শিশু-কিশোরদের নিরাপদ ইন্টারনেট সম্পর্কিত সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী চলছে ‘বি স্মার্ট, ইউজ হার্ট’ শীর্ষক কর্মসূচি। গ্রামীণফোন, টেলিনর গ্রুপ ও ইউনিসেফ আয়োজিত এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে চ্যাম্পস টোয়েন্টিওয়ান ডটকম। বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
রাজধানীর বসুন্ধরায় জিপি হাউজে আয়োজিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ফোলি, ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেইগবেডার, টেলিনর গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড চাইল্ড অনলাইন সেফটি স্পেশালিস্ট ওলা য়ো তান্দ্রে, গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও ইয়াসির আজমান, গ্রামীণফোনের সিসিএও মাহমুদ হোসেন, চ্যাম্পস টোয়েন্টিওয়ান ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল টি আহমেদ প্রমুখ।
১১ থেকে ১৬ বছরের ৪০০,০০০ শিশু কিশোর এবং ৫০,০০০ অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ কীভাবে তৈরি করতে হয় সে সম্পর্কে অবহিত করতে এই উদ্যোগটি হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও, চাইল্ড হেল্পলাইন হটলাইন (১০৯৮) এ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে ‘চাইল্ড অনলাইন সেফটি ইস্যুস’ যেখানে কল করে কিশোর-তরুণরা এ সম্পর্কিত উপদেশ ও পরামর্শসহ অন্যান্য সহায়তা পাবে।
ইতিমধ্যে দেশের ৭২টি স্কুলে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ইন্টারনেটকে কীভাবে পড়ালেখা, যোগাযোগসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী করা উচিত ও কী করা উচিত নয়, কীভাবে নিজের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখা যায়, সাইবার বুলিং থেকে রক্ষা ও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে কী করণীয় এসব বিষয়ে বিষদভাবে আলোচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের করণীয় ও বর্জণীয় বিষয় নিয়ে আলাদা লিফলেটও বিতরণ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ স্বাক্ষরতার লক্ষ্য নিয়েছি। একইসাথে আমরা শিশুদের ইন্টারনেট জগৎকে নিরাপদ করতে চাই। সেক্ষেত্রে এই উদ্যোগ বহুলাংশে ভূমিকা রাখবে। আমরা নিরাপদ থাকলে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে। শুধু নিজে নিরাপদ থাকা নয়, অন্যকেও নিরাপদ রাখা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের তারুণ্যনির্ভর জাতিকে প্রযুক্তির যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে তারা বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, আমরা বাহ্যিক রূপ দেখে অজান্তে খারাপকে গ্রহণ করি। এক্ষেত্রে আমাদের বিবেককে কাজে লাগাতে হবে। আমরা যতোই কাউকে বিশ্বাস করে নিজের সিন্ধুকের চাবি দিয়ে দিই না কেনো সে টাকা দেখতে পেলে আর ঠিক থাকতে পারবে না। ঠিক তেমনই যতোই বিশ্বস্ত হোক অন্য কারো সাথে আমাদের পাসওয়ার্ড শেয়ার করা উচিত নয়। শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপদ রাখা আমাদের দায়িত্ব, সরকারের দায়িত্ব।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ফোলি বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের তরুণ গ্রাহকদের জন্য সুরক্ষিত ডিজিটাল অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব। ইন্টারনেট হলো জ্ঞান অর্জন, যোগাযোগ এবং বিনোদনের মূল উৎস এবং সবারই এক্ষেত্রে সুরক্ষিত থাকার অধিকার আছে। আমরা এই চাইল্ড অনলাইন সেফটি উদ্যোগটি নিয়ে আরো সূদুরপ্রসারী পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেন আমাদের সন্তানেরা ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল সেবার সর্বোচ্চ সুবিধা পায়।’
‘ডিজিটাল সেবার সুবিধা লাভ এবং অনলাইনে সুরক্ষিত থাকার অধিকার রয়েছে প্রত্যেক শিশুর। টেলিনর গ্রুপ বিশ্বাস করে একটি সহায়ক পরিবেশ ডিজিটাল ঝুঁকি হ্রাস এবং শিশুদের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। আর এজন্যই গ্রামীণফোনের এই উদ্যোগের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য আমরা বিনিয়োগ করছি,’ বলেন টেলিনর গ্রুপের হেড অব সাসটেইনাবিলিটি মাই ওল্ডগার্ড।
[aigpl-gallery-slider id=”9082″]
‘ইন্টারনেট একে অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও শিক্ষা লাভের এক অনন্য মাধ্যম। এর মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ এবং তথ্য সংগ্রহের সুযোগ অপরিসীম। আমরা আশাবাদী যে, গ্রামীণফোনের সাথে আমাদের এই সহযোগিতা ডিজিটাল পরিসীমায় সকলের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সকল বয়স ভেদে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়া উচিৎ’, বলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার।
চ্যাম্পস টোয়েন্টিওয়ান ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল টি আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১.১ শতাংশ হলো স্কুলগামী শিক্ষার্থী। এর পিছনের কারণ হলো ইন্টারনেটের মাত্র ১০ শতাংশ খারাপ দিক। মূলত শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে অজানা আতঙ্কের কারণে শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ছে না। সেই বিষয়কে বিবেচনা করে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির এই উদ্যোগের জন্য টেলিনর, গ্রামীণফোন ও ইউনিসেফকে ধন্যবাদ জানাই। ২০১০ সাল থেকে শিশুদের জন্য আমরা কাজ করছি। তারই ধারাবাহিকতায় এই আয়োজনের বাস্তবায়ন আমাদের জন্য শুধু দায়িত্ব পালন নয়; নিজেদের ভালোবাসা থেকে করছি।