হ্যান্ডবল একটি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ দলগত খেলা। অনেকে বলে থাকে ফুটবল ও বাস্কেটবলের সমন্বিত রূপই হচ্ছে হ্যান্ডবল খেলা। ১৯০৬ সালে ডেনমার্কের জনৈক ক্রীড়াশিক্ষক হোলজার নিয়েলসেন প্রথম হ্যান্ডবল খেলার নিয়মনীতি আবিষ্কার করেন। ১৯১৭ সালে জার্মানির ম্যাক্স হিসার, কার্ল শিলেঞ্জ ও এরিক কনিগ হ্যান্ডবল খেলার আধুনিক নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা করেন। একসময় উত্তর এবং পূর্ব ইউরোপে প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে সারাবিশ্বে এ খেলা জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বর্তমানে হ্যান্ডবলের গভর্নিং বডি ইন্টারন্যাশনাল হ্যান্ডবল ফেডারেশন হচ্ছে ( International Handball Federation)। অলিম্পিক হ্যান্ডবল ছাড়াও হ্যান্ডবল খেলার বড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে পুরুষ ও মহিলাদের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ। অলিম্পিকে প্রথম হ্যান্ডবল শুরু হয় ১৯৩৬ সালে জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক থেকে। মেয়েদের অংশগ্রহণ শুরু হয় ১৯৭৬ সালের কানাডায় অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক থেকে। ঐতিহ্যগতভাবে হ্যান্ডবল ইনডোর গেম হলেও বর্তমানে আউটডোরে বীচ হ্যান্ডবল, আউটডোর বা ফিল্ড হ্যান্ডবলও খেলা হয়ে থাকে।
হাতে ড্রিবল, পাস আর বল শুটের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়ে স্কোর করার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে হ্যান্ডবলের খেলোয়াড়রা। দুই দলের এই খেলায় প্রতিটি দলে খেলোয়াড় থাকে সাতজন যার একজন গোলরক্ষক। দুইজন রেফারি সম্পূর্ণ খেলা নিয়ন্ত্রণ করে। হ্যান্ডবল খেলার পূর্ণ মাঠের দৈর্ঘ্য বা পার্শ্বরেখা ৪০ মিটার এবং প্রস্থ বা প্রান্তরেখা ২০ মিটার। মাঠের উভয় প্রান্তে গোল লাইনের ঠিক মাঝখানে গোল পোস্টটির অবস্থান। প্রতিটি গোলপোস্ট লম্বায় ৩ মিটার এবং উচ্চতায় ২ মিটার হয়। পোস্টের ৬মিটার এলাকায় থাকে গোল লাইন যার বাইরে থেকেই জালে বল ছুঁড়তে হয় আর গোললাইনের ভিতরে থেকে গোলরক্ষক গোল বাঁচানোর চেষ্টায় থাকেন। গোল দেওয়ার সময় খেলোয়াড়রা লাফ দিয়ে বল ছুঁড়ে থাকেন।
নিয়ম অনুযায়ী হ্যান্ডবলের সাইজ পুরুষ-মহিলা ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। পুরুষের জন্য বলের পরিধি ৫৮-৬০ সেন্টিমিটার আর মহিলাদের জন্য ৫৪-৫৬ সেন্টিমিটার। খেলার সময়সীমা মাঝখানে ১০ মিনিট বিরতিসহ মোট ৭০ মিনিট। খেলা শেষে যে দলের স্কোর বেশি থাকে সে দল বিজয়ী হয়ে থাকে।
একজন খেলোয়াড় হ্যান্ডবল খেলায় বল ধরতে, থামাতে বা ছুঁড়ে দিতে বাহু, মাথা, পৃষ্ঠদেশ, উরু বা হাঁটু ব্যবহার করেন, তবে তিনি সর্বোচ্চ তিন সেকেন্ড পর্যন্ত বলটি হাতে অথবা মাটিতে ধরে রাখতে পারেন। বলটি ক্রসবারের নিচে গোল-পোস্টদ্বয়ের মধ্যকার দাগটি সম্পূর্ণভাবে অতিক্রম করলে একটি গোল হয়। বল নিয়ে একজন খেলোয়াড় যেমন তিন সেকেন্ডের জন্য দাঁড়াতে পারে তেমনি বল নিয়ে তিন পা এর বেশি অগ্রসর হতে পারে না। এই অবস্থায় ড্রিবল বা পাস করা আবশ্যক। যদি খেলোয়াড়টি না করে তবে ট্রাভেলিং ভায়োলেশন হবে। দাঁড়ানোর পরে আবার ড্রিবলিং করলে ডাবল ড্রিবলিং ভায়োলেশন হবে। এছাড়া, প্রতিপক্ষকে ধাক্কা, পিছন থেকে আঘাত ইত্যাদি আচরণের জন্য ফ্রী থ্রোর বিধান রয়েছে। এছাড়া, ফুটবলের মত হ্যান্ডবলেও রয়েছে হলুদ এবং লাল কার্ড দেখানোর বিধান রয়েছে। ফুটবলের পেনাল্টি কিকের মতো হ্যান্ডবলে রয়েছে সেভেন মিটার থ্রো।
অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও হ্যান্ডবল খেলার প্রচলন রয়েছে। ২০১৬ সালে ভারতের গৌহাটি ও শিলং এ অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসের হ্যান্ডবল ডিসিপ্লিনে মহিলা হ্যান্ডবল দল রৌপ্য ও পুরুষ হ্যান্ডবল দল ব্রোঞ্জ জেতার গৌরব অর্জন করে।