান্তে এই দাগকে “Popping Crease” বলা হয়। বোলার এই পপিং ক্রিজের বাইর দিয়ে বল করলেও সেটি নো-বল হিসেবে গণ্য হয়।
এরপর রয়েছে “Height No”। এক্ষেত্রে বল যদি সরাসরি ব্যাটসম্যানের কোমাড় বা তার উপর গিয়ে পড়ে, তাহলে বলটি নো বল হবে। একই ওভারে দুইটি Height No হলে বোলার আর ঐ ইনিংসে বল করতে পারে না।
উল্লিখিত দুই প্রকার নো বলের ক্ষেত্রে ব্যাটিং দল এক রান বোনাস পায়, এবং পরের বল ফ্রী হিট পায়। ফ্রী হিটের সময় কোনো খেলোয়াড় আউট হয় না ( শুধুমাত্র রান আউট, স্ট্যাম্পিং কিংবা অবস্ট্রাক্টিং দ্যা ফিল্ড ছাড়া )।
এছাড়াও বোলার যদি চাকিং করে তাহলে ঐ বলটি নো বল হবে, যদিও এক্ষেত্রে কোনো ফ্রী-হিট থাকবে না।
Bye Run:
বাই রান ক্রিকেট খেলার খুব হাস্যকর একটি সংযোজন। কয়েকভাবে বাই রান হয়। যেমনঃ বোলারের ডেলিভারি যদি ব্যাটসম্যানের ব্যাট, প্যাড কিংবা শরীর স্পর্শ না করে বেরিয়ে যায় এবং উইকেটকিপার বলটি ধরে ফেরত দেয়ার আগেই যদি ব্যাটসম্যানেরা কোনো রান নিয়ে ফেলে তাহলে তা বাই রান হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উইকেটিকিপার বল ধরতে ব্যর্থ হলে ব্যাটসম্যানেরা সুযোগ নিয়ে রান সংগ্রহ করে ফেলে।
এছাড়া, ব্যাটসম্যানের ব্যাট, প্যাড কিংবা শরীরের সাথে না লেগে সীমানার বাইরে বল চলে গেলে তাহলে চার রান বাই হিসেবে অতিরিক্ত খাতায় যোগ হবে।
আবার, কোনো ব্যাটসম্যান মিড উইকেট অঞ্চলে বলটি পাঠালেন। এর মধ্যে তিন রান দৌড়ে নিয়ে ফেললেন। ফিল্ডার বলটিকে ধরে উইকেটকিপারের কাছে নিক্ষেপ করলো, কিন্তু বলের গতি বেশি হওয়ায় কিপার বলটি ধরতে পারেনি, বলটি যদি তখন যেতে যেতে বাউন্ডারি লাইন অতিক্রম করে ফেলে তাহলে ব্যাটসম্যান অতিরিক্ত চার রান পায়। তবে অতিরিক্ত এই চার রান ব্যাটসম্যানের রানের সাথে যোগ হয়, অতিরিক্ত খাতায় যোগ হয় না।
Leg Bye:
খুব সিম্পল একটি নিয়ম এটি। বল যদি ব্যাটসম্যানের ব্যাট এবং গ্লাভস ছাড়া অন্য কোনো স্থানে লাগে এবং ব্যাটসম্যান রান সংগ্রহ করে নিতে সক্ষম হয় তাহলে সেই রানটি “লেগ বাই” হিসেবে যোগ হবে।
Bye কিংবা Leg bye, কোনো প্রকারেই অতিরিক্ত কোনো বল করতে হয় না বোলারকে।
১৯৮৯ সালের ৭ই জানুয়ারি পাকিস্তান বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর মধ্যেকার ওয়ানডে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা ৫৯ রান অতিরিক্ত দেন যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক ওয়ানডের ইতিহাসে।