আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো অ্যাজটেক জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে।
অ্যাজটেক হচ্ছে মধ্য মেক্সিকোতে বসবাসকারী এক আদি জনগোষ্ঠী যারা নাহুয়াতিল ভাষায় কথা বলতো। ১৪শ থেকে ১৬শ শতক পর্যন্ত এরা মেসোআমেরিকার বিরাট একটি অংশে রাজত্ব করতো।
‘অ্যাজটেক’ বলতে তাদের রাজধানী টেনোচতিতলান’এর বাসিন্দাদের বুঝানো হতো যেখানে বর্তমান মেক্সিকো সিটি গড়ে উঠেছে। ১৩শ শতকে এদের উদ্ভব হলেও ১৫শ শতকের মধ্যেই এরা এই শহরকে কেন্দ্র করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিভিন্ন সংস্থা গড়ে তোলে যার ফলে আশেপাশে অনেক নগরকে তারা আয়ত্বে আনতে সক্ষম হয়।
ঠিক কীভাবে অ্যাজটেক জাতির উদ্ভব হয়েছিল সেটা অনিশ্চিত। তবে ধারণা করা হয়, আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি শিকারি গোত্র একত্রিত হয়ে এই অঞ্চলে আসে যাদের আদিভূমি ছিল ‘আজলাতান’ বা ‘হোয়াইট ল্যান্ড’। তাদের আগমনের পর তৎকালীন রাজত্বকারী মেসোআমেরিকান জাতি টোলটেকসদের পতন ঘটে।
১৩২৫ সালের দিকে লেক টেক্সকোকোর দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অ্যাজটেকরা তাদের নতুন শহর টেনোচতিতলানের গোড়াপত্তন করে। অ্যাজটেকরা কৃষিকাজে বেশ দক্ষ ছিল। তারা এখানে ভুট্টা, শিম, টমেটো, আলু, অ্যাভোকাডো এসবের চাষ শুরু করে। মাছ ও বিভিন্ন প্রাণীও শিকার করতো তারা। সামরিক দিক থেকেও খুব দক্ষ ছিল এই অ্যাজটেক জাতিগোষ্ঠী। একারণেই অল্প সময়ে তারা বিশাল অ্যাজটেক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
মেধা, শিল্প আর সমাজ গঠনের দিক থেকে অ্যাজটেক জাতিগোষ্ঠী অনেক উন্নত ছিল। এদের সমাজে গোত্রবিভেদ বেশ কড়া ছিল। জ্ঞানীরা ছিল সবচেয়ে উঁচু এবং চাকর ও দাসরা ছিল সবচেয়ে নিচু জাতি। অ্যাজটেকদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল বহুমাত্রিক এবং এদের দেবতা ছিল অনেক। দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য এরা মানুষ বলিতে বিশ্বাস করতো। অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের শহরগুলোতে প্রচুর মন্দির, মূর্তি আর প্রাসাদ পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে আছে Huitzilopochtli (যুদ্ধ ও সূর্যের দেবতা) এবং Quetzalcoatl (পাখাওয়ালা সাপ) নামের একটি টলটেক দেবতা যাকে অ্যাজটেকরা বহুবছর ধরে বিশ্বাস করতো। অ্যাজটেকদের পঞ্জিকায় ৩৬৫ দিনে এক বছর হতো।
ফ্রান্সিসকো হার্নান্দেজ দে কোরদোবা প্রথম ইউরোপিয়ান যিনি মেক্সিকান অঞ্চলে পা রাখেন। তিনি স্পেনে ফিরে গিয়ে এই অঞ্চলের কথা জানালে হার্নান কর্টেসের নেতৃত্বে বিশাল এক সামরিক বাহিনী পাঠানো হয়। কিছু বিদ্রোহী আদিবাসীদের সাহায্য নিয়ে কর্টেস ১৫১৯ সালের নভেম্বরে টেনোচতিতলানে আক্রমণ করে। অ্যাজটেকরা সংখ্যায় বেশি থাকলেও অস্ত্রের দিন থেকে ইউরোপিয়ানরা ছিল অনেক উন্নত। ফলে অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। রাজা মন্টেজুমাসহ প্রায় আড়াই লাখ অ্যাজটেককে হত্যা কড়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। কর্টেস টেনোচতিতলান শহর সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করে দেয় এবং তার উপর নতুন শহর গড়ে তোলে। এভাবেই সমাপ্ত হয় অ্যাজটেক জাতিগোষ্ঠীর।