আমাদের এ পৃথিবীতে মূল্যবান অনেক পাথর আর খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। খনি থেকে পাওয়া পাথরের মধ্যে অনেকগুলোই অত্যন্ত দুর্লভ এবং বহু গুনাগুনে সমৃদ্ধ। এসব পাথর দেখতে যেমন অত্যন্ত সুন্দর তেমনি এদের বাজারদরও অনেক। হীরা, চুনি, পান্না, নীলা এরকম বহু মূল্যবান পাথর পৃথিবীর বুকে পাওয়া যায় যেগুলো মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষার বস্তু। এসব রত্ন পাথরের রয়েছে অনেক ইতিহাস, এদের গঠন উপাদান ও প্রকৃতি হয়ে থাকে বিভিন্ন, এদের সন্ধানও মেলে ভিন্ন জায়গায়, অনেক জায়গায় অনেক রত্নকে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান দেয়া হয়ে থাকে। মহামূল্যবান বিভিন্ন সব রত্নপাথরের এরকম অনেক তথ্য আমরা জানবো আমাদের এই আয়োজনে। আজকে জানবো চুনি বা মানিক নিয়ে।
প্রাচীন লোককথায় শোনা যেত, কোন এক নাগরাজ সাপের মাথায় অত্যন্ত মূল্যবান এক রত্ন রয়েছে। মানুষ ধারণা করতো, এই রত্ন হচ্ছে সাত রাজার ধনের চেয়ে মূল্যবান। সাত সমুদ্র তের নদী পার হলে এই রত্নের দেখা পাওয়া যায়।
বাস্তবে সাপের মাথায় যে রত্নকে কল্পনা করা হতো, তা হচ্ছে এক ধরণের মুল্যবান পাথর। এটি চুনি নামে বহুল পরিচিত, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় রুবি। রুবি শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ “রুবার” থেকে, যার অর্থ লাল। রুবি সাধারণত গোলাপি থেকে রক্ত লাল বর্ণের হয়ে থাকে। এজন্য একে লালমণিও বলা হয়। এছাড়াও রুবিকে বাংলায় মানিক, পদ্মরাগমণি, রক্তরাগ এসব নামেও ডাকা হয়ে থাকে। হীরা, পান্না এবং নীলকান্তমণির সাথে রুবিকেও পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান রত্নগুলোর মধ্যে গণ্য করা হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশের অধিবাসিরা বিশেষ করে হিন্দুরা রুবি কে মনে করতো সকল রত্নের রাজা হিসেবে। এ সম্পর্কে বাইবেল ও সংস্কৃত শাস্ত্রেও একই কথা পাওয়া যায়। এক সময় সূর্যের সাথে এই রত্নের বিশেষ সম্পর্কের কথা বিশ্বাস করা হতো এর আলোর বিচ্ছুরণ দেখে।
রুবি মূলত অ্যালুমিনিয়াম এবং ক্রোমিয়ামের সংমিশ্রণে গঠিত একধরনের যৌগ থেকে তৈরি হয়। Mohs scale of mineral hardness অনুযায়ী রুবির কাঠিন্য ৯ মাত্রার। কাঠিন্য এবং সহনশীলতার দিক থেকে হীরা এবং ময়সানাইটের পরই রুবির স্থান। ক্রোমিয়ামের আধিক্যের জন্য রুবির রঙ হয় লাল। রুবির অভ্যন্তরটা হীরার মতোই স্বচ্ছ। রুবির উপর সূর্যের আলো পড়লে তা প্রতিফলিত ও বিচ্ছুরিত হয়, যা সবার চোখ ধাঁদিয়ে দিতে স্বক্ষম। এজন্য আংটি এবং অলংকার হিসেবে রুবির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।
মায়ানমারের মগক উপত্যকা শতবর্ষ থেকে রুবির প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অঞ্চলকে বলা হতো রুবির স্বর্গ এবং অত্যন্ত খাঁটি ও মূল্যবান কিছু রুবি এখান থেকেই পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভাল মানের রুবি কবুতরের রক্তের মতো লাল হতে দেখা যায়। এই ধরণের রুবি কে বলা হয় “pigeon blood”। কিন্ত বিগত কয়েক বছর থেকে এই অঞ্চলে ভাল মানের রুবি পাওয়া যাচ্ছে না। মং সু নামক মায়ানমারের কেন্দ্রীয় এলাকায় ১৯৯০ সাল থেকে রুবি উত্তোলন শুরু হয়। কয়েক বছরের মধ্যে এই অঞ্চল রুবি উৎপাদনে শীর্ষ স্থান দখল করে নেয়।
এছাড়াও ঐতিহাসিকভাবে রুবি থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ার পাইলিন ও স্যামলউত ডিস্ট্রিক, ইন্ডিয়া, আফগানিস্থান, পাকিস্থান, অস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, কলম্বিয়াকে রুবির উৎসমূল হিসেবে ধরা হয়। শ্রীলংকায় সাধারণত গোলাপি বর্ণের রুবি বেশি পাওয়া যায়।
খনি থেকে প্রাপ্ত রুবিকে কিভাবে কেটে সুন্দর করা সেটা দেখতে এখানে ক্লিক করুন।