ঘড়ির কাঁটা যেন রকেট গতিতে ছুটছে। দেখতে দেখতে কেটে গেল আরো একটি ইংরেজি বছর। আরেকটি নতুন বছর তার আগমনী বার্তা নিয়ে পৌঁছে গেছে দোরগোড়ায়। আর নতুন বছরকে নিজেদের চিরাচরিত প্রথা নিয়ে স্বাগত জানাতে প্রতিবারের মতই প্রস্তুত বিশ্ববাসী।
নতুন আরেকটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনা মূলত ইংরেজি নববর্ষ নামে পরিচিত হলেও আজ এই নববর্ষ পাশ্চাত্য ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বের উৎসবের রীতি। আর তাই এই উৎসবটিকে ভিন্ন ভিন্ন দেশের মানুষরা আপন করে নিয়েছে নিজেদের নানা আচার-রীতি দিয়ে। চলুন জেনে নেয়া যাক এমনই কিছু রীতি সম্পর্কে-
ব্রাজিল: নববর্ষ উপলক্ষে ব্রাজিলে পূজা করা হয় সমুদ্রকে। সমুদ্রে সাতটি ডুব দিলে এবং সাতটি ফুল ছুড়ে দিলে বছরটি খুব ভালো কাটবে বলে তারা মনে করেন। আর খাবারের তালিকায় গৃহপালিত পশু-পাখির মাংসের বদলে রাখা হয় শূকরের মাংস।
জাপান: লোকাচার অনুযায়ী মন্দভাগ্য এড়াতে অনেকে বাড়ির সামনে টাঙিয়ে রাখে বিশেষভাবে তৈরি রশি। এ সময় বাড়ির বাইরে দড়ি দিয়ে খড়ের টুকরো ঝুলিয়ে দেয় তারা যাতে খারাপ আত্মা দূরে থাকে। এটাকে তারা সুখ এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখে।
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বছরের প্রতীক হচ্ছে ‘বেবি নিউ ইয়ার’। সাধারণত ছেলে শিশুদের ডায়াপার এবং সাহেবি টুপি পরিয়ে দাঁড় করিয়ে অথবা বসিয়ে ছবি তোলা হয়। তবে সদ্যজাত শিশুদেরকে এই সাজে সাজানো হয়না। পৌরাণিক মতে, প্রতি বছরই শিশুরা বেড়ে উঠে। বছর শেষে তার বয়স বাড়বে এবং নতুন বছরের নতুন শিশুদের এই দায়িত্ব সে বুঝিয়ে দেবে।
স্পেন: স্পেনে রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ১২টা করে আঙুর খেয়ে ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানায়। কারণ তারা মনে করে এই আঙুর তাদের সৌভাগ্যের প্রতীক।
বেলারুস: বেলারুসে ইংরেজি নববর্ষে সবাই নিজেদের মনের ইচ্ছা লিখে রাখে কোনো কাগজে। তারা বিশ্বাস করে যে সেই কাগজটি যদি ১ তারিখ দিবাগত রাতে ঘড়ির ১২টার কাঁটা ছোঁয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে পুড়িয়ে দিতে পারে তবে তা তাদের জন্য বয়ে আনবে সৌভাগ্য।
এস্তোনিয়া: এস্তোনিয়ান প্রথা অনুযায়ী সবাই নববর্ষে অন্তত সাত রকমের খাবার খেয়ে থাকে। কারণ তারা বিশ্বাস করে কেউ যদি নিউ ইয়ার্স ডে তে সাত থেকে বারো রকমের আহার গ্রহণ করে তাহলে আসছে বছরে তাদের জীবন খাবারের প্রাচুর্যে ভরপুর থাকবে।
হাঙ্গেরি: হাঙ্গেরিতে নববর্ষের দিন কুশপুত্তলিকা দাহ করে দুর্ভাগ্যকে ছুড়ে ফেলা হয়।এই কুশপুত্তলিকাকে ‘জ্যাক স্ট্র’ বলা হয়। যা আগের বছরে ঘটে যাওয়া সব দুর্ঘটনা এবং খারাপ কাজের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। বছরের শেষ দিন হাঙ্গেরিবাসী হাঁস, মুরগি বা কোন ধরনের পাখির মাংস খান না। কারণ তাদের মতে, এ দিন উড়তে পারে, এমন পাখির মাংস খেলে নতুন বছরে জীবন থেকে সকল সৌভাগ্য উড়ে যাবে।
ফিলিপাইন: ফিলিপাইনীয় নববর্ষের রীতিটি আবার খুবই আজব। নতুন বছরে সৌভাগ্য আর সমৃদ্ধি বয়ে আনার জন্য ফিলিপাইনবাসী নিউইয়ার শুরু করেই গোলাকার সব জিনিসের ছোঁয়া রেখে। অর্থাৎ পলকা ডটের ডিজাইনের কোনো পোষাক পরিধান করে হোক বা গোলাকার কোনো ফল খেয়ে হোক- বছরের প্রথম দিনে ফিলিপাইনরা সব কিছুতেই দেয় গোল আকারটির প্রাধাণ্য।
কোরিয়া: কোরিয়াতে নববর্ষ শুরুর সময় কেউ ঘুমায় না। এ সময় ঘুমালে নাকি চোখের ভ্রু সাদা হয়ে যায়! রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে টিভিতে ৩৩ বার ঘন্টা বাজানো হয়। কোরিয়ার ৩৩ বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এটি করা হয়।
ডেনমার্ক: ডেনমার্কবাসী সারা বছর তাদের পুরোনো থালা-বাসন জমিয়ে রাখে যাতে নিউ ইয়ারে তা পারিবারিক বন্ধুদের বাসার দোরগোড়ায় মারতে পারে। কারণ তারা বিশ্বাস করে এই ভাঙ্গা বাসনের স্তূপ যত বড় হবে বন্ধুর সংখ্যাও ততই বেশি থাকবে।
ভিয়েতনাম: ভিয়েতনামে নববর্ষকে সংক্ষেপে ‘টেট’ শব্দে অভিহিত করা হয়। ভিয়েতনামিদের বিশ্বাস, ঈশ্বর ঘরে ঘরে বাস করেন। নববর্ষে বেড়াতে যান স্বর্গে। সেখানে বসে মর্ত্যরে লোককী করছে, তা খতিয়ে দেখেন। বলা হয়, কার্প মাছের পিঠে চড়ে ঈশ্বর ভ্রমণেও বের হন। এ বিশ্বাসে অনেকে নদী বা পুকুরে কার্প মাছ ছাড়েন।
বলিভিয়া: বলিভিয়ায় নববর্ষে উজ্জ্বল হলুদ রঙের অন্তর্বাস পরার প্রথা প্রচলিত রয়েছে সৌভাগ্য বয়ে আনার জন্য।
স্কটল্যান্ড: স্কটল্যান্ডের নিউ ইয়ারের প্রথাটি বড়ই আজব। প্রথাটির নাম ‘দ্যা ফার্স্ট ফুটিং’। বছরের প্রথম দিনে প্রথম মেহমান হিসেবে বাড়িতে আমন্ত্রিত হয় কোনো লম্বা-কালো ব্যক্তি যাকে তাদের জন্য উপহার হিসেবে আনতে হয় কয়লা, কালো বান, লবণ, কেক আর হুইস্কি।
উদ্দেশ্য সেই একটাই- সৌভাগ্য বয়ে আনা। তবে মধ্যরাতের পর বাড়িতে পা দেয়া প্রথম মানুষটি অবশ্যই সোনালি বা লাল চুলওয়ালা এবং নারী হতে পারবে না। বলা হয়, এতে করে বাড়িতে দুর্ভাগ্য আসে।