বৈচিত্র্যময় কিছু জনগোষ্ঠীর কথাঃ মাসাই

আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো মাসাই জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে।

মাসাই জাতিগোষ্ঠী হচ্ছে আফ্রিকায় বসবাসকারী এক আধা-যাযাবর যোদ্ধা জাতি। এরা মূলত কেনিয়ার দক্ষিনাঞ্চল ও তানজানিয়ার উত্তরাঞ্চলের এলাকাজুড়ে বহু বছর ধরে বসবাস করে আসছে। আফ্রিকান গ্রেট লেক অঞ্চলে বাস করা জাতিগোষ্ঠীদের মধ্যে মাসাইরা বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে তাদের বৈচিত্রময় রীতি ও পোশাকের জন্য।

মাসাইরা কথা বলে ‘মা’ ভাষায় যেটি নিলো-সাহারা ভাষা পরিবারের একটি সদস্য। তবে তারা কেনিয়া ও তানজানিয়ার দাপ্তরিক ভাষা সোয়াহিলি ও ইংরেজিও শিখে নেয়। ২০০৯ সালের জরীপ অনুযায়ী মাসাই জাতিগোষ্ঠীর মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ লাখ, যা ১৯৮৯ সালের জরীপে ছিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার। মাসাইদের মধ্যেও মোট ১৬টি গোত্র রয়েছে।

মাসাইরা ক্রালে বসবাস করে যা কাদামাটি, লাঠি, ঘাস আর গোবর দিয়ে নির্মাণ করা হয়। সিংহের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য ক্রালের চারিদিকে কাঁটাযুক্ত বেড়া দেয়া হয়। সাধারণত নারীরা ক্রাল তৈরি করে এবং বেড়া তৈরির দায়িত্বে থাকে পুরুষরা। অন্যদিকে বাড়ির ছেলেরা গবাদি পশুপালনের দায়িত্ব পালন করে। ঘর তৈরির পাশাপাশি নারীরা পানি সংগ্রহ, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ, দুধ সংগ্রহ ও রান্নাবান্নার কাজ করে থাকে।

মাসাইদের অর্থনীতি তাদের গবাদি পশুর উপর নির্ভরশীল। গরু, ছাগল ও ভেড়ার বিনিময়ে এরা পোশাক, পাথর ও খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে। এমনকি বাচ্চাদের স্কুলের পোশাক ও বেতনও পরিশোধ করা হয় গবাদি পশুর বিনিময়ে।

মাসাইরা সাধারণত খাবারের জন্য মাংস, দুধ ও পশুর রক্তের উপর নির্ভরশীল। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও মাসাইরা প্রোটিন ও ক্যালোরির উৎস হিসেবে প্রচুর পশুর রক্ত পান করে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, অসুস্থ ব্যক্তি ও বয়স্কদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য রক্ত পান করানো হয়ে থাকে।

মাসাইরা মূলত যোদ্ধা জাতি। যুদ্ধবিদ্যায় এরা বিশেষ পারদর্শী। তবে নাচ আর গানেও এদের জুড়ি নেই। বিশেষ করে মাসাই নারীরা কোথাও মিলিত হলে একসাথে নেচে ও গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করে।

অলংকার ব্যবহার করা মাসাইদের আরেকটি বিশেষত্ব। এরা কানের লতিতে ছিদ্র করে এবং সেটা বড় করে পাথর, হাতির দাঁত ও বিভিন্ন রকম অলংকার পরিধান করে।

কেনিয়া ও তানজানিয়ার সরকার অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছে মাসাইদের এই যাযাবর ও বর্বর জীবনযাত্রা থেকে বেড়িয়ে এসে আধুনিক জীবনযাপন করতে। কিন্তু মাসাইরা তাদের আদি রীতি অনুযায়ীই চলছে। সম্প্রতি অক্সফাম বলছে মাসাইদের তাদের নিজস্ব রীতিতেই বসবাস করতে দেয়া উচিত। কেননা মরুভূমিতে তাদের বসবাস ও চাষাবাদ জলবায়ু পরিবর্তনকে রোধ করে। মাসাইদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রা দেখার জন্য তাদের গ্রামে পর্যটক গেলে তারা সাদর অভ্যর্থনা জানায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন