স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা কিংবা বিপর্যয়ের কথা আসলে যেটি সামনে আসে সেটি হলো চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনা। ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিলে সংঘটিত এই দুর্ঘটনায় ২৩৭ জন মানুষ পারমাণবিক বিকিরণের ফলে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং প্রথম তিন মাসে অন্তত ৩১ জন মারা যান।
নিরাপদ শীতলীকরণ নিয়ে একটি পরীক্ষা চলার সময় একটি পারমাণবিক চুল্লি থেকে এ দুর্ঘটনার সূত্রপাত। রাতের শিফটে কর্মীরা ভুল করে পারমাণবিক চুল্লিটির টার্বাইনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শীতল পানি প্রবাহিত করেন। ফলে সেখানে বাষ্প উৎপাদন কমে যায়। এতে চুল্লিটি উত্তপ্ত হতে থাকে এবং একপর্যায়ে প্রচণ্ড রকমের বিস্ফোরণ ঘটে।
বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুন ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। সেইসঙ্গে ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় ফেলা অ্যাটম বোমার চেয়েও ৫০০ গুণ পারমাণবিক দূষণ ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশে।
সরকারি তথ্যমতে, দুর্ঘটনার কারণে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন এবং এর মধ্যে ছিলো ছয় লাখ শিশু। এ দুর্ঘটনার ফলে ২০০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়।
বর্তমানে চেরনোবিল শহরটি পরিত্যক্ত এবং এর প্রায় ৫০ মাইল এলাকাজুড়ে বলতে গেলে কেউ বাস করে না। তবে বর্তমানে শহরটি পর্যটকদের অন্যতম আর্কষণের জায়গা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সম্প্রতি এইচবিও’র ড্রামা মিনিসিরিজ ‘চেরনোবিল’ এর সুবাদে জায়গাটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইনস্টাগ্রামে বর্তমানে সবচেয়ে ‘হট স্পট’ এই চেরনোবিল।
ইনস্টাগ্রামে প্রিপায়াত, ইউক্রেন এর আশেপাশের ছবি সার্চ দিলেই একই ধরণের হাজারো ছবি দেখা যাচ্ছে। এগুলো অধিকাংশই চেরনোবিল প্লান্টের। এমনকি মডেল শটও পাওয়া যাচ্ছে।
একটি ভ্রমণ কোম্পানি রয়টার্সকে জানিয়েছে, গত মে মাসে চেরনোবিল মিনিসিরিজের পর থেকে চেরনোবিলে ভ্রমণের হার ৪০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যান্য কোম্পানিদের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে বলে জানা গেছে।
৩৩ বছর আগের এই দুর্ঘটনা কবলিত স্থানটি বর্তমানে ভ্রমণকারীদের জন্য নিরাপদ বলে জানানো হয়েছে।