চোখে দূরবীন লাগিয়ে বারান্দায় বসে আশেপাশের সবকিছু সবার অগোচরে দেখে নিতে বেশ মজাই লাগে ! কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছো যে কীভাবে দূরবীন দূরের বস্তুকে এতটা কাছে নিয়ে আসে? কি এমন আছে এর কাঁচের মধ্যে যার কারণে এরা এতো শক্তিশালী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তোমার দূরবীনটা ভেঙ্গে দেখার চেষ্টা করো না, কারণ এর ভেতরে কয়েকটা সাধারণ কাঁচ ছাড়া আর কিছুই পাবে না। তবে চলো আজ আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি যে আসলে কীভাবে দূরবীন কাজ করে।
দূরবীন এমন একটি যন্ত্র যা দূরের বস্তু দেখার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি তৈরি হয় লেন্স (Lens) ও প্রিজম (Prism)-এর সাহায্যে। দূরবীন মূলতঃ দুই প্রকার- মনোকুলার (Monocular) বা একনলা দূরবীন, বাইনোকুলার (Binocular) বা দোনলা দূরবীন। তবে দূরবীন হিসেবে বাইনোকুলার বেশী পরিচিত এবং দূরবীন বলতে আমরা বাইনোকুলারকেই বুঝিয়ে থাকি।
দূরবীনের কার্যনীতি জানার আগে আমরা একটু এর ইতিহাস ঘেঁটে আসি। সর্বপ্রথম দূরবীন তৈরি করেন ইয়ান লিপারশে ১৬০৮ সালে। তারপর ১৬০৯ সালে গ্যালিলিও তারা দেখার জন্য একটি দূরবীন তৈরি করেন। মজার ব্যাপার হল গ্যালিলিও এই দূরবীন তৈরির ধারনা পান এক চশমা বিক্রেতার কাছ থেকে। সেই চশমা বিক্রেতা লক্ষ করেন যে তাঁর দোকানে বসানো স্থির লেন্সটি দিয়ে দেখলে সামনের ব্যারোমিটারটি আকারে বড় দেখা যায়। গ্যালিলিও তাঁর দূরবীন দিয়ে শনি গ্রহের বলয় ও বৃহস্পতির উপগ্রহ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এরপর ১৬১১ সালে কেপলার মোটামুটি আধুনিক একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দূরবীন তৈরি করেন।
দূরবীন আসলে আলোর প্রতিফলনকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে দেখতে সাহায্য করে। আমরা জানি যে কোন বস্তু হতে আলো যখন প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়ে তখনই আমরা ঐ বস্তুটা দেখতে পাই। আবার আলো কাঁচজাতীয় পদার্থে ধাক্কা খেয়ে খুব সহজেই প্রতিফলিত হয়। দূরবীনের যেখানে চোখ রাখা হয়, সেখানে দু’টি লেন্স থাকে যাদেরকে Eyepiece Lens বলে। এর পরে দূরবীনের ভেতরে মোট দুই জোড়া প্রিজম থাকে যাদের Porro Prism বলে। একদম শেষ মাথায় থাকে Objective Lens। যখন আমরা দূরবীন দিয়ে কোন বস্তু দেখার চেষ্টা করি, তখন ঐ বস্তু হতে আলো প্রতিফলিত হয়ে এসে Objective Lens-এ প্রবেশ করে বিবর্ধিত হয়। কিন্তু, Objective Lens-এ এসে বস্তুর ছবিটা ৯০° কোণে বেঁকে যায়। এরপর বেঁকে যাওয়া ছবিটি Porro Prism-দুটিতে প্রবেশ করে এবং এই প্রিজম দুটির কাজই হল ছবিটিকে ১৮০° কোণে বাঁকিয়ে সঠিক কোণে দেখানো। প্রিজম থেকে তারপর ছবিটি Eyepiece Lens-এর মধ্য দিয়ে দর্শকের চোখে প্রবেশ করে।
দূরবীনের বিবর্ধন ক্ষমতাকে এর Optical Parameter বলা হয়। কোন দূরবীনের Optical Parameter যদি 7 হয়, তাহলে ঐ দূরবীনটি যেকোনো বস্তুকে ৭ গুণ বড় করে দেখাতে সক্ষম। Optical Parameter দূরবীনের গায়েই লেখা থাকে যা দেখে দূরবীনের ক্ষমতা বোঝা যায়। দূরবীনের লেন্সের ফোকাস ঠিক করার জন্য এর মাঝে একটি চাবি থাকে। চাবিটি ঘুরালে লেন্স দু’টি সামনে-পিছনে যাওয়া আসা করে এবং এর ফলে দর্শকের সুবিধা অনুযায়ী ফোকাস ঠিক হয়। যাদের চোখে সমস্যা তাঁরা দূরবীনের ফোকাস ঠিক করে চশমা ছাড়াই দূরবীন ব্যবহার করতে পারে। অত্যাধুনিক দূরবীনে জুম (Zoom) করার সুযোগ থাকে এবং অনেক দূরের বস্তুও কাছে এনে দেখা যায়।