ক্রিকেটকে অনেকে বলেন পরিসংখ্যানের খেলা। এত রকম হিসাব-নিকাশ আর গবেষণা বোধ হয় অন্য কোনো খেলা নিয়ে হয় না ! কে কবে কার সাথে জিতলো, কে কতো বলে কতো রান করেছিল, কতো বল পরপর উইকেট পড়েছিল, ব্যাটসম্যানদের রানরেট কতো, দলের রানরেট কতো, বোলারদের ইকোনমি রেট কতো… লিখে শেষ করা যাবে না !
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তথ্য বা ডাটা থাকলে করা যায় না এমন জিনিস নেই। ক্রিকেটেও তাই হয়েছে। ক্রিকেট ইতিহাসের অসংখ্য ম্যাচের তথ্য বিশ্লেষণ করে যে চমৎকার প্রুযুক্তি তৈরি করা হয়েছে, তার নাম ওয়াস্প (WASP)। উইনিং অ্যান্ড স্কোর প্রেডিক্টর।
এখন কার ম্যাচগুলোয় আমরা যত রকম ভবিষ্যদ্বাণী দেখি, প্রায় সবই ওয়াস্পের কৃতিত্ব। পিচের অবস্থা, আবহাওয়া, বাউন্ডারি কোন পাশে বড় কোন পাশে ছোট ইত্যাদি থেকে শুরু করে যে দুটি দলের খেলা হচ্ছে তাদের যাবতীয় অতীত রেকর্ড বিশ্লেষণ করতে পারে ওয়াস্প।
দলগত ভবিষ্যদ্বাণীর পাশাপাশি প্লেয়ারদের ব্যক্তিগত ভবিষ্যদ্বাণীও করতে পারে এটি। দলীয় রান কতো হতে পারে, পিচের ব্যাটসম্যানরা কতো রান করতে পারে, কতো রানের পার্টনারশিপ হতে পারে সবই বের করে WASP। বলা বাহুল্য, সবগুলো আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পাইনা।
নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যান্টারবেরির দুই গবেষক ড. স্কট ব্রুকার ও ড. সিমাস হোগ্যানের দীর্ঘ গবেষণার ফসল এই ওয়াস্প। কম্পিউটার বিজ্ঞানের অন্যতম জটিল শাখা ডায়নামিক প্রোগ্রামিক ব্যবহার করে তারা কয়েকটি সমীকরণ তৈরি করেছেন, যা ম্যাচের বিভিন্ন ফ্যাক্টর অনুমান করতে পারে। এমন একটি সমীকরণ:
V ( b, w ) দ্বারা বুঝানো হচ্ছে ইনিংসে ব্যাটসম্যান দল কত রান করতে পারে যেখানে b হচ্ছে কতটা বল হয়েছে ইনিংসে ও w হচ্ছে কতটি উইকেট পড়েছে। r( b ,w ) দ্বারা বুঝানো হচ্ছে যে রান রেটে ইনিংসে রান হচ্ছে তা অনুসারে ইনিংস শেষে কত রান হবে আর p( b,w ) দ্বারা বুঝানো হচ্ছে পরবর্তী বলে উইকেট পড়ার সম্ভাব্যতা কত ?
এই ডায়নামিক প্রোগ্রামিক মডেল দলের খেলোয়াড়দের গড়, স্ট্রাইক রেটও হিসাবে রাখে।
ম্যাচ চলার সময় আমরা নানা রকম মজার তথ্য দেখতে পাই। যেমন, সাকিব আল হাসান এত রানের বেশি করলে বাংলাদেশ সবসময় জেতে। ইংল্যান্ড হোম গ্রাউন্ডে এত রানের বেশি চেজ করে জেতেনি। এসব তথ্য চটজলদি পাওয়া যায় ওয়াস্প থেকে।
তবে কোন খেলোয়াড় যদি খেলায় রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে যায় তবে এই মডেলটি কাজ করে না। কেননা মডেলটি জানেনা এই রিটায়ার্ড হার্ট ব্যাটসম্যানটি কখন বা কোন পজিশনে নামবে আবার। আর যেহেতু মডেলটি অনুমান করে একটা স্কোর বলে থাকে তাই মাঝেমাঝে অনুমিত স্কোর ও Real স্কোর এর মধ্যে ব্যবধান অনেক হয়ে যায়। তাই, এই প্রুযুক্তি ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ব্যবহার করা হয়নি।