আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো মঙ্গোল জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে।
মঙ্গোল জাতিগোষ্ঠী হচ্ছে পূর্ব-মধ্য এশিয়ার একটি প্রাচীন জনগোষ্ঠী। এরা মঙ্গোলিয়ার আদি অধিবাসী । এছাড়াও চীনের জিনজিয়াংসহ কিছু অঞ্চলে এবং রাশিয়ায়ও অনেক মঙ্গোল বাস করে।
মঙ্গোলদের কিছু অভিন্ন আদি বৈশিষ্ট্য এবং ঐতিহ্য রয়েছে যা এদেরকে সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে। এরা মঙ্গোলিয়ান ভাষায় কথা বলে। বর্তমান সময়কার মঙ্গোলদের পূর্বপুরুষদের বলা হয় ‘প্রোটো-মঙ্গোল’।
পূর্বে অনেকগুলো জাতিগোষ্ঠী একত্রিত হয়ে মঙ্গোল জাতিগোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে। যদিও ৮ম শতকে মঙ্গোলদের প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় কিন্তু ১১শ শতকে এদের মূল উদ্ভব ঘটে। তবে মঙ্গোলিয়ান ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর প্রকৃত উত্থান এবং বিস্তার ঘটে ১৩শ শতকে চেঙ্গিস খানের অধীনে। তার কর্তৃত্বেই সকল মঙ্গোলিয়ান ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর একত্রিত হয় এবং এক বিশাল শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। চেঙ্গিস খানের দক্ষতায় এই বাহিনী এশিয়ার পূর্ব ও মধ্য অঞ্চলের এক বিশাল এলাকা দখল করে এবং মঙ্গোল সাম্রাজ্য গড়ে তোলে।
বর্তমানে মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রীয় ভাষা মঙ্গোলিয়ান এবং সেখানকার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এই ভাষা ব্যবহার করে। চীনের ‘ইনার মঙ্গোলিয়ান অটোনোমাস রিজিওন’ এর ৪০ লাখের বেশি মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। এছাড়া সমগ্র চীন জুড়ে এই ভাষা ব্যবহার করে প্রায় ৬০ লাখ আদিবাসী মঙ্গোল।
মঙ্গোলদের আদি ধর্ম ছিল ‘শামানিজম’। তবে ধীরে ধীরে তারা কনফুসিয়াজম এবং দাওইজম বিশ্বাসের সংস্পর্শে আসে এবং পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে। বর্তমান মঙ্গোলদের অধিকাংশই বৌদ্ধ। তবে এখনো তাদের মধ্যে অনেকেই আদি ধর্মে বিশ্বাস করে এবং অল্প সংখ্যক মঙ্গোল আছে যারা ইসলাম ও খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী। তবে চেঙ্গিস খান ঠিক কোন ধর্মে বিশ্বাস করতেন তা জানা যায়নি। তবে যেকোনো যুদ্ধের আগে তিনি পর্বতে গিয়ে ধ্যান ও প্রার্থনা করতেন ও উপোষ থাকতেন।
মঙ্গোলরা যুদ্ধবিদ্যায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিল। সেই সাথে তাদের সেনাপতি চেঙ্গিস খান ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম দক্ষ ও সাহসী সেনাপতি। তার নেতৃত্বে এই সেনাবাহিনী অল্প সময়েই বিশাল অঞ্চল জয় করতে সক্ষম হয়। মঙ্গোলরা শত্রুদের হারানোর পর তাদের যুদ্ধাস্ত্র ও রণকৌশল নিয়ে গবেষণা করতো এবং প্রয়োজনে সেগুলো ব্যবহার করে নিজেদের যুদ্ধবিদ্যাকে আরও উন্নত করে তুলত।
বর্তমানে সাড়া বিশ্বে মঙ্গোলদের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৯০ লাখের মতো। এদের অধিকাংশই বাস করে আধুনিক মঙ্গোলিয়া রাষ্ট্রে এবং বাকিরা বসবাস করে চীন, রাশিয়া, কিরগিস্তান এবং আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে। বর্তমানে মঙ্গোলরা অনেক ছোট ছোট উপগোত্রে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে আসবাসস্থল গড়ে তুলছে। কিছু মঙ্গোল অভিবাসন করে ইউরোপ, আমেরিকা, কোরিয়া, চেক রিপাবলিকসহ আরও বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে।