সম্প্রতি থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের কর্তৃপক্ষ তাদের দুটি স্থানকে পর্যটনের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে সেখানে সাময়িকভাবে পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখার কথা ভাবছেন তারা। প্রথমটি থাইল্যান্ডের মায়া বে, যে স্থানটি অন্তত ২০০০ সিনেমায় ঠাই পেয়েছে। দ্বিতীয়টি ফিলিপাইনের বোরাকেয় দ্বীপ।
শুধু এই দুটি জায়গায় নয়। বিভিন্ন ইউরোপিয়ান শহর যেমন ভেনিস, দুব্রোভনিকও পর্যটকে পরিপূর্ণ বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে বার্সেলোনা ও রুয়ান্ডাতে নিজেদের সম্পদ রক্ষা করতে পর্যটকদের জন্য আবাসন খরচ বাড়ানো হয়েছে।
চলুন দেখে নিই বিশ্বের জনপ্রিয় ৫ পর্যটন স্থান, যেখানে নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে ও নানা উপায় খুঁজছে।
থাইল্যান্ড : মায়া বে
গত মার্চে থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ দেশটির বিখ্যাত মায়া বে পর্যটকের জন্য বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে ঘোষণা দেয়। জায়গাটিতে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর শ্যুটিং প্রকাশের পর থেকে পর্যটকদের ভিড় শুরু হয়। বর্তমানে সেখানে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার দর্শনার্থী ভিড় করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মায়া বে’র ৭৭ শতাংশ প্রবাল মারাত্বক ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই আগামী জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থানটি পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
ইটালি : চিনকিউ টেরি
আঁকা ছবির মতো দেখতে ইতালির শহরটি চিনকিউ টেরি নামে পরিচিত। সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার অধিবাসী আছে। ১৯৯৯ সালে জাতীয় উদ্যান করা হলে সেখানে পর্যটকদের ভিড় শুরু হয়। বর্তমানে প্রতিবছর ২০ লাখের অধিক পর্যটক সেখানে হাজির হয়।
পর্যটকদের সংখ্যা সীমিত করতে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছিলো, তবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে উদ্যান কর্তৃপক্ষ একটি অ্যাপ তৈরি করে যার মাধ্যমে সেখানে কী পরিমান পর্যটক রয়েছে তা দেখা যায়। যখন লাল সংকেত দেখায় তখন বুঝতে হবে সেখানে অতিরিক্ত পর্যটক রয়েছে। এই পর্যটকরা সেই চাপের মধ্যেও যাবে কিনা সেটি তাদের বিষয়। আগামীতে ভার্চুয়াল ওয়েটিং লিস্ট চালু করবে কর্তৃপক্ষ।
পেরু : মাচু পিচু
মাচু পিচু কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের আগের সময়কার একটি ইনকা শহর, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ২৪০০ মিটার। এটি পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকার ওপরে একটি পর্বতচূড়ায় অবস্থিত। মাচু পিচুই সম্ভবতঃ ইনকা সভ্যতার সবচেয়ে পরিচিত নিদর্শণ, যাকে প্রায়শঃ ইনকাদের হারানো শহর বলা হয়।
অতিরিক্ত পর্যটক ও অপারেটরদের কারণে সেখানকার ভারসাম্য নষ্ট হতে চলেছে। প্রতি ফেব্রুয়ারিতে স্থান পরিচ্ছন্ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য বন্ধ থাকে। ২০০৫ সালে দেশটির সরকার সীমিত সংখ্যাক পর্যটকদের সেখানে ভ্রমণের সুযোগ দেয়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গতবছর পর্যটক সংখ্যা কিছুটা কমাতে সকালে ও বিকেলে ভ্রমণের জন্য টিকেট প্রদানের সিস্টেম চালু করা হয়। ইউনেস্কো থেকে সেখানে প্রতিদিন সর্বোচ্চ আড়াই হাজার দর্শনার্থীকে ভ্রমণের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া : জেজু দ্বীপ
আপনি কি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম ফ্লাইট রুট ধারণা করতে পারেন? গতবছর এটি ছিলো দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল ও জেজু দ্বীপ অভ্যান্তরীণ ফ্লাইট রুট। ২০১৭ সালে এই দুটি বিমানবন্দরের মধ্যে ৬৫ হাজার ফ্লাইট পরিচালিত হয় অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ১৮০টি।
দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলের কাছে অনেকগুলো দ্বীপ আছে। এরমধ্যে জেজু একটি। ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে এই আগ্নেয় দ্বীপের নাম। সেখানে গেলে ‘হেনিয়ো’দের দেখা মিলবে। তারা হচ্ছেন নারী ডাইভার। কোনও যন্ত্রের সহায়তা ছাড়াই হেনিয়োরা সাগরতল থেকে শামুক, সাগরের শজারু, শেলফিশ সংগ্রহ করেন। মধুচন্দ্রিমার জন্য জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়। প্রতিবছর দ্বীপটিতে ১৫ মিলিয়ন পর্যটক ভ্রমণ করেন।
পর্যটকদের চাপে জনপ্রিয় এই স্থানটির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে। এছাড়া সেখানে ময়লা ও যানজট বেড়েছে। সেখানে অনেক সমুদ্র ভ্রমণকারী আসেন ও কয়েক ঘন্টা অবস্থান করেন, যা দেশের অর্থনীতিতে কোনও প্রভাব ফেলে না।
কলম্বিয়া : ক্যানো ক্রিস্টাল রিভার
কলম্বিয়ায় অবস্থিত এই ক্যানো ক্রিস্টাল রিভার-এ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাস হওয়ায় নদীটিতে হলুদ, সবুজ, নীল, কালো, লাল- সব ধরণের রঙই দেখা যায়। পাথরগুলি ১.২ বিলিয়ন বছরের পুরোনো বলে ধারণা করা হয়। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘তরল রঙধনু’ হিসেবেও পরিচিত। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দর্শকের ভিড় লেগেই থাকে এই স্থানটিতে। তবে অতিরিক্ত পর্যটক ও ফটোগ্রাফির কারণে সেখানকার ইকোসিস্টেমে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এবং মূল্যবান জলজ উদ্ভিদ মারা যাচ্ছে।
ইতিমধ্যেই সেখানে কিছু জিনিষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেমন- প্লাস্টিক বোতল, সানস্ক্রিণ অথবা পোকা তাড়ানোর ঔষধ, সিগারেট না আনা, কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় সাতার না কাটা, মাছকে খেতে না দেয়া ইত্যাদি। পর্যটকরা সেখানে উপস্থিত হলে এগুলো পরিস্কারভাবে বোঝানো হয়।
গত ডিসেম্বরে নদীটিকে পর্যটকদের হাত থেকে বিরতি দিতে সাময়িকভাবে পর্যটক নিষিদ্ধ করা হয়।