মনে করুন আপনি একটি ট্রেন চালাচ্ছেন; তীব্র গতিতে ছুটে চলেছেন ট্রেন নিয়ে। একটি ক্রসিং এর সিগন্যাল পেয়ে ট্রেনটি ব্রেক করতে গিয়ে দেখলেন যে ব্রেক কাজ করছে না। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রনে আনা যাচ্ছে না ট্রেনটি। কি করবেন তখন?
কোনো গাড়ি বা যেকোনো ধরনের যানবাহন, বিভিন্ন জলজযানের ইঞ্জিন মাঝে মাঝেই কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এতে করে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিকল হয়ে যাওয়া অংশুগুলোর বিকল্প হিসেবে ঐ যানটি বন্ধ করে দেয়া হয় যার মাধ্যমে তার নাম Dead Man’s Switch। এছাড়া, কন্ট্রোলার থেকে যদি চালকের হাত সরে যায় কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে তবে ডেড ম্যান’স সুইচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে যানটি বন্ধ করে দেয়।
২০১০ সালের ২৭ই এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ট্রেন চলাকালীন অবস্থায় ট্রেনের মোটরম্যানের হটাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। ট্রেনের কন্ট্রোলারের উপর থেকে মোটরম্যানের হাত সরে যাওয়ার সাথে সাথে Dead Man’s Switch সক্রিয় হয়ে ট্রেনটিকে থামিয়ে দেয় মুহূর্তের মধ্যে। যদিও এই ঘটনাটি Dead Man’s Switch এর প্রথম সফল ব্যবহার নয়। ১৯২৭ সালে সর্বপ্রথম এই ডেড ম্যান’স সুইচের সফল ব্যবহার হয়। পরবর্তীতে ১৯৪০ সালে আরেকবার এর সফল ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
বর্তমানে নিউইয়র্কের সাবওয়ে ট্রেনগুলোতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই প্রযুক্তি কেবল সুইচ আকারেই থাকে তা কিন্তু নয়। কানাডার ডিজেলচালিত ট্রেনগুলোতে ড্রাইভারের সামনে একটি টাচস্ক্রিন থাকে, যেখানে হাত রেখে ট্রেনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রন করা হয়। ঐ টাচপ্যাড থেকে কোনো কারণে যদি ড্রাইভারের হাত সরে যায় তাহলেই Dead Man’s Switch Mode চালু হয়ে যায়।
এই ডেড ম্যান’স সুইচের ব্যবহার পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন রকমের হাজারো যানবাহনে হচ্ছে। প্রযুক্তির কল্যানে এর ব্যবহার মোটরগাড়ি থেকে উড়োজাহাজ সর্বত্রই হচ্ছে। এমনকি দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যে সম্প্রতি মহাকাশে প্রেরিত কয়েকটি কৃত্রিম উপগ্রহের সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে এই Dead Man’s Switch।
শুধুমাত্র যে যানবাহনে ডেড ম্যান’স সুইচ ব্যবহার তা কিন্তু নয় বিমানবন্দরে আমরা যে ট্রলি ব্যবহার করি তাতে ডেড ম্যান সুইচের প্রয়োগ দেখা যায়। এছাড়া, বিনোদনপার্কের বা শিশুপার্কের বাম্পার কারে, বৈদ্যুতিক সেলাই মেশিনে, অপারেটর চালিত মেশিন যেমন বুলডোজার, ক্রেন ইত্যাদিতে ডেড ম্যান সুইচ ব্যবহার করা হয়।